ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

প্রকৃতির উপকারী পাখি ‘বেগুনি কোমর-মৌটুসি’ 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৯
প্রকৃতির উপকারী পাখি ‘বেগুনি কোমর-মৌটুসি’  মধু পানে মগ্ন বেগুনি কোমর মৌটুসি। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

মৌলভীবাজার: গাছটির ডালের শেষ মাথায় একটি মাত্র ফুল ফুটেছে। ফুলটির ভারে ডালটি নুয়ে পড়েছে নিচের দিকে। মধুলোভী মৌটুসি ততক্ষণে পুষ্পটি দূর থেকে দেখে ফেলেছে। মধুর আকর্ষণে যতটা সম্ভব দ্রুত কাছে ঘিরতেই হবে তাকে। নুয়ে পড়া ডালটির শেষাংশের ফুলটি ধরে দোলতে দোলতেই মধু অনুসন্ধান করে সে। 

ফুলের মধু পান করে বেঁচে থাকা ওই ছোট্ট পাখির নাম বেগুনি কোমর-মৌটুসি।

এরা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি।

এদের ইংরেজি নাম Purple-rumped Sunbird এবং বৈজ্ঞানিক নাম Leptocoma zeylonica

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি গবেষক ইনাম আল হক ওই পাখিটির সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, সব মৌটুসিই (Sunbird) ফুলের উপর নির্ভরশীল পাখি। বেগুনি কোমর-মৌটুসি সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ফুলের বাগানগুলোতে। এরা শুধুমাত্র মধু পান করেই বেঁচে থাকে। প্রকৃতিতে এরা যে বড় কাজটি করে তা হলে, ফুলের পরাগায়ন করে থাকে।  

তিনি আরও বলেন, বাগান ও বনের যত ফুল থেকে ফল হয় তার জন্য ওই পাখিই দায়ী। অর্থাৎ খারাপ অর্থে দায়ী নয়, উপকারী হিসেবে দায়ী। প্রকৃতির অত্যন্ত প্রয়োজনীয় দায়িত্বটি পালন করে চলেছে তারা। এদের এটাই কাজ। কারণ, পরাগায়ন না করলে তো ফল হবে না। মৌটুসিদের পাশাপাশি ফুলের পরাগায়নের কাজটি পতঙ্গও করে থাকে।

‘মৌটুসিকে আমরা লোকালয়ে খুব সহজে দেখতে পাই বলে এই পাখিটি সঙ্গে লোকের পরিচিতি আছে। এরা বাগান ও বনের ফুলগুলোকে ফলে রূপান্তর করে দেয়। না হলে গাছের ফলই হত না। বুনো ও মানুষের লাগানো ফুলই হোক। স্বতঃস্ফুর্তভাবে প্রকৃতির অনেকটা পরাগয়ন করে দেয় পাখিগুলো।

পাখিটির দৈহিক গঠন সম্পর্কে ওই গবেষক বলেন, পুরুষ পাখিটির দেহ বেগুনি আর স্ত্রীর দেহ ধূসর-বাদামি। পুরুষ পাখিটির গলা, মাথা ও পিঠ তামাটে, বেগুনি কোমর ডানা কালচে এবং পেট হলদে। স্ত্রী পাখিটির মাথা, পিঠ ও ডানা ধূসর-বাদামি; গলা ধূসর-সাদা। বুক ফিকে-হলুদ। চোখ লালচে-বাদামি। উভয়ের চঞ্চু (ঠোঁট) কালচে ও পা কালো। তবে, অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির গলা ও পেট হলুদ।  

বেগুনি কোমর মৌটুসি আকারে চড়ুইয়ের থেকেও ছোট। দৈর্ঘ্য মাত্র ১০ সেন্টিমিটার এবং ওজন মাত্র ৯ গ্রাম। এর প্রজনন মৌসুমে গাছ ও গুল্মলতায় মাকড়শার জাল দিয়ে পাতা ও আঁশ বেঁধে নাশপাতির মত থলের বাসা বানায়। বাসার বাইরে নারিকেল, শেওলা, পাতা, বাকল ও আবর্জনা দিয়ে আড়াল করা থাকে বলেও যোগ করেন ওই  পাখি গবেষক।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৯
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।