ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

রোড টু ডারবান: বাংলানিউজের গোলটেবিল

বিশ্ব তরুণ প্রজন্মকে পক্ষে আনতে চায় বাংলাদেশের তরুণরা

মনোয়ারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১১
বিশ্ব তরুণ প্রজন্মকে পক্ষে আনতে চায় বাংলাদেশের তরুণরা

ঢাকা: বিশ্বের তরুণ প্রজন্মকে বাংলাদেশের পক্ষে এনে জলবায়ু পরিবর্তন রোধের ডাক দেওয়ার জন্য একমত হলেন বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা। তারা বললেন, একেকজন তরুণকে হাজার তরুণের কাজ করতে হবে।

তরুণরাই পারবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে।

সোমবার সন্ধ্যায় ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের কনফারেন্স রুমে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
 এবং বাংলাদেশ ইয়ুথ মুভমেন্ট ফর ক্লাইমেটের যৌথ উদ্যোগে ‘রোড টু ডারবান: গোলটেবিলে তরুণদের ভাবনা’ শিরোনামে গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা।

ডারবান সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে তরুণ প্রজন্মের নির্বাচিত প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল রেজওয়ান নবীন এতে অংশ নেন। বৃটিশ কাউন্সিলের  ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট চ্যাম্পিয়ন প্রোগ্রাম’- এর চ্যাম্পিয়ন শাফিউল আজম এবং হাসান আবদুল্লাহ তৌহিদ, সেগুফতা নেওয়াজ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা ব্রিটিশ কাউন্সিলের  ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট চ্যাম্পিয়ন প্রোগ্রাম’ এর চ্যাম্পিয়ন অভিষেক আচার্য্য, পরিবেশকর্মী ও সাংবাদিক মোরশেদ হাসিব হাসান, লিডারস ফর নেশনের প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি, আব্দুল্লাহ হাসান, নিয়াজুল ইসলাম প্রমুখ এতে অংশ নেন। বাংলানিউজের চিফ অব নিউজ মাহমুদ মেনন খানও আলোচনায় অংশ নেন। এছাড়াও বাংলানিউজের মনোয়ারুল ইসলাম, তাসবির হাসান সাকিব, আরিফুল ইসলাম আরমান ও অন্যান্যকর্মীরা সহযোগিতা করেন।

বাংলানিউজের ব্লগ এডিটর শেরিফ আল সায়ারের সঞ্চালনায় আলোচনা শুরু হয়। প্রথমেই বক্তব্য রাখেন ডারবানে তরুণদের পক্ষে বাংলাদেশের প্রতিনিধি রেজওয়ান নবীন।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ প্রতিবছর জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের আয়োজন করে। ২৮ নভেম্বর ১৭তম কপ সম্মেলন হবে। ডারবান জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী না হয়েও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পক্ষ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবান দখলের ডাক দিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো।
 
‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামে’র দেশগুলো এ দাবি করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমি দেশের তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে যাচ্ছি। আমি তরুণদের মতামত তুলে ধরবো। আজকের গোলটেবিল ও বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের পাঠকরা যেসব কমেন্ট করছে তা তুলে ধরবো।
 
আমি দাবি তুলব- উন্নত দেশগুলোকে আমাদের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে। কার্বন নিঃসরণসহ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণগুলো তাদের বন্ধ করতে হবে। মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ নাসিমও  বলেছেন ‘আমাদের দাবি না মানলে প্রয়োজনে ডারবান দখলের ডাক দেওয়া হবে। আমরাও তার ডাকে সামিল হতে চাই। ’

গোলটেবিলে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হচ্ছে তহবিলের জন্য বসে না থেকে নিজস্ব অর্থায়নে কিছু কাজ শুরু করা। জলবায়ু সহায়তা তহবিলে বাংলাদেশকে বিশ্বের যেসব দেশ সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুত তারা যাতে সরাসরি যে সহায়তা বাংলাদেশের হাতে দেয় সে দাবি তোলার ওপরও জোর দেওয়া হয় আলোচনায়।

জলবায়ু জরিমানা নিশ্চিত করার দাবি তুলে বক্তারা বলেন, যে দেশ কার্বন নিঃসরণে যতটুকু ভূমিকা রাখতে সে দেশকে সেই অনুপাতে জরিমানা করার দাবি উঠতে পারে।

গণমাধ্যমের ভূমিকা তুলে ধরে বক্তারা বলেন, গণমাধ্যমের কারণেই আজ অনেক তথ্য জানা যাচ্ছে। এ ভূমিকা আরও জোরদার করতে হবে।

নবীন বলেন, আমি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমকে ধন্যবাদ জানাই পরিবেশ নিয়ে এমন উদ্যোগের জন্য। দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে ২৮ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ‘জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন। ’ এ সম্মেলনকে বলা হচ্ছে ‘কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস’। জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতারা এ সম্মেলনে অংশ নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেবেন। এ সম্মেলনের প্রধান বৈশিষ্ট হলো সাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এবারের সম্মেলনের ভালো দিক হচ্ছে প্রতিটি দেশ থেকে তরুণ প্রজন্মের একজন করে প্রতিনিধির অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত। তরুণরাও এবার যাবেন ডারবানে। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হবে আগামী সময়ের নাগরিকদের দাবি। এ নিয়ে সব দেশেই চলছে প্রস্তুতি। আমিও দেসবাসীর পরামর্শ চাই বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের মাধ্যমে বা যে কোনোভাবে এ মতামত আমাকে জানাতে পারেন।

