ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

লোক ঐতিহ্যের দিক দিগন্ত-১

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৫
লোক ঐতিহ্যের দিক দিগন্ত-১

ঢাকা: বাংলাদেশের ঐতিহ্যের শেকড় হলো গ্রাম। গ্রামীণ জীবণপ্রণালী, শস্য উৎপাদন, যানবাহন, যন্ত্রপাতি, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যদ্রব্য, ধর্মীয় বিশ্বাস, চিত্তবিনোদন ইত্যাদির সরল, প্রাণবন্ত ও প্রাকৃতিক রূপ আমাদের লোকজ ঐতিহ্যের মৌলিক বৈশিষ্ট্য।



তবে সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশ বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা-দীক্ষা, ব্যবসায়, কর্ম পরিসর, পোশাক-পরিচ্ছদ, আহার, উৎসব ও  যাতায়াতের মাধ্যমগুলোর দিক থেকে হয়ে উঠছে আরও আধুনিক ও উন্নত। এটা অবশ্যই ভালো দিক। তবে নগরায়নের ফলে আমাদের স্বকীয় লোক সংস্কৃতিও প্রভাবিত হচ্ছে নগর সংস্কৃতির আলোক ছটায়।

এই বিচিত্র, গতিশীল ও ঝাঁ চকচকে নগরায়নের প্রভাবে কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতিনির্ভর বাংলার প্রাচীন সব লোক ঐতিহ্য। সেসব মণি-মাণিক্য নিয়েই এবারের আয়োজন।

নকশিকাঁথা

পল্লীশিল্প বলতেই সবার আগে মনে পড়ে নকশিকাঁথা। যুগ যুগ ধরে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে তৈরি হচ্ছে এটি। বাংলাদেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী নকশিকাঁথা এখন স্থান করে নিয়েছে বিশ্বের দরবারে। নকশিকাঁথা শুধু শিল্পই নয় বরং এটি গ্রামের নানি-দাদি, মা-কাকি ও বোনদের গল্পের ঝুড়িও বটে। নকশিকাঁথার বুক জুড়ে বেঁচে রয়েছে শতবর্ষের গ্রামবাংলার নানা গল্প-কাহিনী।  

শখের হাঁড়ি

শখের হাঁড়ি বাংলার প্রাচীনতম লোকশিল্পের মধ্যে অন্যতম। রাজশাহীর বাঁয়া, বসন্তপুর ও নবাবগঞ্জের বারোঘরিয়া এবং নওগাঁর বাঙ্গাল পাড়ার শখের হাঁড়ি বেশ ঐতিহ্যবাহী। তবে দু’টি অঞ্চলের শখের হাঁড়ির শিল্পকৌশল ভিন্ন। রাজশাহী ও নবাবগঞ্জের শখের হাঁড়ি হলুদ রঙের। এতে লাল, নীল, সবুজ ও কালো রঙের মাছ, পাখি ও অর্ধস্ফুট পদ্ম এবং খড়কুটা আঁকা হয়। আবার নওগাঁর লাল শখের হাঁড়িতে সাদা-কালো ও হলুদ রঙের মাছ, চিরুনি, পাখি ও পদ্ম আঁকা থাকে। শখের হাঁড়িচিত্রের সঙ্গে রয়েছে সনাতন ধর্মের সম্পৃক্ততা। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম সন্তান প্রসবের পর বাবার বাড়ি থেকে বিদায় নেওয়ার সময় মেয়েকে শখের হাঁড়ি  দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।

পুতুল

একসময় গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে তৈরি হতো বিভিন্ন রকম পুতুল। সেসময় গ্রামের শিশুরা হাতে তৈরি মাটির টেপা পুতুল, কাপড়ের পুতুল, কাঠ, পাট ও শোলার তৈরি বিভিন্ন পুতুল দিয়েই খেলতো। যা বরাবরই আমাদের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।

তাঁত

আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে তুলা জন্মে। দেশজ জামদানি ছাড়াও খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে ঢাকার মসলিন রোমে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। সেসময় এখানকার তাঁতিরা বিভিন্ন ধরনের মসলিন তৈরি করতেন। এগুলোর মধ্যে তানজেব, সারবন্দ, বাদান, খোশ, এলেবেলে, তারাঙ্গম, কুমিশ, তূর্য, নয়নসুখ, মলমল, জামদানি ও আদ্দি অন্যতম। মসলিন ছাড়াও বাংলাদেশে অন্যান্য মিহি সুতার কাপড় প্রস্তুত হয়। এগুলোর মধ্যে শবনম ও আবে রাওয়াঁ উল্লেখযোগ্য।

পাটজাত পণ্য

বাংলাদেশের লোক ঐতিহ্যের মধ্যে পাটশিল্প অন্যতম। পাট দিয়ে বিভিন্ন রকমের সিকা, শতরঞ্জি, কার্পেট, সৌখিন হ্যান্ডব্যাগ, থলে ইত্যাদি তৈরি হয়। পাটের তৈরি নকশি শিকা আন্তর্জাতিক বাজারে সৌখিন পণ্যরূপে সমাদর পাচ্ছে।

নকশি পাখা

নকশি পাখার মূল উপকরণ সুতা, বাঁশ, বেত, খেজুরপাতা, শোলা, তালপাতা ও শণ। আগে এদেশে ময়ূরের পালক ও চন্দন কাঠের পাখাও তৈরি হতো। নকশা অনুযায়ী এসব পাখার নামও রয়েছে। যেমন: শঙ্খলতা, গুয়াপাতা, পালংপোষ, কাঞ্চনমালা, ছিটাফুল, তারাফুল, মনবিলাসী, মনবাহার, বাঘবন্দি, ষোলকুড়ির ঘর, মনসুন্দরী,  সাগরদীঘি ইত্যাদি।

শীতলপাটি

বাঙালি অতিথিপরায়ণ জাতি। আগে বাড়িতে নতুন অতিথি এলে শীতলপাটি বিছিয়ে দেওয়ার নিয়ম ছিল। বেত দিয়ে তৈরি হয় শীতলপাটি। নকশা করা শীতলপাটিকে নকশিপাটিও বলে। সিলেট এ পাটির জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও বরিশাল, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা এবং লক্ষ্মীপুরও শীতলপাটি তৈরিতে বিখ্যাত।

বাঁশ ও বেত

কুমিল্লা, সিলেট, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী এলাকায় বাঁশ এবং বেত দিয়ে বেড়া, চাটাই, মাছধরার ফাঁদ, হাতপাখা, মোড়া, ফুলদানি, ছাইদানি ইত্যাদি তৈরি হয়। যা আদিকাল থেকে সমাদৃত হয়ে আসছে।  

কাঁসা ও পিতল

কাঁসা ও পিতলের তৈজসপত্র ও বিভিন্ন সামগ্রী এ দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ঢাকার ধামরাই, সাভার, নবাবগঞ্জ, জামালপুরের ইসলামপুর, রংপুর, টাঙ্গাইল ও শরিয়তপুরে বংশ পরম্পরায় তৈরি হয়ে আসছে এসব জিনিস।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৫
এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।