ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

লোকালয়ে ঢুকেই আতঙ্কিত ‘নীলগাই’, খাচ্ছে না কিছুই

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৯
লোকালয়ে ঢুকেই আতঙ্কিত ‘নীলগাই’, খাচ্ছে না কিছুই উদ্ধার হওয়া নীলগাইটিকে রাজশাহী বন্যপ্রাণী ও পরিচর্যা কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে

রাজশাহী: লোকালয়ে ঢুকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে উদ্ধার হওয়া নীলগাইটি। বুধবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল থেকে তাকে পাকা কলা, টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু খাচ্ছে না তেমন কিছুই। এর মধ্যে তাকে সুস্থ করে তুলতে অ্যান্টিবায়োটিকসহ বেশ কয়েকটি ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে ২/৩ দিনের মধ্যেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে নীলগাইটি।

নওগাঁর মান্দা উপজেলা থেকে উদ্ধার করা বিলুপ্তপ্রায় নীলগাইটিকে মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) মধ্যরাতে রাজশাহী বন্যপ্রাণী ও পরিচর্যা কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে।

পরিচর্যা কেন্দ্রের ভেতরের প্রাকৃতিক পরিবেশেই তাকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।  

রাজশাহী চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি সার্জন ডা. ফরহাদ উদ্দিন মঙ্গলবার রাতে নীলগাইটিকে দেখতে সেখানে যান। তার সহযোগিতায় নীলগাইটি গাড়ি থেকে নামিয়ে পরিচর্যা কেন্দ্রের ভেতরে নেওয়া হয়। বর্তমানে তার অধীনেই চিকিৎসা চলছে মান্দায় উদ্ধার হওয়া বিলুপ্তপ্রায় নীলগাইটির।

জানতে চাইলে রাজশাহী চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি সার্জন ডা. ফরহাদ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, উদ্ধারের সময় পায়ে, পেটে, রানের কাছে আঘাত পেয়েছিল নীলগাইটি। এতে শরীরের ওই স্থানগুলোতে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। সেখান থেকে যেনো কোনো ইনফেকশন (সংক্রমণ) ছড়াতে না পারে সেজন্য অ্যান্টিবায়োটিকসহ বেশ কয়েকটি ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে আগামী দুই থেকে তিনদিনের মধ্যেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে নীলাগাইটি। এরই মধ্যে মানুষ নিয়ে তার ভেতরের আতঙ্ক কেটে গেলে ঠিকমত খাওয়া-দাওয়াও শুরু করবে।

রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম সাজ্জাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, নীলগাই বণ্যপ্রাণী। লোকালয়ে ঢুকে পড়ে এমনিতেই ঘাবড়ে গেছে। এর ওপর তাকে ধরতে গ্রামের মানুষের প্রাণপন চেষ্টা, চিৎকার, হৈ-হুল্লোরে প্রাণীটি আরও বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। যে কারণে আজ তেমন কোনো খাবারই মুখে তোলেনি। চিকিৎসকের পরামর্শে নীলগাইটিকে পাকা কলা, টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি দেওয়া হয়েছে। নীলগাই তৃণভোজী প্রাণী। সাধারণত এগুলোই তার খাবার।
   
সুস্থ হওয়ার পর কোথায় নেওয়া হচ্ছে উদ্ধার হওয়া নীলগাইটিকে? এমন প্রশ্নে রাজশাহী বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ডিএফও মো. জিল্লুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বিষয়টি ঢাকায় জানানো হয়েছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসার পর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে নীলাগাইটিকে দিনাজপুর রামসাগর জাতীয় উদ্যানে নিয়ে যাওয়া হবে। কারণ সেখানে আরও একটি নীলগাই রয়েছে। সেটি নারী। আর এটি হচ্ছে পুরুষ। তাই তাদের একসঙ্গে রাখা হবে।  

তবে নীলগাইটি নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত বলেই জানান দিনাজপুর বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ডিএফও আবদুর রহমান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গত ৫ সেপ্টেম্বর  ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল থেকে একটি নীলগাই উদ্ধার করা হয়। তাকে দিনাজপুর রামসাগর জাতীয় উদ্যানে রাখা হয়েছে। এবার মান্দায় আরও একটি নীলগাই উদ্ধার হয়েছে।  

বাংলাদেশে এই প্রাণীটি বিরল। বিলুপ্ত প্রায় এই প্রাণীর সংখ্যা বাংলাদেশে এখন দু’টিতে দাঁড়ালো। আর সৌভাগ্যক্রমে এবারের প্রাণীটি পুরুষ। এরা দু’জনই প্রাপ্ত বয়স্ক। তাই তাদের একসঙ্গে রাখা হলে স্বাভাবিক নিয়মেই বংশ বিস্তার করবে। ফলে বিলুপ্ত প্রায় এই বণ্যপ্রাণীটির সংখ্যা আবারও বাড়ানো যাবে বলে তাদের ভেতরে এরই মধ্যে আশার সঞ্চার ঘটেছে। আগামী এক সপ্তাহ রাজশাহীতে নীলগাইটির চিকিৎসা চলবে। এর পরই একে দিনাজপুর নেওয়া হবে বলেও জানান আবদুর রহমান।     

এর আগে মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) সকালে নওগাঁর মান্দা উপজেলার জোত বাজার এলাকায় বিলুপ্তপ্রায় নীলগাইটিকে আটক করে এলাকাবাসী। বাজার এলাকায় উদ্দেশ্যহীনভাবে ছোটাছুটি করছিলো প্রাণীটি। দেখতে পেয়ে গ্রামের শতাধিক বাসিন্দা ধাওয়া করে সেটি আটক করে।  

গ্রামের মধ্যেই প্রাণীটি বেঁধে রেখে পুলিশ ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে খবর দেয় এলাকাবাসী। পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করা হয় এবং রাজশাহী বন্যপ্রাণী ও পরিচর্যা কেন্দ্রে নেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৯
এসএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।