ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

নিশ্চিত মৃত্যু থেকে বাঁচালো পোষা কুকুর!

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৭ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৫
নিশ্চিত মৃত্যু থেকে বাঁচালো পোষা কুকুর!

ঢাকা: প্রভুভক্ত প্রাণী কুকুর। ভালোবাসার যোগ্য মর্যাদা দিতে সে জানে খুব ভালোভাবেই।

শুধু কি পোষা প্রাণীর জন্যই মানুষের অগাধ মমতা! না, পোষা প্রাণীরাও তাদের প্রভুদের প্রতি লালন করে গভীর ভালোবাসা। যার প্রমাণ তারা সবসময়ই দিয়ে আসছে।

যেকোনো বিপদ-আপদ, এমনকি মৃত্যুর দ্বার থেকেও প্রিয় প্রভুকে ফিরিয়ে আনার ঘটনা কম নেই। এবারও ঠিক তাই।

ইংল্যান্ডের ইল্কস্টনের জোয়ানা মেলর (২৪) একজন হৃদরোগী। চলতি বছরের ০২ জানুয়ারি ঘুমের মধ্যেই তার হার্ট অ্যাটাক করে বসলো। নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হওয়ার জোগাড়। তবে রূপ বিশেষজ্ঞ জোয়ানার পোষা ল্যাবরাডর কুকুর লিও খেয়াল করলো ব্যাপারটা। সে  বুঝতে পারছিল, জোয়ানা ঠিক নেই। কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। যেই বোঝা সেই কাজ! ঘেউ ঘেউ শব্দে ঘুম ভাঙালো জোয়ানার বন্ধু অ্যান্ড্রু রেইমেন্টের (২৭)। অ্যান্ড্রু দ্রুত ৯৯৯ (জরুরি বিভাগ) নম্বরে ফোন করলেন।  



অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত অ্যান্ড্রু সিপিআর অর্থাৎ কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন (হৃদরোগীদের স্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার প্রক্রিয়া) পদ্ধতিতে জোয়ানার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা চালিয়ে গেলেন।

পরে চিকিৎসকরা জানান, অ্যান্ড্রু তাকে পুনরুজ্জীবিত করার আগে জোয়ানার হৃৎপিণ্ডের ক্রিয়া ৩০ মিনিটের মতো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

ডাক্তারি পরীক্ষার পর জোয়ানার শরীরে উল্ফ পারকিনসন হোয়াইটের লক্ষ্মণ ধরা পড়ে। এর ফলে হৃৎপিণ্ডের অস্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ দেখা দেয় ও বুক ধড়ফড় করে। তবে চিকিৎসার পর জোয়ানা বর্তমানে সম্পূর্ণ সুস্থই রয়েছেন।

জোয়ানা বলেন, আমার প্রিয় কুকুর লিওর জন্যই নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছি। যদি লিও অ্যান্ড্রুকে ঠিক সময়ে না ডেকে তুলতো, তাহলে আজ আমি হয়তো এখানে থাকতাম না।


২৪ বছর বয়সী স্বর্ণকেশী এ তরুণী  আরও বলেন, আমার মনে পড়ছে, আমি ঘুমাতে গেলাম, তার পরই কেমন যেন সব হয়ে যেতে লাগলো। এরপর হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ারে আবিষ্কার করলাম নিজেকে। পরে জানলাম, আমার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল।

ডাক্তার পরে জোয়ানাকে জানান, কার্যত তার মৃত্যুই হয়েছিল সেদিন! কারণ, তার হৃৎপিণ্ডকে সচল করতে অ্যান্ড্রুর সময় লেগেছিল পাক্কা আধঘণ্টা।



প্রথমে ডাক্তাররা আশঙ্কা করেছিলেন, আমার মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে। কারণ, আমি আমার পায়ের অস্তিত্ব টের পাচ্ছিলাম না আর আমার ব্রেইনের একাংশ নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এখন আমি সম্পূর্ণ সুস্থ,  জানান জোয়ানা।

এ বিষয়ে অ্যান্ড্রুর বক্তব্য, যখন লিও আমাকে ডেকে তুললো, তখন আমি ঘুমে প্রায় অচেতন ছিলাম। দেখলাম, জোয়ানা অস্থিরভাবে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।


আমি ওর মুখে আঙ্গুলের চাপ দিয়ে জাগানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করলাম। না পেরে ৯৯৯ তে কল করি। প্রায় ১৫ মিনিটের মধ্যে ইস্ট মিডল্যান্ডের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস থেকে সহযোগীরা এসে জোয়ানাকে নটিংহামের কুইন্স মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যায়।

প্যারামেডিক গ্লেন রেডফোর্ড বলেন, আমি আমার ১৪ বছরের পেশাজীবনে এমন ঘটনা দ্বিতীয়টি দেখিনি। কারণ, যারাই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন, তাদের প্রায় সবারই কিছু না কিছু স্নায়ুবিক সমস্যা দেখা দেয়। তবে জোয়ানা একশভাগই ভালো রয়েছেন। আর এটাই সবচেয়ে আনন্দের বিষয়।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৭ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।