ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

দুই উপ-নির্বাচনে একটিতে জামানত জব্দ, অন্যটিতে বড় হার বিজেপির

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২২
দুই উপ-নির্বাচনে একটিতে জামানত জব্দ, অন্যটিতে বড় হার বিজেপির

কলকাতা: ২০১৯ সালের ভারতের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ৪২-এর মধ্যে ১৮টি আসনে জয় পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল বঙ্গ বিজেপি। এরপর ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বরা।

প্রচারে রীতিমতো ঝড় তুলেছিল বিজেপি। তাতেও ২১৩ জন বিধায়ককে নিয়ে তৃতীয়বার সরকার গঠন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও ৭৭ আসন পেয়ে পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি পায় মোদীর দল। এরপরে এ বছর কলকাতা করপোরেশন ও রাজ্যের পুরোভোট সবই হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির।

এবার আসানসোল লোকসভা উপ-নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহার কাছে প্রায় ৩ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারলেন বিজেপির অগ্নিমিত্রা পাল। হারের জন্য দুঃখপ্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে টুইট করেন অগ্নিমিত্রা। লেখেন, ‘দুঃখিত, চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু আসনটি দিতে পারলাম না, বাংলায় গণতন্ত্রকে খুন করা হচ্ছে। তবে আমার লড়াই চলবে। ’

অপরদিকে, দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ বিধানসভার উপ-নির্বাচনে তৃতীয় স্থানে নেমে গেল বিজেপি। এমনকি ১০ হাজারের নিচে ভোট পেয়ে জামানত জব্দ হয়েছে বিজেপি প্রার্থীর। একই অবস্থা কংগ্রেসেরও, ৫ হাজারের নিচে ভোট পেয়েছে। এ কেন্দ্রে জয়ী হয়েছে বাবুল সুপ্রিয়। তবে গায়ক, অভিনেতার জয়ের ব্যবধান ২০,০৩৮ ভোট। যা শাসক দলের কাছে অস্বস্তির। ২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে এ কেন্দ্র থেকে ৭৫ হাজার ৩৩৯ ভোটে বিজেপিকে হারিয়েছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পেয়েছিলেন ৭০ শতাংশেরও বেশি ভোট। সেখানে এক বছরেই তৃণমূল কংগ্রেসের এ অবস্থা।

তবে এ কেন্দ্রে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল সিপিএম। প্রার্থী ছিলেন সায়রা শাহ হালিম। রাজ্যে এ মুহূর্তে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি প্রার্থী কেয়াকে পেছনে ফেললেন প্রায় ১৮ হাজার ভোটে। শায়রা জয়ী হননি ঠিকই, কিন্তু ২০০৬ সালের পর এ কেন্দ্রে প্রথম বাম ভোটে বৃদ্ধি পেল। সায়রা, অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহের ভাইঝি ও চিকিৎসক বামনেতা ফুয়াদ হালিমের স্ত্রী। ভাঙাচোরা সংগঠন নিয়ে লাল ঝাণ্ডা সায়রার কাঁধে তুলে দিয়েছিল বাম সদর দপ্তর আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। সায়রাকে লড়তে হয়েছে দক্ষিণ কলকাতায় তৃণমূলের প্রবল সাংগঠনিক শক্তির বিরুদ্ধে। হেরে গিয়েও নিজের কেন্দ্র থেকে যথেষ্ট তারিফ পেয়েছেন।  

রমজানের মধ্যেই মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) ছিল দুই কেন্দ্রে উপ-নির্বাচন। শনিবার (১৬ এপ্রিল) ছিল তার ফলাফল। সাধারণত উপ-নির্বাচনে শাসকদলের পাল্লাই ভারী থাকে। ফলে দুই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীরা জিতবে তা ছিল নিশ্চিত। তবে কার কতটা মার্জিন থাকে এবং বিজেপি কী করবে তাই ছিল দেখার। বামেদের কথা সেইভাবে কেউ ভাবেনি। তবে ২১ সালের নির্বাচন থেকে শুরু, এরপর কলকাতা করপোরেশন এবং রাজ্যের পুরোভোটে ধারাবাহিকভাবে ভোটের মার্জিন বাড়াচ্ছে বামেরা। মার্জিনের হিসেবে শাসক দলের পাশাপাশি ধরাশায়ী হচ্ছে বিজেপিও।

এর জেরে ভারতে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের বাম এবং শাসক দল কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও যথেষ্ট চিন্তায় বিজেপি। এর জেরে সরব হয়েছেন বিজেপি নেতারাও। সুকান্ত মজুমদার বঙ্গ বিজেপির সভাপতি হওয়ার পরেই বিজেপির রাজ্য কমিটিতে ব্যাপক রদবদল হয়েছিল। দলের পদ পাওয়াকে কেন্দ্র করে অশান্তি, গোষ্ঠী রাজনীতির কঙ্কালসারও প্রকট হয়েছিল। প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করেছিলেন বনগাঁর সংসদ সদস্য শান্তনু ঠাকুরসহ মতুয়ারা। প্রতিবাদে সুর চড়িয়ে সাসপেন্ড হয়েছেন জয়প্রকাশ মজুমদার, রীতেশ তিওয়ারির মতো পুরান নেতারা। সেই ডামাডোল এখনও ছাই চাপা আগুনের মতোই রয়েছে।

দল থেকে বহিষ্কৃত রাজ্যের নেতাদের ফেরানোর আর্জি অনেকের। তাদের মতে নিজেদের মধ্যে মিটমাট না হলে ২০২৪ এ বড় বিপদ ডেকে আনবে রাজ্যে। কারণ ওই ভোটে ঠিক হবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী। আর মোদীকে গদিতে রাখতে হলে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের পাশাপাশি বাংলার বড় সাপোর্ট চাই। বাংলায় সংসদ সদস্য বাড়াতে সবার আর্জি এক হতেই হবে নিজেদের।

বাংলাদেশ সময়: ০১১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২২
ভিএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।