ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

পার্থকে জেরা: কেঁচো খুঁড়তে বের হচ্ছে সাপ

ভাস্কর সরদার,সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২২
পার্থকে জেরা: কেঁচো খুঁড়তে বের হচ্ছে সাপ অভিনেত্রী অর্পিতার সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত): শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তে নেমে পশ্চিমবঙ্গের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তার ঘনিষ্ঠ অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছে ভারতের আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা (ইডি)। পার্থ-অর্পিতাকে গ্রেফতারের পর থেকেই আর্থিক লেনদেন এবং সম্পত্তি সংক্রান্ত একাধিক অনিয়মের খোঁজ পাচ্ছে তারা।

তদন্তে প্রতিদিন উঠে আসছে নতুন নতুন তথ্য। এক কথায় কেঁচো খুঁড়তে বের হচ্ছে সাপ! শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির পর এবার জমি নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। পাশাপাশি এক গার্মেন্ট ব্যবসায়ির সঙ্গে যোগসূত্র পেয়েছে ইডি। আর সেই দুর্নীতির শিকড় নাকি ছড়িয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিল্পদফতরে।

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে বহু বন্ধ কলকারখানা বা জলাজমি হস্তান্তর হয়েছে রিয়েল এস্টেট সংস্থার হাতে। বদল করা হয়েছে সেগুলির চরিত্র। এমনই দাবি ইডির। অভিনেত্রী অর্পিতার  ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার কোটি কোটি রুপির উৎসর সন্ধানে নেমে তদন্তকারীরা এই জমি কেলেঙ্কারির খোঁজ পেয়েছেন। জমি বিক্রির অঙ্কটা কত- সেটাই এখন জানার চেষ্টা করছেন তারা।
 
গত ২২ জুলাই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি তল্লাশির সময় একাধিক জমির নথি পায় ইডি। দেখা যায়, এরমধ্যে কয়েকটি জমিতে আগে কল-কারখানা ছিল। কিন্তু পরে সেগুলির চরিত্র বদলে বিশাল আবাসনে পরিণত হয়েছে। তদন্তে জানা যায়, এই ঘটনার সময় রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তদন্তকারীদের হাতে আসা তথ্য অনুযায়ী, পরিকল্পিতভাবে এসব কাজ করা হয়েছে।

রাজ্যের দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, দুর্গাপুর, আসানসোলের মতো জেলাগুলোর বন্ধ কল-কারখানা প্রথমে চিহ্নিত করা হয়। তারপর তালিকা ধরে জমির চরিত্র বদলের প্রক্রিয়া শুরু করে। ইডির দাবি, এই তালিকায় যেমন বন্ধ কারখানার জমি রয়েছে, তেমনই আছে জলাভূমিও। এসব জলাভূমি রাতারাতি ভরাট করা হয়েছে। মধ্যমগ্রাম, বারাসত, যশোর রোড, হাওড়া, আসানসোল ও দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে এরকম বেশ কিছু জমির খোঁজ পেয়েছেন ইডির তদন্তকারীরা। জমিগুলির এক একটির আয়তন ১০ থেকে ২০ বিঘা। দালাল মারফত এসব জমির সন্ধান পেতেন পার্থবাবুরা।

ভারতের তিনটি বড় রিয়েল এস্টেট সংস্থা এরই মধ্যে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে। ইডির অভিযোগ, এর জন্য কোম্পানিগুলি বিপুল পরিমাণ ঘুষ দিয়েছে শিল্পদফতর ও বিভিন্ন সরকারি কর্তাকে। ঘুষের অঙ্কটা মাথাপিছু  এক থেকে দেড় কোটি রুপি বলে ধারণা করা হচ্ছে। অপরদিকে, বেআইনি শিক্ষক নিয়োগ ও জমি দুর্নীতির অর্থ ফের ঘুরপথে ওই রিয়েল এস্টেট সংস্থাগুলিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে বলেও দাবি ইডির।

এদিকে যখন পার্থ-অর্পিতার সঙ্গে জমির জালিয়াতি খুঁজে পাচ্ছে ইডি, অন্যদিকে, হুন্ডির যোগসাজশও খুঁজে পাচ্ছে। ইডি সূত্রে জানা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের এক গার্মেন্ট সংস্থার সাহায্যে বিদেশে টাকা পাচার করা হত। মূলত এই সংস্থাটি শাড়ির ব্যবসা করে থাকে। কলকাতা জুড়ে সংস্থাটির বড় বড় আউটলেট আছে। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের এই সংস্থার মালিকের সঙ্গে নাকি ভালই সুম্পর্ক ছিল পার্থ-অর্পিতার। যদিও ইডি সংস্থাটির নাম প্রকাশ্যে আনেনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে ইডি ‘সাহা টেক্টটস্টাইল’ সংস্থাটির দিকে ইঙ্গিত করছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে এই সংস্থাও ব্যবসায়িকভাবে জড়িত। সেখানেও তাদের সম্পত্তি আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বারাসাতেও কয়েক একর জমি আছে তাদের। হুন্ডি মারফত পার্থদের বহু টাকা বাংলাদেশসহ বিদেশে লেনদেন হয়েছে বলে ইডির ধারণা।

খুব শিগগিরই এই সংস্থার মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলেও ইডি সূত্রে জানা গেছে। সূত্র আরও জানিয়েছে যে, তদন্তের প্রথম থেকেই এই সংস্থার উপর নজর রাখছিল ইডি। তবে এই সংস্থার কর্ণধার কিন্তু যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। তার মতে, ইডি তদন্তের জন্য আসতেই পারে। কিন্তু তার অর্থ এই নয়, তারা কোনো অনৈতিক কাজে জড়িত।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ জুলাই পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তার ঘনিষ্ঠ অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছে ইডি। ১০ দিনের ইডির রিমান্ডে থাকার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আগামী ৩ আগস্ট কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টের অন্তর্গত নগর দায়রা আদালতে তোলা হবে তাদের।

এর আগে গত ১৪ মে বাংলাদেশের টাকা আত্মসাৎকারী পিকে হালদারকে গ্রেফতার করেছে ইডি। প্রকাশ্যে ইডি কারও নাম না আনলেও বারেবারে বলে আসছে পিকে হালদারদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালীরা জড়িত। আবার ১০ আগস্ট একই আদালতে তোলা হবে পিকে হালদারসহ ৬ অভিযুক্তদের। এখন দেখার অপেক্ষা পরিস্থিতি কোন দিকে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৯ ঘণ্টা, জুন ৩০ জুলাই, ২০২২
ভিএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।