ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

লালমনিরহাটে ভাইরাস জ্বরের প্রাদুর্ভাব 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৫ ঘণ্টা, জুন ২, ২০১৯
লালমনিরহাটে ভাইরাস জ্বরের প্রাদুর্ভাব  জ্বরে আক্রান্ত শিশুকে দেখছেন চিকিৎসক। ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: আবহাওয়ার পরিবর্তন জনিত কারণে লালমনিরহাটে বেড়েছে ভাইরাস জ্বরের প্রাদুর্ভাব। ঘরে ঘরে আক্রান্ত হচ্ছে সবাই। তবে এর মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যাই বেশি।

জানা গেছে, গত ১৫ দিন ভ্যাপ্সা গরম শেষে গত সপ্তাহ থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, দমকা বাতাসে ঠাণ্ডা অনুভূত হওয়ায় অনেকেই জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা।

এ বৈরী আবহাওয়া প্রাণী দেহে অসহনীয় হয়ে পড়ায় নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হলে ওষুধ সেবন করেও তিন দিনের আগে আরগ্য লাভ হচ্ছে না। আক্রান্তদের নুন্যতম ৩-৫ দিন ভুগতে হচ্ছে। কোনো কোনো পরিবারে সবসদস্য এক সঙ্গে জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় সেবা করার লোকও পাচ্ছেন না তারা।  

আদিতমারী উপজেলার নামুড়ি গ্রামের কলেজছাত্রী ফেরদৌসী বেগম বাংলানিউজকে জানান, তাদের পরিবারে ৫ সদস্যের সবাই একসঙ্গে জ্বর ও পাতলা পায়খানায় ভুগছেন দুই দিন ধরে। ওষুধ সেবন করেও কোনো সুফল পাচ্ছেন না। চিকিৎসকরা জানান ভাইরাস জ্বর নুন্যতম ৪/৫ দিন লাগবে সেরে উঠতে।  

লালমনিরহাট পৌরসভার বাসিন্দা সরকারি গাড়ি চালক আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, টানা তিন দিন ধরে তিনিসহ তার পরিবারে তিনজন জ্বরে ভুগছেন। মাথাসহ পুরো শরীর ব্যথা করে এবং শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। সঙ্গে থাকে সর্দি ও কাশি। শুধু তার পরিবারই নয়। তাদের পাড়ার অনেক বাসায় জ্বরের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে।  

কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার এলাকার নিয়াজ আহমেদ সিপন বাংলানিউজকে জানান, গত তিন দিন আগে রাতে নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে শরীরের ব্যথা অনুভব করেন। পরদিন শুরু হয় সর্দি জ্বর। প্যারাসিটামলে কাজ না হওয়ায় পল্লী চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হলে দেখতে পান ১০৬.২ ডিগ্রি জ্বরে উঠেছে তার। এর তিন দিন পরে কিছুটা সুস্থতা অনুভব করলে বাড়ির আরো দুইজন সদস্য জ্বরে আক্রান্ত হন। ওষুধ সেবনেও কোনো কাজ হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।  

ঘরে ঘরে এ ভাইরাস জ্বরে আক্রান্তরা প্রায় সবাই স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক সেবনও বেড়েছে। যারা ৭-১০ দিনের আক্রান্ত তারা ছুটছেন জেলার হাসপাতাল বা ক্লিনিকে। তবে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকদের মতে এটি অাবহাওয়া পরিবর্তন জনিত ভাইরাস জ্বর। আতঙ্কিত না হয়ে আক্রান্তদের আলাদা বিছানায় রেখে সেবা করতে হবে। এ ভাইরাসটি তাপমাত্র বেড়ে যাওয়া এবং হঠাৎ তা নেমে যাওয়ার কারণেও হয়ে থাকে। যা হাঁচি, কাশি বা লালার মাধ্যমে অন্যদেহে ছড়িয়ে পড়ে। তাই মাক্স ব্যবহারের পরামর্শ চিকিৎসকদের । ওষুধ সেবন না করেও ৩/৪ দিন পরেই শরীরের তাপমাত্রা কমে গিয়ে স্বাভাবিক হবে। আক্রান্তের ৩/৪ দিন আগে এন্টিবায়োটিক সেবন না করাই উত্তম বলেও মন্তব্য করেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পল্লী চিকিৎসক ও ফার্মেসি মালিক বাংলানিউজকে জানান, সারাদিন যত রোগী দেখেছেন তার ৭০ ভাগই ভাইরাস জ্বর ও পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই প্যারাসিটামল গ্রুপের ওষুধ নিচ্ছেন। কয়েকদিন ধরে এই গ্রুপের ওষুধ বিক্রিও বেড়েছে বলে জানান তিনি।  

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. কাসেম আলী বাংলানিউজকে জানান, তাপমাত্র বেড়ে যাওয়ায় এবং হঠাৎ বৃষ্টির কারণে জেলায় ভাইরাস জ্বরের রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি ছোঁয়াছে রোগ। রোগীকে সেবাদানকারী ব্যক্তিকে অবশ্যই মাক্স ব্যবহার করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। অন্যথায় ছড়িয়ে পড়বে। তিনি নিজেও মাক্স ব্যবহার করে রোগী দেখছেন। আক্রান্তের ৩/৪ দিন এন্টিবায়োটিক সেবন না করে পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। তবে আক্রান্তের ৫ দিন অতিবাহিত হলে নিকটস্থ কমিউনিটি ক্লিনিক বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।