ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

ব্রিটেনের প্রথম বুদ্ধি প্রতিবন্ধী দম্পতির গল্প

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৫
ব্রিটেনের প্রথম বুদ্ধি প্রতিবন্ধী দম্পতির গল্প ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: মেয়েটির নাম আন্দ্রেয়া আর ছেলেটির নাম পল আনেয়ার। ছোটবেলা থেকেই একই সঙ্গে বেড়ে উঠেছেন তারা।

বিশ্বাস আর ভালোবাসার জোরেই ঘর বেঁধেছিলেন দু’জন।

তবে অন্যসব দম্পতির মতো তাদের জীবন স্বাভাবিক ছিল না। কারণ, দু’জনেই ছিলেন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। কিন্তু তাদের অগাধ ভালোবাসা ভেঙে দিয়েছে সব প্রতিবন্ধকতার দেয়াল।

২০০৪ সালে ভালোবেসে বিয়ে করে তোলপাড় তুলে দেন বিশ্ববাসীর মনে। কারণ, ব্রিটেনে আন্দ্রেয়া আর পলই হলেন প্রথম বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী দম্পতি।

যুক্তরাজ্যের সেন্ট অ্যানসের ল্যাঙ্কশায়ার রিসোর্টের অর্মারড চিলড্রেনস হোমে তাদের প্রথম দেখা। তখন আন্দ্রেয়ার বয়স ছিল মাত্র তিন আর পলের ১৩। পলের পালক মা তাকে সামলাতে না পেরেই এই হোমে নিয়ে আসেন। তখন থেকেই তারা হয়ে ওঠেন খুব ভালো বন্ধু। তারপর বন্ধুত্ব থেকেই প্রেম। আন্দ্রেয়া পলকে ছাড়া কিছুই বুঝতেন না। তবে ১৯৯৬ সালে আন্দ্রেয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্য তাকে কমিউনিটি কেয়ার হাউজে নিয়ে আসা হয়।

তখন তারা দু’জন আলাদা হয়ে পড়েন কারণ, পল তখনও রয়ে যান অর্মারডে। এই ব্যবধান মানতে পারছিলেন না আন্দ্রেয়া ও পল। দু’জন দু’জনকে ছাড়া থাকতে চাইছিলেন না কেউই। একসঙ্গে থাকার জন্য লড়াই করে গেলেন সবার সঙ্গে।

এর চেয়েও অবাক ব্যাপার হলো, আন্দ্রেয়া যখন পলকে বিয়ের কথার কথা জানালেন। সমাজকর্মীরা রীতিমতো চমকে ওঠে আন্দ্রেয়ার এ ঘোষণায়।

১.
an_1_
সবাই ভাবলেন, এ দুই অবুজ ছেলেমেয়ে বিয়ে, বিয়ের বৈধতা ও প্রতিজ্ঞা বোঝার জন্য যথেষ্টই অপারগ! আর সবচেয়ে বেশি চিন্তার বিষয় হলো, সন্তান জন্মদানের বিষয়টি ও এর বিরূপ প্রভাব।

এদিকে, আন্দ্রো ও পল নিজেদের বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন দেখা বন্ধ করেননি মোটেও। সাদা ফুলে সাজানো বিয়ের মঞ্চে নিজেদের দেখার জন্য আকুল হয়ে উঠলেন তারা। নিজেরাই বিয়ের জন্য আংটি, সাদা পোশাক, স্যুটসহ গির্জায় বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য টাকা জমাতে লাগলেন। ডাক্তার ও সমাজকর্মীরা ব্যাপারটিতে একমত না হলেও, অর্মারডের পরিচালক সু শার্পলেসের সহযোগিতায় পল আর আন্দ্রেয়ার বিয়ে সফলভাবেই হয়।  

এ নিয়ে সু জানান,  আমরা পল, আন্দ্রেয়া ও বিশপের প্রতিনিধির সঙ্গে অনেক সময় নিয়ে আলোচনা করে দেখেছি। তারা সত্যিই একে অপরের প্রতি প্রেমান্ধ।

তিনি আরও জানান, আন্দ্রেয়ার জন্ম নিয়ন্ত্রণ প্রতিষেধকও দেওয়া রয়েছে। কারণ, যেহেতু তিনি দুর্বল চিত্তের অধিকারী, তাই গর্ভ ধারণের মতো এত বড় ঝুঁকি তার পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়।  

যাইহোক, ২০০৪ সালে তারা বিয়ে করেন। বিয়ের দুই বছর পর ২০০৬ সালে আন্দ্রেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, আমি পলকে খুব ভালোবাসি। স্বামী হিসেবে তাকে পেয়ে আমি গর্বিত।

পলও এর পাল্টা উত্তর দেন, আমিও আন্দ্রেয়াকে খুব ভালোবাসি।

২.
an_2
সাহসী আন্দ্রেয়া গর্বের সঙ্গে আরও বলেন, আমি জানি অনেকেরই ধারণা, আমাদের বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া উচিত হয়নি। কিন্তু কেন! আমরা দু’জন দু’জনকে এত ভালোবাসি যে, দু’জনই দু’জনের দেখাশোনা করার জন্য যথেষ্ট।

বিয়ের পর তাদের দেখাশোনার জন্য সার্বক্ষণিক একজন  পরিচর্যাকারী ছিলেন। যিনি কিনা তাদেরকে ঘরের কাজে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছেন। একটা পর্যায়ের পর তারা অন্যান্য সাধারণ দম্পতিদের মতোই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতেন।

তবে তাদের একসঙ্গে পথচলা খুব বেশিদিন দীর্ঘায়িত হয়নি। কারণ, আন্দ্রেয়ার হৃদক্রিয়া ভালোভাবে চলছিল না। হৃদপিণ্ডের সমস্যাজনিত কারণে চলতি বছরের মার্চে মাত্র ৪৫ বছর বয়সেই তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।

জন্ম থেকেই তিনি হৃদরোগে ভুগছিলেন এবং এটাই ছিল তার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীতার মূল কারণ।

আন্দ্রেয়ার মৃত্যতে শোক প্রকাশ জানায় অর্মারড ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ, আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আন্দ্রেয়া এ শহরের একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ব্রিটেনে আন্দ্রেয়া ও পলই   প্রথম বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী দম্পতি।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে তাদের বিয়ের দশ বছর পূর্তি হয়। আর এগারো বছরে পা রাখতে না রাখতেই পলের জীবন থেকে হারিয়ে গেলেন আন্দ্রেয়া।

আর এ ব্যাপারে অনেকেই পলের জন্য শঙ্কিত। পলের বয়স এখন ৫৪ বছর। আন্দ্রেয়া ছাড়া বাকি জীবন কাটানোটা পলের জন্য কতটা সহজ হবে, তা সত্যিই চিন্তার বিষয়!

বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।