ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধে নোয়াখালীতে বাড়ছে টিকা নেওয়ার হার

ফয়জুল ইসলাম জাহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২২
সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধে নোয়াখালীতে বাড়ছে টিকা নেওয়ার হার ছবি: বাংলানিউজ

নোয়াখালী: অতিমারী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সরকারি কর্মপরিকল্পনা, জেলা কর্মকর্তাদের ব্যাপক তৎপরতা ও মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের সমন্বয়ে নোয়াখালীতে করোনাসহ সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কর্মসূচি বেগবান হচ্ছে। ফলে দিন দিন বাড়ছে টিকা নেওয়ার হার।

প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের দোরগোড়ায় টিকা পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ভ্যাকসিন কার্যক্রমের সুবিধা এখন সব শ্রেণীর মানুষের নাগালে। টিকা নিতে শহরের মানুষের পাশাপাশি এখন গ্রামের মানুষের মধ্যেও বিপুল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।

দুই তিন বছর আগেও সাধারণ মানুষ সচেতনতার অভাবে রোগ জটিল পর্যায়ে পৌঁছানোর পর ডাক্তার ও চিকিৎসার শরণাপন্ন হতেন। সংক্রামক ব্যাধির ক্ষেত্রে এ বিষয়টি ছিল আরও বেশি অবহেলিত। তবে সাম্প্রতিককালে করোনার ভয়াবহতা মানুষকে চিন্তিত করেছে। টিকা পাওয়ার জন্য মানুষের মধ্যে আকুলতা দেখা দিয়েছে। এতে জেলা পর্যায়ে টিকা কার্যক্রমে এসেছে সফলতা।

করোনার কঠিন সময়ে সরকার দেশের কেন্দ্র থেকে প্রান্ত পর্যন্ত সব শ্রেণী পেশার মানুষকে টিকা কার্যক্রমের আওতায় নিতে আসতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। মাঠ পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারিসহ নানা সংস্থার সমন্বয়ে করোনাসহ সকল সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে সরকার। ফলে মানুষও আগ্রহী হচ্ছে টিকা নিতে।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নোয়াখালীতে করোনার টিকা কার্যক্রম শুরু হয়। একই বছর মার্চ মাসে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়।

তবে এর আগে, জেলা সদর ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা টিকা প্রদান কর্মসূচি সফলভাবে এগিয়ে চললেও উপজেলা সদর থেকে দূরবর্তী ইউনিয়ন ও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ আসা যাওয়ার দূরত্ব ও রেজিস্ট্রেশন বিষয়ে ধারণা না থাকার কারণে টিকা নিতে পারেনি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে ও জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখারের তত্ত্বাবধানে প্রচার-প্রচারণাসহ টিকা কার্যক্রম ইউনিয়ন পর্যায়ে শুরু করা হয়।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চার নম্বর আলাইয়ারপুর ইউনিয়নটি উপজেলা পরিষদ থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। প্রত্যন্ত এ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ভ্যাকসিন টিকা কর্মসূচি শুরু হলে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে টিকা নেন। পাশাপাশি অন্যদেরও টিকা নিতে উৎসাহী করেন।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, করোনা প্রতিরোধে জেলার সব উপজেলার সব শ্রেণী-পেশা ও বয়সের ৩৫ লাখ ৭৩ হাজার ৫৩৯ জন করোনার টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১৮ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে ২৭ লাখ ৫২ হাজার ৭১৬ জন, ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থী ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৬০৫ জন এবং ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশু ৪ লাখ ২৩ হাজার ২১৮ জন টিকা নিয়েছেন।

শুরু থেকেই নোয়াখালীতে টিকা নেওয়ার হার ছিল তুলনামূলক বেশি, যা এখন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। জেলায় প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৮৫ শতাংশ, দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৭৩ শতাংশ এবং তৃতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪৯ শতাংশ মানুষ। টিকাদানের সার্বিক কার্যক্রমকে সফল করতে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, জেলা তথ্য অফিস এবং জেলা সিভিল সার্জন অফিসের সমন্বয়ে ১২টি ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয়।

