ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

শিকার ঘিরে সাপের বিস্ময়কর চোয়ালপর্ব

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২
শিকার ঘিরে সাপের বিস্ময়কর চোয়ালপর্ব আশ্চর্যভাবে চোয়াল প্রসারিত করে শিকার গিলছে রঙিলা ঢোঁড়া। ছবি: ড. মনিরুল খান

মৌলভীবাজার: প্রাণিজগতে রহস্যের অন্ত নেই। অদ্যাবধি আমরা যা দেখিনি, তা-ই রহস্যাবৃত্ত।

ঘটনাক্রমে বা কোনো দক্ষ আলোচিত্রবিদের অবাক করা নৈপুণ্যে সেই বিস্ময়কর ছবিটি আমাদের সম্মুখে প্রকাশিত হওয়ার সুযোগ পায়।  

তখনই ফুটে ওঠে অদেখা সেই দৃশ্যের মনোরম সৌন্দর্য। এতো কাল ধরে শুনে থাকা কোনো ঘটনার বাস্তব প্রকাশটি যখন বিচিত্ররূপে আমাদের চোখের সীমায় এসে হাজির হয় তখন অবাক হওয়া ছাড়া আরো কোনো উপায় থাকে না।   

সাপ এক প্রকারের ভীতু সরীসৃপ প্রাণী। বিষহীন এবং বিষধর এই দুই ধরনেই সাপই আমাদের প্রকৃতিতে ঘুরে বেড়ায়। সাপ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভয়, আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা এবং কৌতূহলের কোনো শেষ নেই। সাপ দেখলেই মেরে ফেলার প্রবণতা এখনো প্রতি ১০ জনের মাঝে ৯ জনের মাঝেই বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে। অথচ, প্রকৃতির ভারসাম্য এবং প্রতিবেশ ব্যবস্থার খাদ্যশৃংখল রক্ষায় এই সরীসৃপ প্রাণীগুলো বহুমাত্রিক অবদান রেখে চলেছে। তারপরেও মানুষের হাতেই নির্মমভাবে প্রাণ হারাতে হচ্ছে তাদের।    

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং দেশবরেণ্য বন্যপ্রাণী গবেষক, লেখক ড. মনিরুল খান সম্প্রতি ভক্ষ ও ভক্ষকের অসাধারণ একটি ভক্ষণযুক্ত আলোকচিত্র ক্যামেরাবন্দী করেছেন।  

তাতে দেখা যাচ্ছে, একটি সাপ তার বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে প্রকৃতি থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে গিলে খাচ্ছে। শিকার গিলে খাবার এই পর্বটি বিস্ময়কর এবং আকর্ষণীয়। সাপের চোয়ালটি ছবিতে বিস্ময়করভাবে প্রসারিত হয়েছে।  

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ড. মনিরুল খান বাংলানিউজকে বলেন, সাপ যখন তার শিকার ধরে খায় তখন তাদের চোয়াল (মুখের একাংশ) খুলে আসে। অন্যান্য প্রাণীর এরকম আসে না। সাপের চোয়ালটা যেখানে জয়েন্ট (যুক্ত) থাকে সেখান থেকে সরে আসে। আবার খাবার শেষ হলে জায়গা মতো চলে যায়। যেকারণে ওরা তার আয়তন থেকে বড় প্রাণী খেতে পারে। কিন্তু অন্যপ্রাণী পারে না।  

কারণ, অন্যপ্রাণীদের চোয়াল হচ্ছে এক জায়গায় ফিক্সড (স্থায়ী)। কোনো অবস্থাতেই ওই জায়গা থেকে সরবে না। কিন্তু সাপেদের চোয়াল খুলে খুলে আসে। অর্থাৎ জায়গা থেকে সরে আসে। এটা বিশালাকৃতির বিষমুক্ত অজগর থেকে শুরু করে বিষমুক্ত ছোট সাপ কালনাগিনী পর্যন্ত।

শিকারের সময় সাপের অভিযোজন প্রক্রিয়া সম্পর্কে ড. মনিরুল খান বলেন, সাপ যখন কোনো শিকারকে ঘিলতে থাকে তখন তার এয়ারপাইপ (বায়ুনালি) বাইরের দিকে বের হয়ে আসে। আমরা যেরকম মুখ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেই ওদের এই শ্বাসনালিটা মুখের সামনে চলে আসে। গিলে খেতে তো সময় লাগে। যেমন ধরেন, একটা অগজর একটা হরিণকে গিলে খায়। তার হয়তো এই কাজে এক ঘণ্টা সময় লাগবে। এই এক ঘণ্টা সে দম নেবে না? ওই জন্য তার শ্বাসনালিটা বাইরের দিকে বের হয়ে আসে। এর ফলে ওইভাবেই তারা শিকার গিলে খাবার সময় শ্বাস নিতে পারে।  

খাবার পূর্ব শিকারকে হত্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে প্রাণীটাকে বা যে শিকারটাকে সাপ খাচ্ছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই প্রাণীটাকে আগে মেরে নেয়। যেমন- বিষধর সাপ যেগুলো ওরা তার শিকারকে ধরে কামড় দিয়ে তার শরীরে বিষ ভরে দিয়ে হত্যা করে অর্থাৎ ওই শিকারগুলো বিষের মাধ্যমেই মারা যায়। তাদের বিষদাঁত তো আছেই শিকারকে মারার জন্য। আর যেসব সাপের বিষ নেই তারা শিকারকে পেঁচিয়ে শক্তভাবে চাপ দিয়ে শ্বাসরোধ করে মারে। আগে শিকারকে মেরে ফেলে। কারণ, জ্যান্ত থাকলে তো গেলার সময় শিকারটা ছটফট করবে। গিলতে অসুবিধে হবে।    
 
এই সাপের ইংরেজি নাম Painted Keelback, এর প্রচলিত বাংলানাম নেই, তবে রঙিলা ঢোঁড়া বলা যেতে পারে। এরা নির্বিষ প্রজাতির সাপ। আর রঙিলা ঢোঁড়া যে শিকারটাকে গিলছে সেটা একটি দেশি পুঁটি মাছ বলে জানান ড. মনিরুল খান।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২ 
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।