ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

ভালোবাসায় বিলীন হচ্ছে দুর্লভ কালামাথা-মুনিয়া!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৭
ভালোবাসায় বিলীন হচ্ছে দুর্লভ কালামাথা-মুনিয়া! ধানক্ষেতে বসে আছে ‘কালামাথা-মুনিয়া’, ছবি : আবু বকর সিদ্দিক

মৌলভীবাজার: রোদ তার উজ্জ্বলতাটুকু হারিয়েছে। কমে আসছে আলো। বিকেলের এমন বিস্ময়কর সৌন্দর্যের সঙ্গে অংশ নিয়েছে কয়েকটি মুনিরার চেঁচামেচি। ধানক্ষেতে বসে নিজেদের বাকবিতন্ডায় কাটাচ্ছে সময়। অপূর্ব এ দৃশ্যে কার না মন জুড়ায়।
 

তবে মুনিয়াদের অবস্থা তেমন ভালো নয়। মাঝে মাঝে তাদের জীবনে নেমে আসে খাঁচাবন্দি অভিশাপ‍! তাদের সৌন্দর্যশোভা আমাদের দৃষ্টিকে দারুণভাবে আকর্ষণ করে বলে একশ্রেণীর অসৎমানুষ ফাঁদ পেতে এই পাখিদের খাচাবন্দি করে বিক্রয় করে থাকে।

এভাবে বিপন্ন হচ্ছে মুনিয়ারা। বাংলাদেশে প্রায় ছয় প্রজাতির মুনিয়া পাখি বিচরণের রেকর্ড রয়েছে।
 
এর নাম কালামাথা-মুনিয়া। ইংরেজিতে Chestnut Munia এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Lonchura atricapilla। সুদর্শন এই পাখিটি দৈর্ঘ্য ১০ সেন্টিমিটার এবং ডানার দৈর্ঘ্য ৬ সেন্টিমিটার। মাথা, ঘাড়, গলা, বুক, তলপেট ও লেজতল কালো। পেট সাদা। পিট ও ডানা লালচে বাদামী। বাংলাদেশে দুর্লভ আবাসিক এই এরা।  
 
তবে ‘কালামাথা-মুনিয়া’ নামের পাখিকে আলাদা দুইটি প্রজাতি হিসেবে এখন গণ্য করা হয়।  দুটো প্রজাতির পাখিরই কালামাথা হওয়ায় এই পৃথক নামকরণ। কিন্তু এখনো এদের বাংলা নামকরণ করা হয়নি। ইংরেজিতে একটির নাম Chestnut Munia এবং অপরটি নাম Tricolored Munia।
 
বাংলাদেশের প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, মুনিয়ার মতো মিষ্টি পাখি নেই। আমাদের ভালোবাসা মুনিয়ার জন্য কাল হয়েছে। অনেকেই আদর করে এদের খাচাবন্দি করে পালেন। ধানক্ষেত বা মাঠ থেকে জাল দিয়ে ধরে মুনিয়া বিক্রি করা হয়।
 ধানক্ষেতে বসে আছে ‘কালামাথা-মুনিয়া’, ছবি : আবু বকর সিদ্দিক
 তিনি আরো বলেন, খাঁচায় মুনিয়ারা সুখে থাকে না; বেঁচে থাকে না। খাঁচায় এরা কখনো ডিম দেয়না। তাই আমাদের দেশের কাক ছাড়া যে কোনো পাখি খাচাবন্দি করে পালা অপরাধ। তবে কারো যদি পাখি পালার অদম্য ইচ্ছে হয়ে থাকে তাহলে তিনি বিদেশি পাখি কিনে সেগুলো পোষতে পারেন। এগুলো ঢাকার নীলক্ষেতের কাটাবন মার্কেটে পাওয়া যায়।
 
আমাদের দেশের জীববৈচিত্র্য ও  বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রচলিত আইনে পাখি ধরা, পাখি পালা এবং পাখিহত্যা দণ্ডনীয় অপরাধ। এই বিষয়টি সর্বসাধারণের মাঝে প্রচার হওয়া জরুরি বলে জানান পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক।
 
কালা-মাথা মুনিয়া সম্পর্কে ইনাম আল হক আরো বলেন, এরা উঁচু ঘাসের তৃণভূমি, জলভূমি, ধানক্ষেত ও ক্ষুদ্র ঝোপে ছোট দলে বিচরণ করে। ধানক্ষেতে, ঘাসে ও ভূমিতে এদের খাবার খোঁজতে দেখা যায়। মে-নভেম্বর মাসে প্রজনন মৌসুম জলাভূমি খাড়ানল, ঝোপ অথবা আখক্ষেতে পাতা ও ঘাস দিয়ে বলের মতো সুড়ঙ্গ বিশিষ্ট বাসা তৈরি করে।
 
পাখি আলোকচিত্রী ও পর্যবেক্ষক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, মুনিয়াদের শুধু জাল বা ফাঁদ দিয়ে ধরে বিক্রিই করে না, ঢাকার কিছু অসৎ ব্যবসায়ীরা মুনিয়াদের শরীরে বিভিন্ন কৃত্রিম রঙ মাখিয়ে বিদেশি পাখি বলে বিক্রিও করে থাকেন।  
 
এ ছবিটি দক্ষিণ কেরানিগঞ্জ তুলেছেন বলে বাংলানিউজকে জানান আবু বকর সিদ্দিক।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৭
বিবিবি/বিএস 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।