টিকা নেওয়া মানুষজন জানায়, করোনার দুঃসময় তাদের সচেতনতা ও সতর্কতার চোখ খুলে দিয়েছে। আগে তারা অল্প-বিস্তর সংক্রামক ব্যাধি সম্পর্কে জানলেও টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে উদাসীনতা ছিল তাদের। তবে অতিমারী করোনা প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে সাধারণ জনগণের জন্য বিনামূল্যে টিকাদানের উদ্যোগ নেওয়া এবং বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা তাদের উৎসাহিত করেছে ও আগ্রহ সৃষ্টি করেছে টিকা নিতে।

তারা আরও জানায়, আগে করোনাসহ বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধির টিকার বিষয়ে তাদের তেমন ধারণা ছিল না। এখন তারা ইউনিয়ন পরিষদে এসে টিকার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারছেন এবং টিকাদান কর্মসূচি তাদের দোরগোড়ায় চলে আসায় তারা রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে খুব সহজে টিকা নিতে পারছেন। সরকারের এমন সেবামূলক কার্যক্রমে তারা খুশি।

সিভিল সার্জন অফিসের স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তা ডা. সাইফুদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী জানান, বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা ভাসানচর আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আশ্রিত রোহিঙ্গা নাগরিকদেরও আমরা টিকা দিচ্ছি। সেখানে এখন পর্যন্ত মোট ১৩ হাজার ৯৫ জন রোহিঙ্গা নাগরিক টিকা নিয়েছেন। আগ্রহী অন্যদেরও পর্যায়ক্রমে টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে।

এ কর্মকর্তা আরও জানান, করোনা ছাড়াও সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) মাধ্যমে শিশুর জন্মের ২ বছরের মধ্যে যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়া, ধনুষ্টংকার, নিউমোনিয়া, হুপিংকাশি, পেলিও, হেপাটাইটিস বি, হিমো-ইনফুয়েঞ্জা বি, হাম, রুবেলাসহ ১০টি রোগ প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচি চলমান আছে। তবে এতে ইতিবাচক দিক হলো করোনা টিকার সফলতায় এসব টিকার বিষয়েও মানুষ আগের থেকে অনেক বেশি সচেতন হচ্ছেন।

নোয়াখালী বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. আবু রায়হান জানান, বাংলাদেশে করোনা মহামারীতে মারা গেছেন ২৯ হাজার মানুষ। অথচ প্রতি বছর যক্ষ্মা রোগে ৪৪ হাজারের অধিক রোগী মারা যান। ২০৩০ সালের মধ্যে যক্ষ্মায় মৃত্যুর হার শূন্যের কাছাকাছি নামিয়ে আনার লক্ষ্য আছে সরকারের। এ লক্ষ্যে সারাদেশের ন্যায় নোয়াখালীতেও আমরা কাজ করছি। প্রতিমাসে নোয়াখালীতে এক হাজারের অধিক যক্ষ্মা রোগী সেবা নিয়ে থাকেন।

জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতির (নাটাব) নোয়াখালী জেলা সভাপতি কাজী রফিক উল্যাহ জানান, বসন্ত, ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্মা এ রোগগুলো এক সময় মহামারীর মতো ছিল। কিন্তু সরকারের প্রচেষ্টা ও নাটাবের কার্যক্রমের ফলে জেলায় এর প্রাদুর্ভাব অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার জানান, করোনাসহ সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধে একদিকে সরকার যেমন বিশাল কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষ টিকা নিতে ব্যাপক হারে সাড়া দিচ্ছেন। এতে অতিদ্রুত বাংলাদেশে অতিমারী করোনা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, নোয়াখালীতে টিকাদানের সফলতা অভাবনীয়। আমরা আশা করছি করোনার মতো অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২২
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।