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রংপুর অঞ্চলের জলবায়ু নিয়ে কাজ করছেন ক্লাইমেট চ্যাম্পিয়ন শাফিউল আজম। তিনি বলেন, আমি মঙ্গা এলাকায় সাধারণ মানুষের সাথে কাজ করেছি। তাদের খুব কাছে থেকে তাদের সমস্যা দেখেছি। এই সাধারণ মানুষগুলো উন্নত দেশের কারণে জলবায়ু সংক্রান্ত ঝুঁকির মধ্যে। তাই এসব মানুষের পক্ষে আন্তর্জাতিক ফোরামে জোরালোভাবে বলতে হবে।

রেডিও’র মাধ্যমে জলবায়ু সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার ব্যপারে কাজ করে ব্রিটিশ কাউন্সিলের পরিবেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন হাসান আবদুল্লাহ তৌহিদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক মানুষ জলবায়ুর পরিবর্তন সংক্রান্ত বিজ্ঞান বোঝেন না। তাই তাদেরকে এই ইস্যুতে সচেতন করতে হবে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও অনেক দেশ কিয়োটো প্রটোকল মানছে না। আমাদের এইসব অসচেতনতা থেকে বের হতে হবে।

দুর্যোগপূর্ণ এলাকার স্থাপত্য নিয়ে কাজ করছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের পরিবেশ চ্যাম্পিয়ন সেগুফতা নেওয়াজ। তিনি বলেন, দুর্যোগপূর্ণ এলাকার টেকসই প্রযুক্তি দিয়ে ঘরবাড়ি বানাতে হবে। আমাদের এ ব্যাপারে যে কারিগরি দূর্বলতা আছে তা কাটিয়ে উঠতে আমরা উন্নত দেশগুলোর সহযোগিতা চাইতে পারি।

ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্র ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের পরিবেশ চ্যাম্পিয়ন অভিষেক আচার্য্য।

তিনি বলেন, আমাদের দেশ ভারত পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে যথাযথ ভূমিকা রাখছে না। ভারত সরকার উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে। এটি প্রতিবেশিদের সাথে যথার্থ আচরণ নয়। ভারতের পরিবেশকর্মী ও তরুণরা সরকারের এইসব কাজের প্রচণ্ড বিরোধী।

পরিবেশকর্মী ও সাংবাদিক মোরশেদ হাসিব হাসান বলেন, আমাদের মিডিয়া ১০০ ভাগ না হলেও এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির কাজ করছে। এখন প্রিন্ট মিডিয়ার জায়গায় গ্রিন মিডিয়া বা অনলাইন মিডিয়া জনপ্রিয় হচ্ছে। বড় বড় পরিবেশ সম্মেলন সুফল আনছেনা। আসলে প্রয়োজন নিজ নিজ দেশের কমিটমেন্ট নিয়ে সম্মেলনে অংশ নেয়া। এ কমিটমেন্ট হতে হবে বিশ্বের সবার জন্য কল্যাণকর।

তরুণদের সংগঠন লিডারস ফর নেশনের প্রেসিডেন্ট তানভীর আহমেদ বলেন, সম্মেলনে সমস্যা নিয়ে আলোচনা না করে সমাধান নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। বাংলাদেশ থেকে সম্মেলনে যাবার আগে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে দেশবাসীকে এসব ব্যপারে জানানো উচিত। আমাদের নিজেদেরকেও পরিবেশবান্ধব হতে হবে। বাংলাদেশের জনসংখ্যাও পরিবেশের জন্য সমস্যা তৈরি করছে। তাই দেশের পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যাও সমাধান করতে হবে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ডারবানে যাচ্ছেন আব্দুাহ আল রেজওয়ান নবীন। তিনি বৃটিশ কাউন্সিল আয়োজিত  ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট চ্যাম্পিয়ন প্রোগ্রাম’ এর একজন বিজয়ী প্রতিযোগী। তার প্রজেক্ট ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ মুভমেন্ট ফর ক্লাইমেট’ সেরা প্রজেক্ট হিসেবে ২০১০ সালে নির্বাচিত হয়। রেজওয়ান নবীন তরুণ প্রজন্মকে জলবায়ু সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি এবং তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম চালানোর প্রস্তাব করেন তার এই প্রজেক্টে। ডারবানে নবীন বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের একজন যোগ্য প্রতিনিধি হবেন সেটাই প্রত্যাশা।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের এমন আয়োজনে পাঠকদেরও অংশগ্রহণ ছিলো আশাব্যাঞ্জক। ৫২১ জন অনলাইন রেডিও থেকে প্রচারিত এ অনুষ্ঠানে সরাসরি অংশ নেন। শতাধিক পাঠক অনলাইনে তাদের মতামত তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ সময়: ০০২৭ ঘণ্টা,  নভেম্বর ২২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।