ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

একের পর এক অভিযোগে ব্যাকফুটে মমতার প্রশাসন

ভাস্কর সদরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৩ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২২
একের পর এক অভিযোগে ব্যাকফুটে মমতার প্রশাসন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে একের পর এক দুর্নীতি ও শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের চাপে নাকাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন। একটা ঘটনার শেষ হতে না হতেই অপর এক দুর্নীতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।

হত্যা-ধর্ষণসহ নানা দুর্নীতি রাজ্যটিকে সমালোচনার শীর্ষে নিয়ে যাচ্ছে।

গত কয়েকমাসে বাঙালি অধ্যুষিত রাজ্যটিতে ঘটেছে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হাওড়ার আমতায় বামনেতা আনিস খান হত্যা ও পুরুলিয়ার ঝালদায় কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু হত্যা। এ ছাড়া উত্তর ২৪পরগণার পানিহাটিতে নিজেদের মধ্যে বাহাসের ঘটনায় তৃণমূল কাউন্সিলর অনুপম দত্ত খুন, বীরভূমের রামপুরহাটে জীবন্ত পুড়িয়ে ৯ জনকে গণহত্যা কালিমা লেপন করেছে দলটিতে।

নদিয়ার হাসখালিতে নাবালিকাকে ধর্ষণ ও উত্তরপ্রদেশের হাথরসের বিনা ডেথ সার্টিফিকেটে মরদেহ পোড়ানোর মতো অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দলটির বিরুদ্ধে সর্বশেষ গুরুতর অভিযোগ- প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার নামে বাংলাদেশের আলোচিত এক দুর্নীতিবাজকে পশ্চিমবঙ্গে বসবাসের সুযোগ দেওয়া। সবগুলো অভিযোগই রাজ্য সরকারের প্রশাসনের বিরুদ্ধে। যে কারণে কপালে ভাঁজ পড়েছে মমতার।

এসব কিছু ছাপিয়ে পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি মামলা খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে। জানা গেছে, স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রয় দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট। রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশচন্দ্র অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতাকে শিক্ষকার চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

আদালত জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে নিয়োগের পর থেকে এতদিন বেতন বাবদ যে অর্থ অঙ্কিতা পেয়েছেন, তা দুটি কিস্তিতে কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে ফেরত দিতে হবে। শুক্রবার (২০ মে) এ নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

২০১৮ সালে এসএসসি’র মাধ্যমে শিক্ষিকার চাকরি পান অঙ্কিতা অধিকারী। প্রার্থীদের তালিকায় নাম না থাকলেও তিনি চাকরি পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় নিয়ে মামলা করেন ববিতা বিশ্বাস নামে অপর চাকরিপ্রার্থী। জানা গেছে, ববিতার নাম বাদ দিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর মেয়েকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

মামলার এজাহারে ববিতা দাবি করেন, স্টেস লেভেল সিলেকশনে তিনি ৭৭ নম্বর পেয়েও তিনি রাজ্য সরকারের কাছে চাকরির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হননি। কিন্তু, ৬১ নম্বর নিয়ে চাকরি পান অঙ্কিতা অধিকারী।

শুক্রবার ববিতার মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত রায় ঘোষণা করেছেন। রায়ে বলা হয়েছে, গত ৪১ মাস ধরে চাকরি করেছেন অঙ্কিতা। এসময় তার প্রাপ্ত বেতনের পুরোটাই ফেরত দিতে হবে। অঙ্কিতা বা তার প্রতিনিধি ইন্দিরা গার্লস হাইস্কুলে যেতে পারবেন না বলেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

কলকাতা হাইকোর্ট মনে করছেন, অঙ্কিতার চাকরি পাওয়ার পেছনে প্রভাবশালীদের অদৃশ্য হাত রয়েছে। যে কারণে মামলার তদন্তভার সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (সিবিআই) দেওয়া হয়। পরে ঘটনা তদন্তে আজ রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারী সিবিআইয়ে হাজিরা দেন। তার মেয়ে অঙ্কিতাকেও জেরার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু তিনি পলাতক হওয়ায় সেটি সম্ভব হয়নি।

সূত্র বলছে, হাজিরা দেওয়ার পর শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীকে দফায় দফায় জেরা করা হচ্ছে। তার কথার মধ্যে অসঙ্গতি রয়েছে। কবে তিনি তৃণমুল যোগ দিয়েছিলেন, কে তার হাতে দলের পতাকা তুলে দিয়েছিল, তার মেয়ে কীভাবে চাকরি পেল, কোন কোন মন্ত্রী তার সঙ্গে ছিলেন- এমন একাধিক প্রশ্ন করা হয় পরেশ অধিকারী। প্রতিবারই তিনি উত্তর দিয়েছেন। কিন্তু তাতে অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। পরেশ একসময় বামজোট অর্থাৎ ফরোয়ার্ড ব্লকের রাজনীতি করতেন বলেও জানা গেছে।

সূত্র আরও জানায়, ২০১৬ সালে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও (বর্তমান শিল্পমন্ত্রী) আজ ডেকে পাঠায় সিবিআই। অজানা বা গোপন তথ্য জানতেই তাকে ডেকে পাঠানো হয়। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী তত্ববধানে কীভাবে এ ধরনের চাকরি হয়, কত অঙ্কিতার এভাবে চাকরি হয়েছে- এমন নানাবিধ প্রশ্ন করা হয় তাকে। এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

এসব সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিলেও মন্তব্য করতে ছাড়েননি মমতা। এসএসসি দুর্নীতি মামলা নিয়ে সরাসরি কিছু না বললেও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাম আমলে চাকরি হতো চিরকুট দিয়ে।

তিনি অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির দিকেও। মমতা বলেন, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করে বিজেপি তুঘলকি কায়দায় দেশ চালাচ্ছে। নিজ দলের নেতা-কর্মীদেরও সতর্ক করে দিয়েছেন রাজ্য সরকারের প্রধান।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২২
ভিএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।