ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ঢামেক থেকে ফের ‘খোয়া’ গেল নবজাতক, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৮ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২৪
ঢামেক থেকে ফের ‘খোয়া’ গেল নবজাতক, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন বাচ্চা নিয়ে চলে যাচ্ছেন কমলা রঙের ওড়না পরিহিত (লাল চিহ্নিত) নারী। ইনসেটে এক নবজাতক

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় ২১২ নম্বর কক্ষ ‘লেবার ওয়ার্ড’। এর প্রবেশপথে ২৪ ঘণ্টাই নারী ও পুরুষ আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

পুরো হাসপাতালের মধ্যে লেবার ওয়ার্ডেই নিরাপত্তা বেষ্টনী কঠোর। তবু সেখান থেকে নবজাতক চুরি বা খোয়া যাচ্ছে। সবশেষ এমন একটি ঘটনা ঘটলো মঙ্গলবার (৪ জুন) বিকেলে। ওই ওয়ার্ডে প্রবেশের আগে বারান্দা থেকে এক নবজাতককে তার স্বজনদের কাছ থেকে কৌশলে নিয়ে পালিয়েছেন বোরখা পরা নারী। বারবার এমন ঘটনায় লেবার ওয়ার্ডসহ পুরো হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

মঙ্গলবার যে দম্পতির নবজাতক খোয়া গেছে, তাদের নাম শরিফুল ইসলাম ও সুখী বেগম। তারা ঢাকার ধামরাই উপজেলার কালামপুর এলাকার ভাড়াটিয়া। জানা যায়, গত সোমবার (৩ জুন) রাতে সুখীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার (৪ জুন) অস্ত্রোপচারের (সিজার) মাধ্যমে দুই জমজ মেয়ের জন্ম দেন তিনি। তাদের একটি ছেলে সন্তানও আছে। নতুন জন্ম নেওয়া দুই জমজের মধ্যে এক নবজাতকই সন্দেহভাজন সেই নারী নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ শরিফুল-সুখী দম্পতির।

যদিও ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, লেবার ওয়ার্ড থেকে ওই নারী বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় শিশুটির বাবা শরিফুলই ওয়ার্ডের দায়িত্বরত আনসারদের কাছে থাকা রেজিস্ট্রেশন খাতায় সই করেন বলে প্রাথমিক তথ্য মিলছে।

শাহবাগ থানা পুলিশের একটি সূত্রমতে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ২১২ নম্বর লেবার ওয়ার্ডের প্রবেশের বারান্দা থেকে বোরখা পরা এবং কমলা রঙের ওড়না জড়ানো এক নারী একটি নবজাতককে কোলে নিয়ে সবার সামনে দিয়ে চলে গেছেন।  

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জন্মের পরপরই শিশু দুটির দাদি হাসিনা বেগম লেবার ওয়ার্ডের প্রবেশপথের বারান্দায় নবজাতককে কোলে নিয়ে বসেছিলেন। পাশে আরেকজনকে কোলে নিয়ে বসেছিলেন শরিফুল। এমন সময় ওই সন্দেহভাজন নারী এসে তাদের সঙ্গে এসে কথাবার্তা বলতে থাকেন। একপর্যায়ে বাচ্চা কান্না করলে ওই নারী তাদের বলতে থাকেন—মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে, ওয়ার্ডে তো পুরুষ লোক যাওয়া যাবে না। এক পর্যায়ে একটি নবজাতককে কোলে নেন তিনি, আরেকটি সন্তান শরিফুলের কাছেই থাকে। দুজনই চলে যান ওয়ার্ডের সামনে। শরিফুলকে ওয়ার্ডে প্রবেশ করতে না দিলে ওই নারী ওয়ার্ডে ঢুকে একটি নবজাতককে মা সুখী বেগমের কাছে দেন দুধ পান করাতে। এরপর অন্য বাচ্চাকেও শরিফুলের কাছ থেকে নিয়ে সুখীর কাছে দেন দুধ পান করানোর জন্য।

