ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

শ্যামল দই ভাণ্ডারে পাখিদের নেমন্তন্ন খাওয়া!

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৭
শ্যামল দই ভাণ্ডারে পাখিদের নেমন্তন্ন খাওয়া! শালিকদের খাওয়ার অভাবনীয় এ দৃশ্য প্রতিদিন ভোরের। ছবি: বাংলানিউজ

পাবনা থেকে: ভোর ছয়টায় মিষ্টির দোকানটির সামনে জড়ো হয়েছে অসংখ্য শালিক। খুটে খুটে চানাচুর খাচ্ছে তারা! শেষ হয়ে এলে মাঝবয়সী দোকান মালিক ফের খাবার দিচ্ছেন পাখিদের।

হাজারো শালিক পাখির ভোরের নাস্তা খাওয়ার এ দৃশ্যে মূহুর্তেই চোখ ছানাবড়া হয়ে ওঠে। দূর থেকেও শুনতে পাওয়া কিচির-মিচির শব্দে তাদের কোলাহলও অনেক আনন্দদায়ক।

পাবনা শহরের আব্দুল হামিদ রোডের শ্যামল দই ভাণ্ডারের সামনের অভাবনীয় এ দৃশ্য প্রতিদিন ভোরের। বাসস্ট্যান্ডের উত্তরে পাবনা প্রেসক্লাবের বিপরীতে এ আর কর্নার মার্কেটের মিষ্টির দোকানটির মালিক সমীর কুমার ঘোষের এ প্রকৃতি ও পাখিপ্রেমি কাজের খবর এখন ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে।
 
পাখিদের খাওয়া নির্বিঘ্ন করতে ভোরের ওই সময়টাতে মার্কেটের সামনে ও রাস্তার কিছু অংশ লোহার স্ট্যান্ডে ফিতা দিয়ে ঘিরে দেওয়া থাকে।

অতো ভোরেও দোকানটির সামনে জড়ো হয়ে পাখিদের খাওয়ার দৃশ্য মোবাইল ফোনে ক্যামেরাবন্দি করছিলেন বেশ কয়েকজন উৎসুক পথচারী। তারাও জানালেন, শালিকদের ভোরের নেমন্তন্ন খাওয়ানো শ্যামল দই ভাণ্ডারের মালিক সমীর কুমার ঘোষের রয়েছে পাখি ও প্রকৃতির প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা।

পাখিদের নেমন্তন্ন খাওয়ানো সমীর কুমার ঘোষের রয়েছে পাখি ও প্রকৃতির প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা।  ছবি: বাংলানিউজসমীর বাংলানিউজকে বলেন, ‘দোকানের অবশিষ্ট খাবার প্রতিদিন সকালে ফেলে দিলে তা পাখিরা খেয়ে যেতো। বিষয়টি প্রথম দিকে নজরে আসেনি।   ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের কোনো একদিন অবশিষ্ট খাবার না থাকায় দোকানের সামনে কয়েকটি শালিক পাখি এসে চিৎকার-চেচামেচি করে। বিষয়টি মনে দাগ কাটে। দোকানের কিছু চানাচুর পাখিগুলোকে খেতে দেই। তারা খেয়ে-দেয়ে মনের সুখে উড়ে যায়’।

‘খেয়াল করলাম, প্রতিদিন খোলার পর কিছু শালিক পাখি আমার দোকানের দিকে চেয়ে থাকে। চানাচুর খেতে দিলে সেগুলো খেয়ে উড়ে চলে যেতো তারা। ধীরে ধীরে পাখির সংখ্যা বাড়তে লাগলো, বাড়তে লাগলো চানাচুরের পরিমাণও’।

বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে দু'হাজারেরও বেশি শালিক পাখি ভোর ছয়টায় সমীর ঘোষের দোকানে নেমন্তন্ন খেতে আসে। তাদের জন্য প্রতিদিন প্রায় ১৫ কেজি চানাচুর লাগে বলেও জানান তিনি।

সমীর আরও জানান, তার পরিবারের সব সদস্যেরও রয়েছে পাখি ও প্রকৃতির প্রতি অগাধ ভালোবাসা। তিনি না থাকলে দুই ভাই শ্যামল ও আনন্দ পাখিদের খাবার দেন। তারাও না থাকলে দোকানের কর্মচারীরা দেন। কিন্তু নিজ হাতেই পাখিদের খাওয়াতে বেশি পছন্দ করেন তিনি। এজন্য গত পাঁচ বছরে কোথাও গিয়ে শান্তি পাননি। বাড়ির বাইরে অন্য কোথাও একদিন থাকলেই হাঁপিয়ে ওঠেন।

নিজের বাড়িতে ছাদ বাগান তৈরি করেছেন তিনি। বাগানটিতে দেশি প্রজাতির অনেক ফল ও ফুলের গাছ রয়েছে। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কাজেও অংশ নেন বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশনের (বিবিসিএফ) সদস্য সমীর।
 
লোকমুখে খবর পেয়ে তার কাজকর্ম সরেজমিনে দেখে সমীরকে 'বার্ড কনজারভেশন অ্যাওয়ার্ড-২০১৬' দিয়েছে রাজশাহী বন বিভাগ। তার কাজ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকা ও টেলিভিশন এখন নিয়মিত সংবাদ প্রকাশ-প্রচার করে থাকে।

শালিকদের খাওয়াতে প্রতিদিন প্রায় ১৫ কেজি চানাচুর লাগে।  ছবি: বাংলানিউজ তবে কারো স্বীকৃতি, কোনো পুরস্কার বা প্রশংসা পেতে নয়। মনের আনন্দে পাখি ও প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকেই এসব কাজ করেন বলে জানান সমীর।

অথচ দারিদ্র্যের কারণে পঞ্চম শ্রেণির বেশি এগোয়নি তার লেখাপড়া। শৈশবেই পৈত্রিক মিষ্টির দোকানে এসে বসেন। তিন মেয়ে ও এক ছেলের বাবা তিনি।

তার দেখাদেখি শহরের অনেকেই এখন নিয়মিত পাখিদের খাবার দেন, এতে আনন্দ পান সমীর। পাখি ও প্রকৃতি রক্ষায় সবাই সচেতন হবেন, এটিই কামনা করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৭
এমআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।