ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

নিউমোনিয়া চিকিৎসায় ডে-কেয়ার ব্যবস্থা, ব্যয় কমে অর্ধেক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১৯
নিউমোনিয়া চিকিৎসায় ডে-কেয়ার ব্যবস্থা, ব্যয় কমে অর্ধেক নিউমোনিয়ার চিকিৎসা গবেষণা বিষয়ে সেমিনার। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: শিশুদের তীব্র নিউমোনিয়া চিকিৎসায় ডে-কেয়ার ব্যবস্থাপনা কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এতে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজনীয়তা কমেছে, পাশাপাশি ব্যয় নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে।

রোববার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মহাখালীতে আইসিডিডিআর,বি সাসাকাওয়া মিলনায়তনে নিউমোনিয়ার চিকিৎসা গবেষণার ফলাফলের ওপর এক সেমিনারে এতথ্য জানান বিজ্ঞানীরা।

তারা জানান, এই মডেলটি নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি করে অক্সিজেন থেরাপি, ফ্লুইড, পুষ্টি ব্যবস্থাপনা ও অ্যান্টিবায়োটিকের সমন্বয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার মতোই কার্যকর, নিরাপদ ও ব্যয় সাশ্রয়ী।

সেমিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশে ২০১৮ সালে প্রতি ঘণ্টায় একজনেরও বেশি শিশু নিউমোনিয়ায় মারা গেছে। এই হিসাবে এক বছরে ১২ হাজারেরও বেশি শিশুর মৃত্যু হয়। পাশাপাশি শিশুদের অপুষ্টি একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হওয়ায় নিউমোনিয়া চিকিৎসায় আশানুরূপ ফলাফল না পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে।

সেমিনারে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ডে-কেয়ার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শিশুদের তীব্র নিউমোনিয়ার একটি উদ্ভাবনমূলক চিকিৎসা পদ্ধতি-সংক্রান্ত গবেষণালব্ধ ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। এসময় জানানো হয়, গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন বাংলাদেশের বিদ্যমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও অন্য উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে ডে-কেয়ার ধারণাভিত্তিক নিউমোনিয়া ব্যবস্থাপনার এই পদ্ধতিটি বেশ সম্ভাবনাময়।  

হাসপাতালে ভর্তি একটি অনুমোদিত চিকিৎসা ব্যবস্থা হলেও বেশিরভাগ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে সাধারণত তীব্র নিউমোনিয়া বা অপুষ্টিতে আক্রান্ত সব শিশুর জন্য যথেষ্ট সংখ্যক শয্যা ও হাসপাতাল থাকে না। এছাড়া মায়েদের অন্য শিশুর যত্ন ও সাংসারিক কাজের দায়িত্ব থাকায় তারা অনেক সময় অসুস্থ শিশুর ঠিকমতো দেখভাল করতে পারেন না। হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে মধ্যে রোগীর পরিবহন ব্যয়ও বড় সীমাবদ্ধতা হিসেবে কাজ করে। একারণে যাদের হাসপাতালে ভর্তি করা সম্ভব হয় না, তাদের নিয়ে ডে-কেয়ার মডারেটের মতো বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. হালিদা আক্তার বলেন, গবেষণা ফলাফলে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে উঠে এসেছে, তীব্র নিউমোনিয়া আক্রান্ত প্রায় ৯০ শতাংশ শিশুর চিকিৎসা ডে-কেয়ার ক্লিনিকে নিরাপদভাবে করা সম্ভব।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ এই গবেষণার প্রশংসা করে বলেন, তীব্র নিউমোনিয়া চিকিৎসায় ডে-কেয়ার মডেল একটি ভালো উদ্যোগ। ভবিষ্যতে দেশব্যাপী এই মডেলটির প্রসারে আমরা শহর ও গ্রামাঞ্চলে এর পাইলট প্রকল্পের সম্ভাব্যতা খুঁজে দেখবো।

আইসিডিডিআর,বির এই গবেষণায় সহায়তা করেছে সুইজারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ব্যাসেল ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকি।

সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পেডিয়াট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি অধ্যাপক ড. মঞ্জুর হোসেন, সুইজারল্যান্ডের ইউনিসেফ ফাউন্ডেশনের বোর্ডের সদস্য ড. ড্যানিয়েল ফ্রে, আইসিডিডিআর,বির ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, অস্ট্রেলিয়ার ডিকিন ইউনিভার্সিটির স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের পিএইচডি শিক্ষার্থী ডা. মারুফা সুলতানা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সাবেক পরিচালক ড. খালেদা ইসলাম প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৯
পিএস/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।