ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

বিনিয়োগের আহ্বান মমতার, আগ্রহ জানালেন টিপু মুনশি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২২
বিনিয়োগের আহ্বান মমতার, আগ্রহ জানালেন টিপু মুনশি

কলকাতা: করোনা ভাইরাসের কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয়েছে বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট। কলকাতার নিউটাউনের বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে বুধবার (২০ এপ্রিল) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মুখ্যমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র। ২০ ও ২১ এপ্রিল দুই দিনব্যাপী চলবে এই সম্মেলন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন ভারতের নামকরা শিল্পপতিরা। অংশ নিয়েছে সহযোগী একাধিক দেশ। সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, জার্মানি, রাশিয়া, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, কেনিয়া, মালয়েশিয়াসহ মোট ৪২টা দেশের ২৫০ জন প্রতিনিধি রয়েছেন। এই ৪২টি দেশের মধ্যে নতুন যোগ হয়েছে ১৪টি দেশ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অভিন্নতার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, বাংলা প্রাগ্রসর চিন্তা-চেতনার ধারক হিসেবে একসময় সমগ্র ভারতবর্ষের সমীহের স্থলে অভিষিক্ত ছিল। বর্তমান বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ এ গৌরবের উত্তরাধিকার।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে অগ্রসর হচ্ছে এবং উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সমাদৃত হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গের অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে।

টিপু মুনশি বলেন, ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের পরিমাণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগে আগ্রহী।  সম্প্রতি সরকার বাংলাদেশের বিনিয়োগকারী কর্তৃক বিদেশে বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করেছে। ফলে বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীরা আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকাসহ এশিয়ার দেশগুলোতে বিনিয়োগ করতে পারছেন। পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের আগ্রহ রয়েছে।

সবার শেষে বক্তব্য রাখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চে উঠেই মমতা বলেন, মঞ্চে ‘জয় বাংলা’ বলার জন্য ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রীকে। আমরাও ‘জয় বাংলা’ বলি। সাথে আমরা বিশ্ব বাংলাও বলি। ধন্যবাদ আমার ডাকে এখানে আসার জন্য। দয়া করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের শুভেচ্ছা জানাবেন।

এরপর মমতা বলেন, শিল্পপতিদের কাছে বাংলা আজ চাহিদার জায়গা হয়ে উঠছে। কারণ পূর্ব ভারতে বাংলার অবস্থান এমন জায়গায়, যে কারণে বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল ও দক্ষিণ এশিয়ার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলির শিল্পক্ষেত্রে সর্বাধিক সুবিধা হবে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসব দেশের সর্বোচ্চ দূরত্ব আধা ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা। সে কারণে আমরা বলছি—‘বেঙ্গল ইস দ্য গেটওয়ে অব বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, সাউথ-ইস্ট অ্যান্ড নর্থ-ইস্ট এশিয়া’। ফলে বাংলায় বিনিয়োগ মানেই এখান থেকেই এতগুলো দেশে সহজে ব্যবসা প্রসার করতে পারবে ইন্ড্রাস্ট্রিগুলো।

শিল্পপতিদের উদ্দেশে মমতা বলেন, বাম আমলে বনধ-হরতালে অনেক কর্মদিবস নষ্ট হতো। এখন তা হয় না। এখনকার সরকার হরতালের পক্ষপাতি নয়। ফলে বাংলায় এখন একটিও কর্মদিবস নষ্ট হয় না, আপনারা নিশ্চিন্তে এগিয়ে আসুন। বাংলাকে নিজের ঘর ভাবুন, বাংলার পরিবারের সদস্য হোন।

মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) ভুটান, কেনিয়া, জাপান, বাংলাদেশসহ একাধিক দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রী। যে শিল্পগুলিতে বিপুল কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে, সেগুলিকে লক্ষ্য করছে রাজ্য। এর মধ্যে বড় শিল্পের পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক শিল্প, মাছ চাষ, ডেইরি, পোলট্রি ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিষয়েও আগ্রহ দেখাচ্ছে মমতার সরকার। তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রীর কুরসিতে বসেই মমতা ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্যে শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থানে বাড়তি গুরুত্ব দেবেন। কর্মসংস্থান তৈরি করাই এখন মমতার লক্ষ্য।

কোভিড পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনৈতিক দূরবস্থার মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার জানিয়েছিল, তাদের কাছে বহু শিল্পপতির লগ্নি প্রস্তাব এসেছে। সেইসব প্রস্তাব বাণিজ্য সম্মেলনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। ফলে এখন দেখার কোন কোন শিল্পপতি মমতার রাজ্যে বিনিয়োগ করেন। সেই দিকেই তাকিয়ে বাংলাসহ ভারত।

সম্মেলনে মমতার প্রশংসা করে রাজ্যপাল ধনখড় বলেন, বাংলা ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির ভূমি। পূর্ব ভারতের ইকোনমি জোন এই বাংলা। যা মমতার নেতৃত্বে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে চলছে। বিনিয়োগের জন্য বাংলা হলো আদর্শ জায়গা। কারণ ভারতের মধ্যে মানবসম্পদে এগিয়ে বাংলা। বাংলা আজ যা ভাবে কাল তা ভারত ভাবে। প্রধানমন্ত্রী মোদীও একথা মানেন। বাংলার এই বাণিজ্য সম্মেলন ভারতের উন্নয়নের পথ দেখাবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২২
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।