ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

চৈত্রের ঝকঝকে আকাশে রঙিন ঘুড়ি

আতাউর রহমান রাইহান, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৫
চৈত্রের ঝকঝকে আকাশে রঙিন ঘুড়ি

চৈত্রের শেষ দিনের ঢাকার আকাশটা ছিল ঝকঝকে। প্রখর তেজ ছিল সূর্যের।

শিল্পকলার পশ্চিম গ্যালারিতে এই ঝকঝকে আকাশে উড়ছিল চিল, বাঘসহ আরও কিছু প্রাণী। চিল আকাশে উড়ে এটা সবারই জানা কথা, তাই বলেও সুন্দরবনের বাঘকেও কি উড়তে হবে? দেখতে আসলে চিল ও বাঘের মতো হলেও এগুলো ছিল ঘুড়ি।

চৈত্র সংক্রান্তি ১৪২১ ও নববর্ষ ১৪২২ উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় শিল্পকলা একাডেমিতে সোমবার (১৩ এপ্রিল) আয়োজন করা হয়ে ঘুড়ি উৎসবের। বিকেল সাড়ে ৪টায় এই উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

উৎসব উপভোগ করে তিনি বলেন, গ্রামের মানুষ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করে আসছে চৈত্র সংক্রান্তি। যেটা আমরা এখন ভুলতে বসেছি। এটি আমাদের সংস্কৃতির একটি মৌলিক উৎসব।

শৈশবের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমি গ্রামগঞ্জের মানুষ। ছোটবেলায় আমি ঘুড়ি উড়িয়েছি। আমার বাবার ঘুড়ি ওড়ানোর শখ ছিল। নিজের হাতে তিনি ঘুড়ি বানাতেন। আমরা বাঁশ দিয়ে শলাকা বানিয়ে, মাঞ্জা তৈরি করে তাকে সাহায্য করতাম।

শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্রে ঘুড়ি প্রদর্শন করা হয়। একাডেমির লাইট ডিজাইনার এরশাদ বলেন, বিভিন্ন রঙ ও ডিজাইনের প্রায় আটশ' ঘুড়ি প্রদর্শন করা হয়েছে। বাঁশের শলাকা, কাগজ ও সুতা দিয়ে বানানো হয়েছে এসব ঘুড়ি। প্রজাপতি, বাঘ, পরী, মাছ, গোল্ডফিশ, অক্টোপাশ, ড্রাগনসহ বাহারি ডিজাইনের ঘুড়ি ছিল প্রদর্শনীতে।

প্রদর্শনীতে সহ-আয়োজক ছিল বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশন। সংগঠনের যুগ্ম-সম্পাদক আল মামুন মৃধা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাঙালি সংস্কৃতির এই ঐতিহ্যবাহী উৎসবকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প করে শিশুদের ঘুড়ি বানানো ও ওড়ানো শিখাই। যেন এরা ঘুড়ির সঙ্গে পরিচিত হতে পারে। খেলাধুলার এই উপাদানটি যেন হারিয়ে না যায়, আমরা কেবল সেই চেষ্টা করছি।

শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বাংলানিউজকে বলেন, ঘুড়ি আসলে আমাদের সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়া একটি আচার অনুষ্ঠান। গ্রামেগঞ্জে একসময় ব্যাপকভাবে এ উৎসব উদযাপন করা হতো। এ ধরনের অনুষ্ঠান আমরা কেবল ঢাকায় করছি না, প্রতিটি জেলা উপজেলায় করার চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, আজকের দিনে আমরা অতীতের সব ভুলত্রুটি ও আবর্জনা দূরে ঠেলে দিয়ে নতুনকে বরণ করে নিতে চাই। আমরা এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি একক সংস্কৃতির প্রভাবকেও রুখতে চাই।

ঘুড়ি প্রদর্শনী ঘুরে ঘুরে দেখছিল পিদম থিয়েটারের শিশু অভিনেতা শাহেদ (১২)। শাহেদ জানায়, ঘুড়ি উৎসবে অংশ নিতে সে বন্ধুদের সঙ্গে এসেছে। এ অনুষ্ঠান তার খুব ভাল লেগেছে।

মোহাম্মদপুর গ্যারেজে কাজ করে শিশুশ্রমিক শাহিন। সেও এসেছে ঘুড়ি উৎসব অংশ নিতে। তিন কোনা একটি ঘুড়ি হাতে পেয়ে শাহিন জানায়, কখনো সে ঘুড়ি ওড়াতে পারেনি। তবে আজ  এ উৎসবে অংশ নিতে পেরে তার ভাল লেগেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৫
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।