শরিফুল বলেন, আমার বড় সন্তান মেজবার গায়ে জ্বর। এক পর্যায়ে ওই নারী বলেন, মেজবাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। আমি আপনার মায়ের সঙ্গে দুই বাচ্চাকে দেখভাল করছি। আমি ছেলে মেজবাকে নিয়ে লেবার ওয়ার্ডের সামনে থেকে বেরিয়ে যাই। এই সুযোগে বোরখা পরার নারী তার কোলে থাকা বাচ্চাকে নিয়ে বেরিয়ে যান।  

লেবার ওয়ার্ডে লোকজনের আসা-যাওয়ার মধ্যে বোরখা পরা নারীর বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি খেয়াল করতে পারেননি বলে দাবি করেন শরিফুল।

ঢামেক হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, পুরাতন ভবন, নতুন ভবন ও বার্ন ইউনিট মিলিয়ে মোট তিনটি ভবনে দুই হাজার ছয়শ’ শয্যার হাসপাতাল। রোগী থাকে তিন গুণেরও বেশি। পাশাপাশি তাদের স্বজন ও অন্যান্য লোকজনদের ২৪ ঘণ্টাই সমাগম ঘটে হাসপাতালে। পুরো হাসপাতালই সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এগুলো সরাসরি মনিটরিং করা হয় হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষ থেকে। হাসপাতালের প্রতিটি গেটে ২৪ ঘণ্টা আনসার সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন। পুরো হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা থাকে লেবার ওয়ার্ডে।

এছাড়া হাসপাতাল থেকে কোনো নবজাতক ছাড়পত্র পেলেও হাসপাতালের প্রতিটি গেটে সেই ছাড়পত্র আনসার সদস্যদের দেখাতে হয় এবং তাদের কাছে থাকা খাতায় রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। তা না হলে বের হতে দেওয়া হয় না।

এত নিরাপত্তার মধ্যেও মঙ্গলবারের ঘটনাটি ঘটলো। শুধু তাই নয়, এর আগেও দুই-একবার বাচ্চা চুরি বা খোয়া যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে এখান থেকে। বাইরের লোকদের হাসপাতালে প্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না বিধায় প্রায় সময় বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে মালামাল চুরি হয়ে যাচ্ছে। যদিও চোরদের ধরা হচ্ছে। কিন্তু এ ধরনের অপরাধ পুরোপুরি ঠেকানো যাচ্ছে না।

হাসপাতালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা আনসার সদস্যদের প্রধান প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, নবজাতক নিখোঁজের ঘটনায় লেবার ওয়ার্ডের প্রবেশপথে নারী আনসার সদস্যসহ যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের সঙ্গে শাহবাগ থানা পুলিশ কথা বলেছে। আমরাও নিজেদের উদ্যোগে বিষয়গুলি দেখছি।

শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম বলেন, হাসপাতালে নবজাতকের ঘটনার বিস্তারিত জানার জন্য সবার সঙ্গেই মোটামুটি কথা বলা হচ্ছে। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজও দেখা হচ্ছে। বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আসলে ঘটনাটা কী তদন্ত শেষে বলা যাবে।

ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতাল থেকে স্বজনদের সাপোর্ট ছাড়া কেউ বাচ্চা নিয়ে বের হতে পারবে না। কারণ কঠোর নিরাপত্তা থাকে। লেবার ওয়ার্ডে প্রবেশের ক্ষেত্রে তো আরও কঠোর নিরাপত্তা থাকে। আমরা যতটুকু জেনেছি, লেবার ওয়ার্ডের প্রবেশ গেটে আনসারদের কাছে থাকা রেজিস্ট্রেশন খাতায় নবজাতকের বাবা শরিফুল নিজেই সই করে ওই নারীকে ওয়ার্ড থেকে বের করে দেন। যাই হোক, যেকোনো কিছুই হতে পারে। বিষয়গুলি শাহবাগ থানা দেখছে। এছাড়া শরিফুলকে পুলিশ নিয়ে গেছে।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজিরুর রহমান জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ড থেকে বাচ্চা খোয়া যাওয়ার ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।

আরও পড়ুন: ঢামেকে দাদির কোল থেকে নবজাতক ‘নিয়ে গেল’ অপরিচিত নারী

বাংলাদেশ সময়: ২১২১ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০২৪
এজেডএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।