ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

খুমেকের ডেঙ্গু ওয়ার্ড থেকে ২ জন আটক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৯
খুমেকের ডেঙ্গু ওয়ার্ড থেকে ২ জন আটক

খুলনা: খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা মো. রেজাউল হোসেনের (৩৬) রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষার জন্য চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছিলেন।

হাসপাতালে এ পরীক্ষাটি হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আশিষ রায় নামে একজনকে ফোন দিয়ে রক্তের স্যাম্পল দেওয়া হয়। সেটি ওই আশিষ রায়ই নিয়ে যান নগরীর বাবুখান রোডের সন্ধানী ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।

যথারীতি পরীক্ষাটি করিয়ে আনার পর রক্তের প্লাটিলেট দেখা যায় মাত্র ১৭ হাজারে নেমে গেছে। অথচ একই পরীক্ষাটি একই দিন খুমেক হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ থেকে করার পর দেখা যায় রক্তের প্লাটিলেট এক লাখ ৪০ হাজার। এতেই সন্দেহ হয় রোগীর লোকদের। পর পর আরও কয়েক রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় রিপোর্টে ব্যাপক গড়মিল।

এরপর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সন্ধানী ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ওই স্যাম্পল কালেক্টর আশিষ রায় হাসপাতালে গেলে রোগীর লোকেরা তাকে আটক করে পুলিশে দেয়। আবার আশিষ রায়কে ছাড়াতে গিয়ে আরও একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয় পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে ওই ব্যক্তির নাম জানা যায়নি।

এভাবেই ডেঙ্গু রোগীদের নিয়ে হাসপাতালের কিছু চিকিৎসক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বাণিজ্যের চিত্র ফুটে ওঠে।

খুমেক হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ভর্তি থাকা বাদশা, হাবিবুর রহমান, তামান্নাসহ একাধিক রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এক এক ধরনের রিপোর্ট। অর্থাৎ একই রোগীর একাধিক প্রতিষ্ঠানের একাধিক রিপোর্ট। আবার প্রায় প্রতিটি রোগীর পরীক্ষাই করানো হয় সন্ধানী ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে।

এ প্রসঙ্গে রোগীর ভিজিটররা বলেন, চিকিৎসক যখন পরীক্ষার পরামর্শ দেন তখন একটি চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে বলা হয়, এই নম্বরে ফোন দিয়ে যোগাযোগ করলেই পরীক্ষাগুলো হয়ে যাবে। তখন চিরকুটের ওই নম্বরে ফোন দেওয়া হলে সন্ধানী ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্যাম্পল কালেক্টর অশেষ রায় এসে রক্তের স্যাম্পল কালেকশন করে নিয়ে যান। এভাবেই সরকারি হাসপাতালের রোগীর পরীক্ষা বাইরে থেকে করানো হচ্ছে।

যদিও রাতে খুমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. এসএম কামাল বলেন, হাসপাতালে অনেক রি-এজেন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। সুতরাং এখন বাইরে থেকে পরীক্ষা করানোর কোনো কথা নয়। তাছাড়া সন্ধানীর কথিত স্যাম্পল কালেক্টর আটকের বিষয়টি তিনি জানেন না বলেও উল্লেখ করেন।

মেডিসিন ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. পার্থ প্রতীম সাহাও ওই স্যাম্পল কালেক্টর আটকের কথা জানেন না বলে উল্লেখ করে বলেন, রোগী কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাবেন সেটি তার ব্যাপার। এখানে চিকিৎসকদের কোনো পরামর্শ থাকে না।

সন্ধানী ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক পক্ষের পক্ষ থেকে গৌতম বলেন, তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট ঠিকই আছে। এমনকি যিনি পরীক্ষার রিপোর্টে সই করেছেন সেই ডা. সুকুমার সাহা বলেছেন সবগুলো সইই তার। তবে অনেক সই করতে হয় বলে অনেক সময় সইয়ে গড়মিল হতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

কেএমপির সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মমতাজুল হক বলেন, দু’ধরনের রিপোর্টের কারণে রোগীর লোকদের সন্দেহ হওয়ায় জটলা থেকে আশিষ রায়সহ দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এখন কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রোগীর কয়েকজন ভিজিটরও কাগজপত্র নিয়ে রাতে থানায় গিয়েছেন বলেও ওসি যোগ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৪২১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৯
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।