ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত গাইডলাইন শিগগিরই আসছে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২০
করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত গাইডলাইন শিগগিরই আসছে

ঢাকা: করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে, বাংলাদেশকে এথেকে মুক্ত রাখতে এবং এ রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করতে শিগগিরই সরকারের পক্ষ থেকে গাইডলাইন দেওয়া হবে। গাইডলাইন তৈরির কাজ দ্রুত সম্পাদনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন এর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কণক কান্তি বড়ুয়া। 

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লকের অডিটোরিয়ামে  ‘নতুন করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।  

অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, বাংলাদেশে এখনও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত না হলেও এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ভাইরাসটি প্রতিরোধে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। প্রাথমিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ও প্রয়োজনীয় জনসচেতনা সৃষ্টি এবং সময়োপযোগী ও জ্ঞানলব্ধ কার্যকরী গাইডলাইন তৈরির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সেন্ট্রাল সেমিনার সাব-কমিটির উদ্যোগে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও বিস্তার প্রতিরোধে করণীয় ও প্রস্তুতি নিয়ে একটি জরুরি বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়।  

ভাইরাস মোকাবিলায় সরকার এরইমধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে এবং আমাদের সবাইকেই সর্তক থাকতে হবে। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তুত রয়েছে। এরইমধ্যে এ বিষয়ে একাধিক সভা করা হয়েছে বলেও জানান ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।

সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. জিলন মিঞা সরকার, শিশু অনুষদের ডিন ও সেমিনার সাব কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. চৌধুরী ইয়াকুব জামাল, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রহিম, ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী, অধ্যাপক ডা. শাহিনা তাবাসসুম, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. চন্দন কুমার রায় প্রমুখ।  

সেমিনারে নভেল করোনা ভাইরাসের বিস্তার, রোগটি কীভাবে ছড়ায়, কারা আক্রান্ত হয় এবং ভাইরাসটি কীভাবে রোগ তৈরি করে তা নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মুনীরা জাহান। রোগের লক্ষণ, উপসর্গ, জটিলতা ও চিকিৎসা নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্যক্ষব্যধি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া, প্রতিরোধ, প্রতিকার ও প্রস্তুতি নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. নামজুল হাসান।  

নাজমুল হাসান জানান, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে নিয়মিত হাত পরিষ্কার রাখতে হবে ও সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। মুখ ঢেকে হাঁচি-কাশি দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট অসুস্থ রোগীর সংস্পর্শে থাকা যাবে না। দেশের বাইরে থেকে কেউ এলে দু’সপ্তাহ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়া এবং রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কাঁচাবাজারে গেলে পশু-পাখির মাংস ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে। মাংস ধরলে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। মাংস ধরে হাত না ধুয়ে মুখমণ্ডল স্পর্শ করা যাবে না। মাংস ও ডিম ভালো করে সেদ্ধ ও রান্না করে খেতে হবে। পোষ্য প্রাণীদের সঙ্গে থাকার ক্ষেত্রে সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে।  

প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেশের বাইরে থেকে আসা মানুষদের থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে শরীরের জ্বর আছে কিনা সেই তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) পর্যন্ত আড়াই হাজার জনেরও বেশির তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়েছে। জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে দুটি আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে।  

রোগের লক্ষণ, উপসর্গ, জটিলতা ও চিকিৎসা নিয়ে বক্ষব্যাধি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ জানান, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই রোগের লক্ষণের মধ্যে রয়েছে জ্বর, সর্দি, হাঁচি-কাশি, শরীর ব্যথা, দুর্বলতা, ডায়রিয়া ইত্যাদি। এসব লক্ষণ দেখা দিলে সবাইকেই অধিক সতর্ক হতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এই রোগে নিউমোনিয়া হয়ে ফুসফুস অকেজো হয়ে যায় এবং পরে কিডনি, হার্ট ও লিভার অকেজো হয়ে যায় এবং এতে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকলেও জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। তবে রোগীকে অবশ্যই আইসোলেটেড থাকতে হবে। এছাড়া তরল ও পুষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২০
এমএএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।