ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালকের পদত্যাগের পর ইন্টার্নদের কর্মবিরতি স্থগিত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪
শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালকের পদত্যাগের পর ইন্টার্নদের কর্মবিরতি স্থগিত

বরিশাল: ইন্টার্ন চিকিৎসকদের আন্দোলনের মুখে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম পদত্যাগ করেছেন।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় নিজ কার্যালয়ে পদত্যাগ পত্রে সই করেন তিনি।

 

এর পরপরই তাকে কলেজ অধ্যক্ষসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ব্যারিকেট দিয়ে নিরাপদে হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবন থেকে বের করে নিয়ে যান। আর দুপুর ১টার দিকে সাত দিনের জন্য কর্মবিরতি স্থগিত করার ঘোষণা দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।  

ইন্টার্ন চিকিৎসক মাহির রহমান জানান, শেবাচিম হাসপাতাল দক্ষিণাঞ্চলের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের চিকিৎসার স্থান। এখানে গত দু-দিন ধরেই রোগীরা ভোগান্তিতে আছেন সে চিন্তা করে আমরা সাত দিনের জন্য আমাদের কর্মবিরতি স্থগিত করছি শুধুমাত্র রোগীদের কথা চিন্তা করে। কারণ দিন শেষে আমরা ডাক্তার আমাদের মা-বাবাও এখানে চিকিৎসার জন্য আসতে পারে। যদিও আমাদের চার দফা দাবি এখনও মানা হয়নি তার পরেও আমরা সাত দিনের জন্য কর্মবিরতি স্থগিত করছি। এরই মধ্যে আমরা আমাদের চিকিৎসা সেবা পুরোদমে চালু করে দিয়েছি। আমাদের চার দফা দাবির সঙ্গে আরও একটি দাবি আমরা যুক্ত করছি সেটা হচ্ছে যেহেতু এখন পরিচালক নাই মেডিকেল অভিভাবক শূন্য তাই একজন দক্ষ পরিচালক দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানাচ্ছি। আমাদের যে দাবিগুলো রয়েছে সেগুলো যদি আগামী সাত দিনের মধ্যে মানা না হয় তাহলে কঠোর কর্মসূচিতে যাবো আমরা। দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আমরা যে সাত দিন এখন ডিউটি করবো এ জন্য আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। আমরা জেলা প্রশাসক, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি যাতে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।  

এদিকে পদত্যাগকৃত পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি বরিশালের সন্তান। বরিশালের প্রতি, এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমার আবেগ আছে, ভালোবাসা আছে। তবে এখন থেকে পরিচালকের পদে আমি আর থাকবো না।  

হাসপাতালের উপ-পরিচালক এস এম মনিরুজ্জামান শাহীন পরিচালকের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গত ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় হাসপাতালের শিশু মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক শিশুর মৃত্যু হয়। তখন শিশুর স্বজনরা এক চিকিৎসককে শারীরিকভাবে আঘাত করেছে। অন্যান্য সব চিকিৎসককে হুমকি দিয়েছে। যার কারণে শনিবার সকাল থেকে ইন্টার্নি চিকিৎসকরা ধর্মঘটের ডাক দেন। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার না করায় আজ বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা করা হয়। সেখানে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা পরিচালকের পদত্যাগ দাবি করেন। চিকিৎসকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পরিচালক পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ পত্র পেয়েছি। সেটা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় যে সিদ্বান্ত দেবে সেটা করা হবে।  

এর আগে সকাল ১০টার দিকে আন্দোলনরত চিকিৎসকরা প্রথমে হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এরপর তারা পরিচালকের কার্যালয় ঘেরাও করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন।  

এর আগে সকালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন বিক্ষুব্ধরা। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনসহ বিভাগীয় কমিশনার, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতনরা বৈঠকে বসেন।  

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, গত ৫ আগস্টের পূর্বে ৩ আগস্ট পরিচালক সাইফুল ইসলামসহ তার অনুসারীরা স্বৈরাচারের পক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এছাড়াও পরিচালকের নানান দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা তুলে ধরেন। মেডিকেলের সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, টাকা লুটপাট করা, সৎ যোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানাভাবে হয়রানি করাসহ নানা অনিয়ম তুলে ধরেন।  

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, তার বিগত কর্মকাণ্ডের জন্য আগেই তার পদত্যাগ দাবি করা উচিত ছিল। তিনি হাসপাতালের প্রত্যেক ক্ষেত্রেই অনিয়ম ও দুর্নীতি করে মেডিকেলের চিকিৎসা ব্যবস্থা বাণিজ্য নির্ভর করেন। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে।  

এদিকে শনিবার চিকিৎসকদের ওপর রোগীর স্বজনদের হামলার ঘটনায় কর্মবিরতি ও রোববার সকাল থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছিল। ফলে রোগী ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলের পরিচালক পদে বিগত কয়েক বছরে সাধারণত দুই বছর করে দায়িত্বে থাকেন পরিচালকরা। কিন্তু পরিচালক সাইফুল ইসলাম তিন বছর ধরে পরিচালক পদে থেকে বিগত সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পদস্থদের সঙ্গে আঁতাত করে নানান অনিয়ম দুর্নীতি করে আসছিলেন। যার মধ্যে হাসপাতালে রোগী থাকার জায়গা না থাকলেও নিজের ছোট ভাইয়ের চাকরি হওয়ার সুবাদ একটি বেসরকারি ব্যাংকে হাসপাতালের ভেতরে জায়গা দেন পরিচালক। আবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে নিজের ও শ্বশুর বাড়ির এলাকার লোকজনকে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।  

এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও সচিবদের সঙ্গে তার সখ্যতা থাকায় পরিচালকের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এমনকি স্বৈরাচার সরকার পতনের পর পরিচালক সাইফুল ইসলাম বিভিন্নভাবে আঁতাত করে ও বিতর্কিত অনেক নেতাকে উপঢৌকন দিয়ে এতদিন তিনি বহাল তবিয়তে ছিলেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪
এমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।