ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

মানুষের আর্থিক উন্নয়নে নতুন দিশা দেখাচ্ছে ‘বায়ো ভিলেজ’ প্রকল্প

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২০
মানুষের আর্থিক উন্নয়নে নতুন দিশা দেখাচ্ছে ‘বায়ো ভিলেজ’ প্রকল্প ছবি: বাংলানিউজ

আগরতলা (ত্রিপুরা): ত্রিপুরায় জৈবগ্রাম প্রকল্প ব্যাপক সাফল্য লাভ করায় প্রতি বছর নতুন নতুন গ্রাম অধিগ্রহণ করা হচ্ছে এই প্রকল্পে। রাজ্য সরকারের বায়োটেকনোলজি অধিদপ্তর এই গ্রামগুলির কাজ রূপায়ণের কাজে যুক্ত রয়েছে।

এই অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. অঞ্জন সেনগুপ্ত’র পরিকল্পনায় রাজ্যে প্রথম ‘বায়ো ভিলেজ’ প্রকল্প শুরু হয়।

জৈবপ্রযুক্তি অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. অঞ্জন সেনগুপ্ত এক সাক্ষাৎকারে বাংলানিউজকে জানান, প্রথমে ব্রজেন্দ্রনগর গ্রামকে বায়ো ভিলেজ হিসেবে অধিগ্রহণ করা হয়। এর সাফল্যের কারণে আরও একাধিক গ্রামকে অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যে মোট ৫টি গ্রাম পূর্ণাঙ্গরূপে বায়ো ভিলেজ হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে এবং আরও ২টি গ্রাম খুব দ্রুত বায়ো ভিলেজ হিসেবে অধিগ্রহন করা হবে।  

অন্য সকল গ্রাম থেকে বায়ো ভিলেজ'র পার্থক্য কি? এই প্রশ্নের উত্তরে ড. অঞ্জন সেনগুপ্ত বলেন, এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে গ্রামের সংসাধনকে কাজে লাগিয়ে মানুষের আয় বৃদ্ধি করা এবং জীবন যাপনের মানকে আরও উন্নত করা। সেই সঙ্গে রাসায়নিক সার এবং বালাইনাশকের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে জৈব পদ্ধতিতে কৃষি কাজ করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া। বর্তমানে ৫টি গ্রামের মোট ৪৫০টি পরিবার ভায়ো ভিলেজ'র সুবিধা পাচ্ছেন আরও দুটি গ্রাম যুক্ত হলে নতুন করে ২৫০টি পরিবার এই সুবিধা পাবে বলেও জানান তিনি।  

ছবি: বাংলানিউজ

এই সব গ্রামের মানুষদেরকে কী ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে? বাংলানিউজের তরফে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, গ্রামের মানুষ মূলত কৃষির সঙ্গে জড়িত তাই তাদেরকে কী করে চাষের খরচ কমানো যায় সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বিশেষ করে রাসায়নিক সার ও বালাইনাশকের পরিবর্তে বাড়ির বিভিন্ন গাছপালা, পচনশীল আবর্জনা, গোবর ইত্যাদি ব্যবহার করে জৈব সার তৈরি করা। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব পদ্ধতিতে রোগবালাই দূর করার ঔষধ তৈরি করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়াও গ্রামের কৃষকদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যরাও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন তার জন্য মহিলাদের মধ্যে উন্নত প্রজাতির ছাগল, মোরগ মৌমাছির বাক্স বিতরণ করা হয়, মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়াও যে সকল পরিবারে গরু রয়েছে তাদের বাড়িতে গোবর থেকে জৈব গ্যাস তৈরির প্ল্যান্ট বসানো হয়, যাদের পুকুর রয়েছে তাদের মধ্যে মাছের পোনা বিতরণ করা হয়। শুধুমাত্র এক দফায় তাদের মধ্যেই সব সামগ্রী এবং প্রাণী বিতরণ করা হয় এমনটা নয়। মাছসহ অন্যান্য প্রাণীদের খাবার, মাশরুম চাষের জন্য প্রয়োজনীয় এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়া প্রাণীগুলির সঠিক বৃদ্ধি এবং সুস্থ স্বাভাবিক রয়েছে কিনা তা নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করা হয়।

গ্রামের মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা চিন্তা করে এলইডি বাল্ব, ফ্যানসহ আধুনিক প্রযুক্তির অন্যান্য গৃহস্থালি সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এর ফলে মাসিক বিদ্যুৎ বিল থেকে শুরু করে রান্নার গ্যাসের খরচ অনেকটাই কম হচ্ছে। একইভাবে সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বাস্তুতন্ত্র রক্ষা এবং পরিবেশের ভারসাম্য যাতে নষ্ট না হয় সেই দিকে। বিশ্বজুড়ে যেভাবে পরিবেশ দূষণ বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হচ্ছে তা যাতে কমিয়ে আনা যায় জৈব গ্রামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে এটিও একটি বলে জানান তিনি।  

ছবি: বাংলানিউজ

জৈব প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কৃষকরা এখন পর্যন্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পেরেছেন। এর ফলে মাটির স্বাস্থ্য অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ফসল ও সবজির পরাগ সংযোগকারী যে সকল কীটপতঙ্গ রয়েছে তার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ফসল ও সবজির উৎপাদন বেড়েছে। যা পরিবেশ রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এমনকি অপ্রচলিত তথা বিকল্প শক্তির ব্যবহারের ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এই সকল গ্রামগুলিতে। সেচের কাজের জন্য প্রচলিত বিদ্যুতের পরিবর্তে সৌরশক্তিচালিত পাম্পসেট ব্যবহার করা হচ্ছে, গ্রামীণ রাস্তার আলোর জন্য সৌরচালিত এলইডি লাইট এবং গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পড়াশোনা সুবিধার জন্য সৌর লন্ঠন বন্টন করা হয়েছে। এই প্রকল্পের অর্থায়নের ব্যবস্থা করেছে ভারত সরকারের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল এবং গ্যাস অনুসন্ধানকারী সংস্থার (ওএনজিসি) ত্রিপুরা অ্যাসেট।  

তিনি আরো জানান, একটা সময় পর্যন্ত বায়োটেকনোলজি অধিদপ্তর এই সকল গ্রামের মানুষদেরকে আর্থিক সহায়তাসহ পরামর্শ দেবে এরপর তারা নিজেরাই এগুলোকে চালিয়ে নিয়ে যাবে। মানুষ যাতে এই বিষয়গুলোর ওপর যত্নশীল হয় এবং জৈবপ্রযুক্তিসহ পরিবেশ রক্ষা করে নিজেদের জীবন-জীবিকাকে পরিচালিত করার বিষয়ে মনোযোগী হয় এই বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দেওয়া দেওয়া হচ্ছে।

বায়ো ভিলেজের সুবিধাভোগী মহিলা ঝর্ণা রায় বাংলানিউজকে জানান, সরকারের এই প্রকল্পে তারা ব্যাপক খুশি। কারণ বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি মেনে চাষ করায় একদিকে যেমন তাদের উৎপাদন খরচ অনেক কমেছে, সেই সঙ্গে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কম হওয়া মানুষের মধ্যে এই সকল সবজির চাহিদা অনেক বেশি। রাসায়নিক সারের মাধ্যমে উৎপাদিত সবজির তুলনায় তাদের উৎপাদিত সবজি বেশি দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।  

একই বক্তব্য সমর সরকার, রতন শীলসহ অন্যান্য সুবিধাভোগীদের।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘন্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২০
এসসিএন/ইউবি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।