ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

নাম লেখা হয়ে গেলো বিল ক্লিনটনের সঙ্গে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৯
নাম লেখা হয়ে গেলো বিল ক্লিনটনের সঙ্গে

তাজমহল (আগ্রা) ঘুরে: নয়াদিল্লিতেই পড়ছিল কড়ারোদ। সেখান থেকে বাস উত্তর প্রদেশ অভিমুখে মহাসড়ক ধরে সাঁই সাঁই করে যতো জোরে ছুটছিল, রোদেরও যেন ততো তীব্রতা বাড়ছিলো। মাঝে যাত্রাবিরতির সময় গাড়ি থেকে বেরিয়েতো যেন চামড়া খসে যাওয়ার দশা।

প্রায় সোয়া দুইশ’ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে গাড়ি যখন নির্দিষ্ট স্টপেজে থামলো, সবাই তড়িঘড়ি উঠে পড়লো কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের একেবারে ফটকে যাওয়ার আরেক গাড়িতে। কাঠফাটা রোদে এতোক্ষণ চোখখোলা দায় হয়ে পড়লেও ফটকের আনুষ্ঠানিকতা সেরে ভেতরে ঢুকতেই ঝাড়া দিয়ে উঠলো গা।


 
আরেকটু এগিয়ে সামনে যেতেই এক ফটকের ফাঁক দিয়ে সূর্যকিরণের চেয়েও যেন বেশি আলোয় ভাসিয়ে দিচ্ছিলো শ্বেতমার্বেল সৌধ। প্রেম-ভালোবাসার স্মারক, বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একটি- ‘তাজমহল’।  
তাজমহলের সামনে বাংলাদশের তরুণ-তরুণীদের ফটোসেশন।  ছবি: বাংলানিউজসন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রিয়তমা পত্নী আরজুমান বানু বেগম ওরফে মমতাজ মহলের মৃত্যুর পর শোকাহত মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্মৃতির বাঁচিয়ে রাখতে তৈরি করেন এই তাজমহল। যমুনার তীরে এই কীর্তির বিশালত্ব আর অবর্ণনীয় সৌন্দর্য যেন ভাষায়ও আসে না। পারস্য ও মুঘল স্থাপত্যের কারু-শৈলীতে বানানো হয় তাজমহল। হিসাব মতে, ২০ হাজার কর্মী প্রায় ২২ (১৬৩২-১৬৫৪) বছর ধরে শ্রম-ঘাম দিয়ে গড়ে তোলেন এই স্থাপনা।
 
তখন দুপুর হলেও স্থানীয় ও বিদেশি পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত তাজমহল প্রাঙ্গণ। এই প্রাঙ্গণকে আরও মুখর করে তুললো ভারতের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন টুইন্ডিয়া-২০১৯’ শীর্ষক আয়োজনে সাত দিনের সফরে আসা বাংলাদেশের ১০০ তরুণ-তরুণীর পদভার।  
তাজমহলের নির্মাণশৈলী।  ছবি: বাংলানিউজতাজমহল দেখার পর বিস্ময়াভিভূত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বলেছিলেন, বিশ্বে দু’ধরনের মানুষ আছে। একভাগ হলো তারা, যারা তাজমহল দেখেছে এবং এর প্রেমে পড়েছে; আরেকভাগ হলো তারা, যারা তাজমহল দেখেনি, তবে ভালোবেসেছে। আমি চাইবো, লোকজন তাজমহল দেখুক এবং এর প্রেমে পড়ুক।
 
বিল ক্লিনটনের মতো তাজমহল সরাসরি দেখে এর প্রেমে পড়ে প্রথম ভাগের লোক হতে পারার উচ্ছ্বাস তখন পুরো ডেলিগেট টিমের চোখে-মুখে, আর তা বন্দি হচ্ছিলো, ক্যামেরায়, স্মার্টফোনে।
 
ভেতরে ঢুকতেই তাজমহলের একদিকে গেস্ট প্যাভিলিয়ন এবং অন্য দিকে মুঘল স্থাপত্যের অন্যান্য স্থাপনার মতো লাল বেলেপাথরে তৈরি মসজিদ চোখে পড়লো।  
তাজমহলের নির্মাণশৈলী।  ছবি: বাংলানিউজ৪০০ মিটারের চৌকোণা চার বাগ বা মুঘল গার্ডেন দিয়ে ঘেরা এই স্থাপনা সাজানো ৬০ ফুট ব্যাসের ৮০ফুট উঁচু মূল গম্বুজের চতুর্পাশে চারটি ছোট গম্বুজ দিয়ে। শ্বেত মার্বেলের সঙ্গে পাথর দিয়ে গড়ে তোলা এই স্থাপনায় আছে চিত্রকর্ম আর সুরা ইয়াসিনসহ কয়েকটি সুরার ক্যালিগ্রাফির শৈল্পিক কারুকার্য। বলা হয়েথাকে, তাজমহল নির্মাণকাজে মালামাল পরিবহনের জন্যই নিয়োজিত ছিল প্রায় ১ হাজার হাতি। শ্বেতমার্বেল পাথর আনা হয় রাজস্থান থেকে। আর মোজাইকে ব্যবহৃত ২৯ ধরনের পাথর আনা হয় সুদূর শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান এবং আরবের বিভিন্ন দেশ থেকে।
 
ভেতরে যেতেই গাইড দেখিয়ে দেন, শাহজাহান ও তার প্রিয়তমা মুমতাজ মহলের সমাধির প্রতিকৃতি, যেটা ওপরের কক্ষে এবং ঠিক প্রতিকৃতি দু’টি বরাবর নিচে ভালোবাসার এ যুগলের মূল সমাধি।  
তাজমহলের নির্মাণশৈলী।  ছবি: বাংলানিউজসমাধি পেরিয়ে বেরিয়ে যেতেই সামনে চোখে পড়ে বহমান যমুনা। এই যমুনা শত শত বছর আগের একবিয়োগাত্মক প্রেম-কাহিনির সাক্ষী হয়ে যেন গল্প-গীতি বলে চলেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। সেই সুর ধরেইকি-না বিশ্বকবি বলে গেছেন, ‘আজি তার রথ/চলিয়াছে রাত্রির আহ্বানে/নক্ষত্রের গানে/প্রভাতের সিংহদ্বার-পানে। /তাই/স্মৃতিভারে আমি পড়ে আছি,/ভারমুক্ত সে এখানে নাই। ’

আরো পড়ুন:
** মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩৮৪৩ ভারতীয় সেনার স্মৃতিরমিনারে
**মোহনীয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর জয়গান
** ভারতের সংসদে বাংলাদেশের শতযুবা
** মেঘের রাজ্যে মাথা উঁচিয়ে হঠাৎ হিমালয়
** নয়াদিল্লি পৌঁছেছে বাংলাদেশের শতযুবা
** ভারতের পথে ১০০ ‘বাংলাদেশি-বন্ধু’ 
** ১০০ ‘বাংলাদেশি-বন্ধু’ ভারত যাচ্ছে বৃহস্পতিবার
** ভারত যাচ্ছে আরও ‘১০০ বাংলাদেশি-বন্ধু’​
**২৫শ বছরের ইতিহাসের জাদুঘরে বাজছে 'কারার ওই লৌহ কপাট'
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।