ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

করোনায় স্বস্তিতে দেশ, তবে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি

রেজাউল করিম রাজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০২২
করোনায় স্বস্তিতে দেশ, তবে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি

ঢাকা: গত দুই সপ্তাহ যাবত দেশে করোনার নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে রয়েছে। ফলে বর্তমানে করোনার চতুর্থ ঢেউয়ে স্বস্তিতে (বিপদসীমার নিচে) রয়েছে বাংলাদেশ।

তবে সংক্রমণ বিশেষজ্ঞদের মতে করোনা ভাইরাসকে অবহেলা না করে এখনও মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোনো দেশে করোনার নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার টানা দুই সপ্তাহ ৫ শতাংশের নিচে থাকলে, সেই দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে ধরা হয়।

সংক্রমণ বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার মহামারির প্রথম দিকে যেভাবে কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই ভাইরাসটি তাণ্ডব চালিয়েছিল, বর্তমানে সেই অবস্থা নেই। অনেকেই প্রথম, দ্বিতীয় এবং বুস্টার ডোজ টিকা নিয়েছেন, তাই দেশে করোনার বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে। ফলে আক্রান্তের হার যেমন কমেছে, তেমনি কমেছে করোনার মৃত্যুর সংখ্যাও। হার্ড ইমিউনিটির ফলে করোনা আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও কমেছে।  

করোনা নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আমরা করোনায় অনেক ভালো আছি। করোনা নিয়ন্ত্রণে সব দেশ আমাদের প্রশংসা করেছে। টিকাদান কর্মসূচি সঠিকভাবে বাস্তবায়নের ফলে দেশে করোনার চতুর্থ ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে বিশ্বে পঞ্চম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। আর টিকা কর্মসূচিতে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম অবস্থানে। ইতোমধ্যে ৭৬ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে এবং বুস্টার ডোজ পেয়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ। করোনা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেই দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য, মানুষের জীবনযাত্রা, স্বাভাবিক কার্যক্রম সব চলছে।

অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ

করোনার চতুর্থ ঢেউ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে উল্লেখ করে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, টিকা নেওয়ার ফলে করোনার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। প্রতিরোধ ব্যবস্থা যত বাড়বে, ভাইরাসটি ছড়ানোর ক্ষমতা ততই কমে যাবে। ৯০ শতাংশ লোক যদি কোনো ভাইরাসের টিকা নেয়, বাকি ১০ শতাংশকে তারাসেই ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেয়। সামান্য কিছু সংক্রমণ ছড়ালেও ব্যাপকহারে সংক্রমণ ছড়াতে পারে না। এটাকেই আমরা বলি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকা।

তিনি আরও বলেন, আমরা হার্ড ইমিউনিটির কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। টিকা নেওয়ার পাশাপাশি সতর্কতামূলক কিছু ব্যবস্থাও নিতে হয়। সেগুলোও চলছে, সব মিলিয়ে আমদের দেশে বর্তমানে করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে বলা যায়। প্রথমত, যদি করোনার নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট তৈরি না হয়, তাহলে বর্তমানে করোনা থেকে আমাদের যে সুরক্ষা ব্যবস্থা আছে, তাকে বাইপাস বা ফাঁকি দিয়ে সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষমতা রাখে না। দ্বিতীয়ত, দেখা যাচ্ছে যে কোনো টিকা ৬ মাস, কোনটা ৮ মাস, আবার কোন টিকা ১ বছরের সুরক্ষা দিতে সক্ষম। প্রথমে বলা হয়েছিল দুই ডোজ টিকা নিলেই হবে, পরে দেখা গেল দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরও শরীরের সুরক্ষা ব্যবস্থা (এন্টিবডি) কমে যাচ্ছে। তখন আবার বুস্টার ডোজ নিতে হল। এখন আবার কোনো কোনো দেশ দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ দেওয়ার কথাও ভাবছে।  

বর্তমানে দেশে মানুষের শরীরে করোনার বিরুদ্ধে সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকায় আক্রান্তের সংখ্যা কম, হাসপাতালে ভর্তির রোগীর সংখ্যাও কম। এ কারণে করোনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে যে পরিমাণ প্রেশারের মধ্যে থাকতে হত, এখন তেমনটা হবে না। ফলে স্বাস্থ্যের অন্যান্য যেসব সেবা রয়েছে সেগুলোতে নজর দেওয়া যাবে। সবকিছু মিলিয়ে বর্তমানে করোনায় আমরা স্বস্তিতেই আছি এবং প্রত্যাশা করি স্বাস্থ্যবিধি মানলে এই স্বস্তি চলমান থাকবে বলেও জানান এ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০২২
আরকেআর/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।