ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

দ্রুতই সেরে উঠছে ‘নীলগাই’, যাচ্ছে রামসাগরেই

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৯
দ্রুতই সেরে উঠছে ‘নীলগাই’, যাচ্ছে রামসাগরেই নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও সেবায় দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠছে নীলগাইটি

রাজশাহী: বন বিভাগের নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও সেবা-শুশ্রুষায় সেরে উঠছে উদ্ধার হওয়া নীলগাইটি। শুরু করেছে স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়াও। আগামী ৩১ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির এ প্রাণীটির অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্সও শেষ হবে। এরইমধ্যে তার শরীরের ক্ষতগুলো শুকিয়ে উঠছে। দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠছে নীলগাইটি।

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহেই প্রাণীটিকে নেওয়া হচ্ছে দিনাজপুরের রামসাগর উদ্যানে। এখন কেবল মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত নির্দেশের অপেক্ষা।

তবে নীলগাইটির পরিচর্যায় বাধ সেধেছে জনসমাগম ও দর্শনার্থীদের বাড়তি চাপ।  

নীলগাইটির জন্য নিরিবিলি পরিবেশ প্রয়োজন হলেও বর্তমানে তা রক্ষা করতে পারছে না বনবিভাগ। প্রতিদিনই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নীলগাইটিকে দেখতে পরিচর্যাকেন্দ্রে ভিড় করছেন হাজারো মানুষ। তাদেরকে সামাল দিতে এখন রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে বন বিভাগের নিরাপত্তাকর্মীদের। ফলে দর্শনার্থীদের নিয়ে অনেকটাই বেকায়দায় পড়েছে বন বিভাগ।

আরও পড়ুন>> লোকালয়ে ঢুকেই আতঙ্কিত ‘নীলগাই’, খাচ্ছে না কিছুই

রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম সাজ্জাদ হোসেন জানান, বুধবারও পার্শ্ববর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে দুই বাস ভর্তি দর্শনার্থী এসসেছিলেন। সঙ্গে স্থানীয় দর্শনার্থীতো রয়েছেন।

তবে অসুবিধার কথা হচ্ছে- উদ্ধার হওয়া ওই নীলগাইটিকে দেখতে মানুষ এলেই বিচলিত হয়ে উঠছে প্রাণীটি। মানুষ দেখলেই ভীত হয়ে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে। এছাড়া ভয়ে দিগ্বিদিক ছুটোছুটি করছে। কারণ বনের মধ্যে এতো মানুষ সে এর আগে কখনো দেখেনি। এতে নীলগাইটিকে রক্ষণাবেক্ষণ ও চিকিৎসায় বিঘ্ন ঘটছে বলেও জানান বিভাগীয় বন কর্মকর্তা।

রাজশাহী চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ক ও ভেটেরিনারি সার্জন ডা. ফরহাদ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, রাজশাহীতে আনার পর থেকে তার অধীনেই চিকিৎসা চলছে মান্দায় উদ্ধার হওয়া বিলুপ্তপ্রায় নীলগাইটির। আজ তার শরীরে অ্যান্টিবায়োটিকের তৃতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স শেষ হবে। এরপরই নীলগাইটি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও সেবায় দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠছে নীলগাইটিডা. ফরহাদ উদ্দিন বলেন, উদ্ধারের সময় পায়ে, পেটে ও রানের কাছে আঘাত পেয়েছিল নীলগাইটি। এতে শরীরের ওই স্থানগুলোতে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। সেখান থেকে যেনো কোনো ইনফেকশন (সংক্রমণ) ছড়াতে না পারে সেজন্য অ্যান্টিবায়োটিকসহ বেশ কয়েকটি ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে।  

এরইমধ্যে স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়াও শুরু করেছে নীলগাইটি। তৃণভোজী এই প্রাণীটির খাবারের তালিকায় পাকা কলা, টমেটো, ফুলকপি-বাঁধাকপি, ছোলার পাশাপাশি খেসারির শাকসহ বিভিন্ন সবজি রাখা হয়েছে বলেও জানান ডা. ফরহাদ উদ্দিন।

সুস্থ হওয়ার পর কোথায় নেওয়া হচ্ছে উদ্ধার হওয়া নীলগাইটিকে? এমন প্রশ্নে রাজশাহী বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ডিএফও মো. জিল্লুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসার পর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত রয়েছে নীলাগাইটিকে দিনাজপুর রামসাগর জাতীয় উদ্যানেই নিয়ে যাওয়া হবে। কারণ সেখানে এরইমধ্যে আরও একটি নীলগাই রয়েছে। সেটি নারী। আর এটি হচ্ছে পুরুষ। তাই প্রজননের জন্য তাদের একসঙ্গে রাখা হবে।  

এছাড়া দিনাজপুরের রামসাগরে এর মধ্যে প্রায় ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে তাদের জন্য বাসবাস উপযোগী এনক্লোজার (বেষ্টনী) করা হয়েছে। সেখানেই দু'জনকে এক সঙ্গে রাখা হবে। এতে বিলুপ্ত প্রায় এই প্রাণীর বংশবিস্তার ঘটবে। আর এটি সম্ভবও। কারণ সৌভাগ্যক্রমে সেখানে থাকা নারী নীলগাইটি প্রাপ্তবয়স্ক বলেও উল্লেখ করেন রাজশাহী বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ডিএফও মো. জিল্লুর রহমান।  

নওগাঁর মান্দা উপজেলা থেকে উদ্ধার করা বিলুপ্তপ্রায় নীলগাইটিকে গত ২২ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) দিনগত মধ্যরাতে রাজশাহী বন্যপ্রাণী ও পরিচর্যা কেন্দ্রে নেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৯
এসএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।