ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

গল্প

বড়গল্প/পর্ব-৬

কুঁড়ি থেকে ফুল | যুথিকা বড়ুয়া (পর্ব-৬)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০১৭
কুঁড়ি থেকে ফুল | যুথিকা বড়ুয়া (পর্ব-৬) ছবি: বাংলানিউজ

প্রচণ্ড বৃষ্টির শেষে বেশ মনোরম আবহাওয়া। দিগন্তজুড়ে নীলাভ জোৎস্নার ঢল নেমে শহরের বুক জুড়ে অপরূপভাবে আলোকিত হয়ে আছে চারদিক।

তন্মধ্যে বিজলীর উজ্জ্বল আলোতে গোটা শহরটাই যেন নববধূর মতো সুসজ্জিত হয়ে  আছে। মিহিন দক্ষিণা বাতাস আমোদিত হয়ে আছে রঙবেরঙ-এর ফুলের মধুর সৌরভে।

আপাতদৃষ্টিতে প্রকৃতির বুকে যেন নেমে এসেছে আনন্দোচ্ছলতা। গ্রেট-ইস্টার্ন হোটেলপ্রাঙ্গণে সারি সারি লাক্সারি বাস আর অগণিত বিদেশি পর্যটকদের সমাগম। চলছে অবিশ্রান্ত আনাগোনা।  

ততক্ষণে রোমান্টিক ছায়া পড়ে যায় মহুয়ার চোখেমুখে। উচ্ছ্বাসে ও’ একেবারে উতলা হয়ে ওঠে। স্বভাবসুলভ চপলতায় ওষ্ঠের ফাঁকে খুশী ঝিলিক দিয়ে ওঠে। চোখ মেলে চারিদিকে পর্যবেক্ষণ করতে করতে বলে, -‘বাহ, কি মনোরম পরিবেশ, তাই না নিখিলেশ দা!’

ঘাড় ঘুরিয়ে নিখিলেশ বলল,-‘শুধু তাই নয়, রোমান্টিকও বলতে পারেন। ’

-‘বাব্বা, আপনি তো খুব রসিক মানুষ দেখছি!’

কথাটা শুনে শরীরের সবক’টি ইন্দ্রিয় যেন আরো চাঙ্গা হয়ে উঠল নিখিলেশের। আবেগের প্রবণতায় উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। চোখমুখ থেকে ঝরে পড়ছে উচ্ছ্বাস। একগাল ধোঁয়া ছেড়ে বলে, -‘কেন? আগে কম ছিলাম বুঝি!’

-‘না না, আমি বলছিলাম, আজকের মতো এতোটা ছিলেন না। ’

-‘আপনি জানলেন কী করে? এসব তো আপনার জানার কথা নয়! বলে কোণা চোখে তাকায় নিখিলেশ। নিঃশব্দে হেসে বলল,-‘আজকের মতো মানে! এর আগে আমায় কতবার দেখেছেন, বলুন তো!’

-‘আহা, শুভ্রাদির বিয়েতে বুঝি দেখিনি!’

-‘সেতো কয়েক মুহূর্তমাত্র। একবার দেখেই কি মানুষ চেনা যায়?’

-‘আলবৎ যায়! মানুষ চিনতে অন্তত আমার ভুল হয় না। যদি কেউ ছলনা না করে।

-‘বেশ, তা নাহয় মানলাম। আর আপনি?’

-‘আমি? আমি কি?’ বড় বড় চোখ পাকিয়ে তাকায় মহুয়া।

থমকে দাঁড়ায়  নিখিলেশ। সিগারেটটায় একটা টান দিয়ে বলল, -‘আপনি তো এক্কেবারেই বেরসিক। ’

গাল ফুলিয়ে প্রতিবাদের সুরে মহুয়া বলে -‘হুম্, নিখিলেশ দা, ভালো হবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি!’

নিখিলেশও কম যায় না। ব্যঙ্গ করে বলে, -‘করবেন কি শুনি! পুলিশ ডাকবেন?’

-‘হ্যাঁ, ডাকবোই তো! শুভ্রাদিকে আজই সব বলে দেবো গিয়ে। ’
-‘হো হো করে হেসে ওঠে নিখিলেশ। সহাস্যে বলল, -‘বৌদি বিশ্বাসই করবে না। দুটো নয়, পাঁচটা নয়,  একটা মাত্র দেবর। কত আদরের বলুন তো!’ 

-‘ও, তাই বুঝি!’

-‘ইয়েস ম্যাডাম!’ বুড়ো আঙ্গুলটা দেখিয়ে বলে,-‘হুম্ হু, বৌদিকেও সাইজ করে রেখেছি। কিছু বলার সাহসই হবে না!’ বলে হো হো করে হেসে ওঠে।  

চটে গিয়ে মহুয়া বলল, -‘ও এই কথা! থাকেন বিদেশে। সেখান থেকে শুভ্রাদিকে কন্ট্রোল করেন আপনি! সব আপনার হাতের মুঠোয়! দাঁড়ান, শুভ্রাদিকে এক্ষুণি ফোন করছি। ’ বলে হন্ হন্ করে দ্রুত গতিতে পিছন দিকে হাঁটতে শুরু করে। ওর পিছে পিছে এগিয়ে গিয়ে নিখিলেশ বলল, -‘আরে, আরে যাচ্ছেন কোথায়? দাঁড়ান। কি মুশকিল। রসিকতাও বোঝেন না। আই অ্যাম জাস্ট জোকিং। ’

নিখিলেশের একটা শব্দও শ্রুতিগোচর হোল না মহুয়ার। পিছন দিকে পা বাড়াতেই থমকে দাঁড়ায়। বুক ধড়াস করে ওঠে। ঠোঁট কেঁপে ওঠে। কেঁপে ওঠে সারা শরীর। রুদ্ধ হয়ে যায় কণ্ঠস্বর। -এ কি, ও মাই গড! এ কেমন করে সম্ভব! এ যে স্বপ্নেরও অতীত! অথচ নিতান্ত বাস্তব সত্য। যা ক্ষণপূর্বেও কল্পনা করতে পারেনি। কল্পনা করতে পারেনি, পলকমাত্র দৃষ্টিপাতে ওর কোমল হৃদয়ে এমন কঠোর আঘাত এসে লাগবে। জীবনের এতবড় পরাজয় এভাবে নীরবে নির্বিকারে মেনে নিতে হবে, তা কখনো ভাবতে পারেনি মহুয়া।  

যোগাযোগ

বাংলাদেশ সময়: ১০১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৭
জেএম

** কুঁড়ি থেকে ফুল | যুথিকা বড়ুয়া (পর্ব-১)
** কুঁড়ি থেকে ফুল | যুথিকা বড়ুয়া (পর্ব-২)
** কুঁড়ি থেকে ফুল | যুথিকা বড়ুয়া (পর্ব-৩)
** কুঁড়ি থেকে ফুল | যুথিকা বড়ুয়া (পর্ব-৪)
** কুঁড়ি থেকে ফুল | যুথিকা বড়ুয়া (পর্ব-৫)

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

গল্প এর সর্বশেষ