ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

কলকাতায় রথযাত্রা সূচনা মমতার, দিলেন সম্প্রীতির বার্তা

ভাস্কর সরদার,সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০২২
কলকাতায় রথযাত্রা সূচনা মমতার, দিলেন সম্প্রীতির বার্তা কলকাতায় দড়ি টেনে রথযাত্রার উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি

কলকাতা: দীর্ঘ দুই বছর পর ফের এবার মহাসমারোহে পালিত হয়েছে ইসকনের রথযাত্রা। শুক্রবার (১ জুলাই) কলকাতার ইসকন মন্দিরের সামনে থেকে রথের দড়ি টেনে উৎসবের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নুসরত, সোহমসহ বিশিষ্টজনেরা।

হিন্দু রীতি অনুযায়ী তিনটি আলাদা রথে চড়ে শহর কলকাতা প্রদক্ষিণ করেন ভগবান জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা। এদিন রথযাত্রা উপরক্ষে গোটা কলকাতায় ছিল সাজসাজ রব।

যদিও ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের সবচেয়ে বড় এবং প্রধান উৎসব হল রথযাত্রা। যা হয়ে পালন করা হয় রাজ্যটির পুরী জেলায়। ধর্মীয় মতে এই পুরীতেই বিরাজ করেন ভগবান জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা। এখানেই আছে জগন্নাথ দেবের মন্দির। হিন্দুধর্ম মতে, ভগবান নারায়নের অপর একটি রূপ জগন্নাথ। কথিত আছে, স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুরীর রাজা স্বয়ং বিশ্বকর্মাকে দায়িত্ব দেন জগন্নাথ দেবের মূর্তি গড়ার। বিশ্বকর্মা জানান, যতদিন মূর্তি গড়া শেষ না হবে ততদিন পুরীর মন্দিরের দরজা খোলা যাবে না। কিন্তু একটা সময় কৌতুহল বসত দরজা খুলে দেন রাজা। বিশ্বকর্মা তার কাজ বন্ধ করে দেন। অসামপ্ত কাজের কারণে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার এই রূপ। সেই রূপেই যুগযুগ ধরে পূজা হয়ে আসছে।

প্রাচীন রীতি অনুযায়ী, বছররে নির্দিষ্ট কটা দিনে সব ভক্তদের দর্শন দিতে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা রথে ওঠেন। তবে রথযাত্রা প্রাচীন রীতি হলেও এই উৎসবকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করেছে ইসকন। সেই ইসকনের কলকাতার রথযাত্রাকে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করেছে।

পশ্চিমবঙ্গে মমতার আমল থেকে কলকাতার রথযাত্রা অন্যমাত্রা পেয়েছে। কারণ রথযাত্রা শুরুর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পূজা-প্রথার পর রথের দড়িতে টান পড়ে। এবারও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। এদিন বসিরহাটের সাংসদ ও অভিনেত্রী নুসরত এবং বিধায়ক অভিনেতা সোহমকে নিয়ে রথের দড়ি টানেন মমতা। একবারে অচেনা মেজাজে ধরা দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। রথাযাত্রার সূচনালগ্নে সবাইকে সম্প্রীতি রক্ষার বার্তা দিয়ে বলেন,  ঐক্য, মানবতার জয় হোক। রাজ্যে সম্প্রীতি যেন বজায় থাকে। সবাই সুস্থ থাকুক, সবার মঙ্গল হোক।

প্রত্যেক বছরই রথযাত্রার দিন হাজার হাজার ভক্তের সমাগম হয় কলকাতার ইসকনে। কিন্তু করোনার কারণে গত দুই বছর কলকাতায় বড় করে এই উৎসব পালন হয়নি। এদিন ইসকন মন্দির থেকে রথ বের হয়ে কলকাতার হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিট, এজেসি বোস রোড, শরৎ বোস, হাজরা, এসপি মুখার্জি রোড, চৌরঙ্গি, এক্সাইড, জহরলাল নেহরু রোড, আউট্রাম রোড হয়ে ব্রিগেডে যায়। সেখানে ৯ জুলাই পর্যন্ত থাকবেন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা। রথযাত্রা উপলক্ষে এই ৮দিন ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে চলবে মেলা। উল্টো রথের দিন ফের রথ ফিরে আসবে ইসকনে।

গত বছর কলকাতার রথযাত্রার ছিল ৫০তম বর্ষ। কিন্তু করোনার কারণে বড় করে উদযাপন করা হয়নি। এবার তাই মহাসমারোহে ধুমধাম করে রথযাত্রা পালন করছে ইসকন। ১৫০টি দেশ থেকে ভক্তরা এসেছেন কলকাতায়। তারাই রোজ ভোগ রান্না করবেন। সেই ভোগ ব্রিগেডে সাধারণ ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হবে। তাছাড়া রোজই চলবে পূজো ও গান, কীর্তন।

এদিন কলকাতা ছাড়াও সাজ সাজ ছিল রব পশ্চিমবঙ্গের নবদ্বীপের মায়াপুরের ইসকনেও। করোনাবিধি মেনেই এবার উৎসবে মেতেছেন মায়াপুরবাসী। দেশ-বিদেশ থেকে এরই মধ্যে জড়ো হয়েছেন ভক্তরা। মায়াপুর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে রাজাপুর গ্রাম। সেখানকার জগন্নাথ মন্দির থেকে তিনটি পৃথক রথে করে জগন্নাথ, বলদেব এবং সুভদ্রা মহারানি মায়াপুর চন্দ্রোদয় মন্দিরের অস্থায়ী গুণ্ডিচায় মাসির বাড়িতে আসেন।

এছাড়া চিল মাহেশের রঘ, বেলঘরিয়ায় রথ উৎসব। এরকম আরও কয়েকটি জনপ্রিয় রথযাত্রা হয়ে থাকে পশ্চিমবঙ্গে। সেখানে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম হয়।

অপরদিকে উড়িষ্যায় এবছর রথযাত্রা নিয়ে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ অন্যবারের তুলনায় একটু বেশি। করোনার কারণে গত দুই বছর পুরীর রথযাত্রায় দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল না। এবছর দর্শনার্থীদের ভিড় উপচে পড়ে। সেকথা মাথায় রেখে রথযাত্রার মূল নিরাপত্তা বেষ্টনীতে তিন হাজার কমান্ডো মোতায়েন করেছে উড়িষ্যা প্রশাসন। এছাড়া যাত্রাপথ সিসিটিভিতে মুড়ে ফেলা হয়েছে। যাতে কন্ট্রোল রুমের কর্তাদের কাছে প্রতিটি ছবি থাকে। ফলে সব মিলিয়ে ভারতের রথযাত্রা উৎসবে মেতেছেন ভক্তরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৯ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০২২
ভিএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।