ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

প্রজননকালে অবিরাম গান গায় ‘মেঘহও মাছরাঙা’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০২২
প্রজননকালে অবিরাম গান গায় ‘মেঘহও মাছরাঙা’ মেঘহও মাছরাঙা

হবিগঞ্জ: পৃথিবীতে পাখির প্রজাতি ১০ হাজারটি। তবে একেক প্রজাতির পাখির রয়েছে একেক রকমের স্বভাব।

এত এত পাখিদের মধ্যে অন্যরকম স্বভাবের একটি পাখি হলো ‘মেঘহও মাছরাঙা’। এরা ডাল ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় ও প্রজননকালে আলাদা শব্দে ডাকে। অনেকটা বৈচিত্র্য রয়েছে এদের চালন-চলনেও।
 
সম্প্রতি রাজধানীর শেরে বাংলা নগর এলাকায় একটি ‘মেঘহও মাছরাঙা’র দেখা পেলেন শখের ছবিয়ালের অ্যাডমিন, হবিগঞ্জের দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. এসএস আল আমিন সুমন। তিনি ‘মেঘহও মাছরাঙা’র ছবিটি তুলেছেন।
 
পাখিটি সম্পর্কে ডা. সুমন বাংলানিউজকে বলেন, মেঘহও মাছরাঙার বৈজ্ঞানিক নাম Pelargopsis capensis. এদের ইংরেজি নাম Pale-capped Pigeon. হ্যালসাপডানিডি পরিবারের অন্তর্গত পেলার্গোপসিস গণের এক প্রজাতির বৃহদাকার মাছরাঙা এটি। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৪২ লাখ ৬০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে এদের আবাস। কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। পৃথিবীতে এদের মোট সংখ্যা সম্বন্ধে তেমন একটা জানা যায়নি, তবে সচরাচরই এদের দেখা মেলে।

এরা ডাল ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় সাধারণত উচ্চস্বরে ডাকে: ‘ক্যা-ক্যা-ক্যা-ক্য-ক্যা’। আর প্রজননকালে অবিরাম গান গাইতে থাকে ‘পিউ-পিউ...পিউ-পিউ-পিউ’ শব্দে। অনেক সময় গম্ভীর স্বরে ডাকে ‘মেঘ-হও....মেঘ-হও’ শব্দেও।
 
এ পাখিটির স্বভাব সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘মেঘহও মাছরাঙা’ বনের জলধারা, ধীরে বহমান নদী, বিল, বাঁওড়, সেচের নালা, নদীর পাশের আবদ্ধ জল, জোয়ারে ভরে যাওয়া খড়ি ও পুকুরে বিচরণ করে। সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় থাকে। একা খুব কম দেখা যায়। জোড়ার একটিকে দেখতে পাওয়া গেলে অপরটিকেও আশেপাশে দেখা যায় বা ডাক শোনা যায়। পানির পাশে গাছের উঁচু ডাল বা খুঁটিতে বসে থাকে। সশব্দে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে শিকার ধরে খায়। খাদ্যতালিকায় রয়েছে মাছ, ব্যাঙ, ছোট সরীসৃপ, পাখির ছানা, ইঁদুর ইত্যাদি। তবে মাছই এদের প্রধান খাবার।
 
‘মেঘহও মাছরাঙা বেশ বড় আকারের নীল ডানার মাছরাঙা। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ৩৮ সেন্টিমিটার, ডানা ১৫ দশমিক ৭ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ৯ সেন্টিমিটার, পা ২ সেন্টিমিটার ও লেজ ১০ সেন্টিমিটার। প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী ও পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথার চাঁদি উজ্জ্বল বাদামি। গলবন্ধ কমলা-পীতাভ। কাঁধ ঢাকনি বাদামি-নীল। ডানার রঙ চমৎকার নীলচে সবুজ। পিঠ ও কোমরের পালকের রং নীল। বুক, পেট ও অবসারনী কমলা-পীতাভ রঙের। ডানার প্রান্ত-পালকের রং গাঢ় নীল। এই রঙটি অনেকটা লেজের নীল রঙের মত; তবে লেজের রঙটি বেশি উজ্জ্বল। এর ঠোঁটের আকৃতি ছোরার মত আর টকটকে লাল রঙের। ঠোঁটের গোড়া কালচে এবং আগা অল্প একটু কালো। চোখের রং বাদামি। চোখের বলয় লালচে। পায়ের পাতা প্রবাল লাল ও নখর কালো।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।