ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

মরণোত্তর চক্ষুদান: চোখ ছুঁয়ে যাক চোখের জ্যোতি

সুমন মজুমদার, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১২
মরণোত্তর চক্ষুদান: চোখ ছুঁয়ে যাক চোখের জ্যোতি

ঢাকা : পৃথিবীর আলো, রঙ, রুপ আমাদের সামনে মূর্ত হয়ে ধরা দেয়ার জন্য যে অঙ্গটি সবচেয়ে জরুরি সেটা হলো চোখ। দৃষ্টিহীন মানুষের মত অভাজন আর হয় না।

দৃষ্টিহীন সেই অন্ধকারের কথা হয়তো দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের অনুভবের বাইরে।

আগেকার দিনে দৃষ্টিহীনরা অন্ধত্বকে ঈশ্বরের অভিশাপ বা ভাগ্যের লিখন বলেই মেনে নিতো। কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির মাধ্যমে অনেক ধরনের অন্ধত্ব রোধ করা যায়।

কিন্তু কোন দুর্ঘটনা বা রোধের অযোগ্য অন্ধত্বের জন্য অন্যের চোখ দিয়ে দেখা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। মানুষ মরে গেলে তার সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গই কিছুদিনের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। তাই মরেও নিজের চোখ অন্যকে দানের মাধ্যমে চাইলেই বেঁচে থাকা যায় পৃথিবীর আলো-রঙের মাঝে।

মৃত্যুর পর অন্যকে কর্ণিয়া দানের রীতিকেই মূলত বলে মরণোত্তর চক্ষুদান। সন্ধানী ন্যাশনাল আই ডোনেশান সোসাইটি’র তথ্য মতে বাংলাদেশে ১৪ লাখ লোক দৃষ্টিহীন। যাদের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে।

কীভাবে মরণোত্তর চক্ষুদান করবেন :
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সন্ধানী বেশ অনেকদিন থেকেই মরণোত্তর চক্ষুদান বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের উদ্যোগেই প্রতিবছর ২ নভেম্বর আমাদের দেশে মরণোত্তর চক্ষুদান দিবসও পালন করা হয়। সন্ধানী আন্তর্জাতিক চক্ষু ব্যাংক বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে ডোনারের মুখের সৌন্দর্যহানি না ঘটিয়ে সম্পূর্ণ চোখ তোলার পরিবর্তে শুধু কর্ণিয়া সংগ্রহ করে থাকে।

কেউ চক্ষুদান বিষয়ে আগ্রহী হলে প্রথমে তাকে সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির দেয়া অঙ্গীকারপত্র সংগ্রহ করতে হয়। তারপর তা যথাযথভাবে পূরণ করে সন্ধানী চক্ষু ব্যাংকের ঠিকানায় পাঠাতে হবে।

এরপর ডোনারকে চক্ষু ব্যাংক থেকে একটি ডোনার কার্ড সরবরাহ করা হয়।

এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে বলার প্রয়োজন যে, সংশ্লিস্ট ডোনারকে মৃত্যুর ছয় ঘণ্টার মধ্যে নিকটস্থ সন্ধানী ইউনিট অথবা সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতিতে খবর পাঠাতে হবে।

চক্ষুদান বিষয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ :
আমাদের দেশে এখনও অনেকে চক্ষুদান বিষয়ে নানান দ্বিধা-দ্বন্দে ভোগেন। এর মূল কারণ হিসেবে মনোবীদরা চিহ্নিত করেছেন সচেতনতার অভাব, ধর্মীয় ভুল ব্যাখ্যা ও আইনি জটিলতাকে।

এছাড়া অনেকে কেবলমাত্র মৃতদেহের অঙ্গহানির ভয়েই চক্ষুদান থেকে বিরত থাকেন। তাই বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় কর্ণিয়া প্রাপ্তির সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য। এজন্য এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরির উপর জোর দিয়েছেন তারা।

ধর্মীয় দৃষ্টিতে চক্ষুদান :
আমাদের দেশে অনেকেই কেবলমাত্র ধর্মীয় বিধি নিষেধের ভয়ে ইচ্ছে স্বত্ত্বেও চক্ষুদানে আগ্রহী হন না। অথচ পৃথিবীতে প্রচলিত কোন ধর্মেই এ বিষেয়ে কোনো ধরনের বিধি নিষেধ পাওয়া যায়নি। বৌদ্ধ, হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মগ্রন্থগুলোতে চক্ষুদানের ব্যাপারে কোন ধরনের বিধি নিষেধ পাওয়া যায়নি। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ও চক্ষুদানে কোন বাধা নেই।

এ সম্পর্কে মক্কাভিত্তিক ইসলামি ফিকাহ্ একাডেমি বলেছে, মরণোত্তর অঙ্গব্যবচ্ছেদ বা সংস্থাপন শরিয়তবিরোধী নয়। এছাড়া মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের পন্ডিতরাও চক্ষুদানকে মানবসেবা নামে অভিহিত করেছেন।

তাদের মতে যেহেতু ইসলাম মানবসেবাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে থাকে, তাই মানুষের কল্যাণে মরণোত্তর চক্ষুদান ইসলামবিরোধী হতে পারে না। ওআইসি পর্যন্ত মরণোত্তর চক্ষুদানকে অনুমোদন দিয়েছে।

সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা :
সার্বিক আলোচনায় দেখা যায় যে, মরণোত্তর চক্ষুদান একটি মহৎ সেবা। এই সেবাকে সবার মাঝে পৌঁছে দিতে যেমন প্রয়োজন সচেতনতা তেমন সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। নিজে সচেতন হয়ে অন্যকে সচেতন করতে হবে। তাহলে অন্ধ ফিরে পাবে দৃষ্টি।

আপনার মহত্ব দৃষ্টিহীনকে দেবে আলোর দিশারী। আসুন আজই আমরা এ পথের পাথেয় হই।

বাংলাদেশ সময় : ১৪৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।