ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

ঈদের আগে ব্যস্ত পশ্চিমবঙ্গের তাঁতী পাড়া

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২১ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০১৭
ঈদের আগে ব্যস্ত পশ্চিমবঙ্গের তাঁতী পাড়া ঈদের আগে ব্যস্ত পশ্চিমবঙ্গের তাঁতী পাড়া

কলকাতা: ঈদের আগে ব্যস্ত সময় পার করছেন পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া জেলার শান্তিপুর এবং ফুলিয়ার তাঁতী পাড়া। রাত জেগে কাজ করছেন তারা।

একদিকে স্থানীয় মহাজনের নতুন শাড়ির জন্য তাগাদা অন্য দিকে কলকাতার বড়বাজার ,  শিলিগুড়ি, পাড়শি রাজ্য ওড়িশা, বিহার ও আসামের গুয়াহাটি, শিলচড়ের পাইকারি বিক্রেতাদের ঘনঘন ফোন তাদের ঘুমের সময়টুকু কেড়ে নিয়েছে।
 
ফুলিয়া ও শান্তিপুর এলাকার প্রতিটি পাড়ায় হাতে চালানো তাঁত আর মেশিন চালিত তাঁতের শব্দ শোনা যাচ্ছে অবিরত।

মাটির দেওয়ালে কান পেতে শুনলে সেই শব্দের মধ্যে একটা মিষ্টি ছন্দ খুঁজে পাওয়া যায়।   বাড়ির পুরুষ ও নারীদের সঙ্গে কাজে যোগ দিয়েছেন বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও।
 
প্রায় ৩৫ বছর ধরে পারিবারিক ঐতিহ্য বজায় রেখে তাঁত বোনার কাজ করছেন আমিনুল রহমান জানালেন, ওই অঞ্চলে জমিতে চাষ হয় ঠিকই কিন্তু উৎসবের মৌসুমগুলোতে পুরুষরা জমির দিকে যেতেই সুযোগ পান না। তখন তাদের হাতে থাকে মাকু, সুতো আর তাঁত টানার রশি।
 
অঞ্চলের অনেক পরিবারেই নিষ্ঠার সঙ্গে রাখেছেন রোজা। কিন্তু তার মধ্যেও চলছে তাঁত বোনার কাজ। হাতে টানা তাঁতগুলি যে ঘরগুলোতে চলছে সেগুলোর কোনটিতেই বিদ্যুৎ চালিত ফ্যান নেই। প্রবল গরমে যখন মানুষের হাঁসফাঁস দশা তখন প্রায় ঘামে স্নান করে তাঁত বুনে চলেছেন তাঁত শিল্পীরা।
ঈদের আগে ব্যস্ত পশ্চিমবঙ্গের তাঁতী পাড়া
 মাটির টালির ছাঁদের ফাঁক দিয়ে দিনের আলো দেখা যায়। কিন্তু তার মধ্যেও প্রতিটি তাঁতী পরিবারের মধ্যেই অতিথি বাৎসল্যের কোনও অভাব নেই। এই অঞ্চলের যে কোনো বাড়িতে পা রাখলেই আর কিছু না হোলেও মুড়ি, বাতাসা, নারকেল আর চা না খাইয়ে ছাড়তে চাইবে না।
 
তাঁতীদের সবার হাতে রয়েছে অ্যানড্রয়েড ফোন। ফুলিয়া এলাকার তাঁতী বিপিন ধাড়া জানালেন অ্যানড্রয়েড ফোন থাকায় কিছুটা সুবিধা হয়েছে কলকাতা ও দূরবর্তী অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের। তারা হোয়াটস অ্যাপ করে ডিজাইন পাঠিয়ে দিচ্ছেন তাঁতীদের। সেই ডিজাইন দেখে তাঁতীরা নকশা তুলছেন শাড়িতে।
 
পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শান্তিপুর এবং ফুলিয়া এলাকায় প্রায় ১২ হাজারের বেশি তাঁত রয়েছে। সরাসরি মোট ৩০ হাজার মানুষ এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। এই তাঁতগুলো থেকে ভারতের বাইরে  আমেরিকা, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডে শাড়ি রপ্তানি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
 
বালুচরি, হ্যান্ড ব্লক, জুট কাতান, জামদানি, সিল্ক, ধুপিয়ান,ঝলক কাতান ইত্যাদির চাহিদা সব থেকে বেশি। ৫৫০ রুপি থেকে ১০ হাজার বা তার অধিক দামেরও শাড়ি তৈরি হচ্ছে।
 ঈদের আগে ব্যস্ত পশ্চিমবঙ্গের তাঁতী পাড়া
শাড়ি ছাড়াও এই বছর চাহিদা রয়েছে সিল্কের ‘থ্রি-পিস’ এবং সিল্ক স্যুটের । অনেক তাঁতী শুধুই ‘থ্রি পিস’ এবং স্যুটের জোগান দিতে গিয়েই হিমসিম খাচ্ছেন ।
 
ঈদের তিন মাস পরেই দুর্গাপূজা তাই আগামী তিনমাসও কোনো ছুটি নেই। দুর্গা পূজার পরই জমিতে চাষে কিছুটা সময় দিতে পারবেন বলে তাঁতীরা জানিয়েছেন।
 
যন্ত্রচালিত তাঁত কি তাঁতীদের কাজ কেড়ে নিচ্ছে? এই প্রশ্নের জবাবে শান্তিপুর এলাকার অন্যতম প্রবীণ তাঁতী অমূল্য বসাক জানিয়েছেন এক্ষেত্রে বিষয়টি উল্টো। চাহিদা অনুযায়ী জোগান দিতে গেলে যন্ত্র আবশ্যক। তবে হস্তচালিত তাঁতে কৌলীন্যের কথাও তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন।
 
তাঁতীরা জানিয়েছেন  ঈদের জন্য চাহিদা বেশি থাকায় এই মাসে মহাজনদের কাছ থেকে বিশেষ বোনাস পেয়েছেন অনেকই।
 
এই বছরই প্রথম বিভিন্ন অনলাইন কেনাকাটায় ওয়েবসাইটের তরফে তাঁতীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১৭
ভি.এস/বিএস
 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।