ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

লাউয়াছড়ায় সবুজ বৃদ্ধিতে ‘বাংলানিউজ’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৮ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৭
লাউয়াছড়ায় সবুজ বৃদ্ধিতে ‘বাংলানিউজ’ বাংলানিউজের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি , ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার : তীব্র ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর একটি বানর একদিন অনুভব করে বসলো- দলের সঙ্গে বসবাস করে তেমন লাভ হচ্ছে না, ক্ষতি হচ্ছে। বরং একটা দল থেকে বেড়িয়ে গিয়ে একা পার্শ্ববর্তী লোকালয়ে গেলেই অনেক বেশি খাবারের সন্ধান পাওয়া যায়।

আর তাতে সুবিধেও ব্যাপক। চুপিচুপি খাদ্যগ্রহণের কাজটা সেরে ফেরলে কেউই টের পায় না।

মনভরে হয় ভুড়িভোজ।

এই ভাবনাতেই দল থেকে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। বুকের ছানাটাকে নিয়ে সে বন সংলগ্ন একটি বাড়ি নির্বাচন করলো। মানুষের যাতায়াত পর্যবেক্ষণ করতে করতে হঠাৎ দেখলো বাড়ি উঠানজুড়ে কাঁচাপাকা কলা ছড়ানো। রোদচড়া দুপুরে ওই বাড়িতে মানুষের উপস্থিতি না পেয়ে প্রায় সব পাকা কলাগুলো তার পেটে ভরলো।

পরের দিনে আবারও কলার লোভে তার আগমন। দ্বিতীয় দিন অর্ধেক কাঁচা কলাগুলো পেকে গেছে। ওইগুলো তাকে তীব্রভাবে আকর্ষণ করলো। তবে ওইগুলো খাবার সময় বাড়ির গৃহকর্তা তা দেখে ফেললেন।

 
তৃতীয় দিন পাকা গুলো তার দরজার পাশে এমনভাবে রাখলেন যাতে বাইরে থেকে ভেতরে কে রয়েছে তা দেখা না যায়। তারপর অনুরূপভাবে প্রথম এবং দ্বিতীয় দিনের ফলাফলকে অনুস্মরণ করতে গিয়েই গৃহকর্তার লাঠির আঘাত পড়লো তার মাথা। পর্যায়ক্রমে কয়েকটি ক্ষোভের তীব্র আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল বনারটি শরীর।   এটি বানরমৃত্যুর বাস্তব একটি গল্প।

 
বনের প্রতিটি ফলেই রয়েছে বন্যপ্রাণির অধিকার। কিন্তু কোথায় বনে ফলে গাছ? যা-ও রয়েছে তাতেও মানুষেরই লোভ-লালসা বেশি। তা না হলে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের কাঠালগুলোও মানুষ পেড়ে নেবে কেন?

 
লাউয়াছড়াতে বন্যপ্রাণির ফলের সম্ভারবৃদ্ধিতে শুক্রবার (২৬ মে) ‘একটি বাংলানিউজ উদ্যোগ’ হিসেবে সকাল ১০টায় ফলদ বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম শুরু হয়। প্রায় শতাধিক চারা রোপণ করা হয়। বন ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণে লাউয়াছড়ায় গাছ লাগানোসহ নানা উদ্যোগ বাংলানিউজ আগেও নিয়েছে এবং নিয়ে চলেছে। এটি সেই ধারাবহিকতারই অংশ।

 
বাংলাদেশে অনলাইন নিউজপোর্টালের প্রতিষ্ঠাতা এবং বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন নিজহাতে পরিবেশ উপকারী এবং পাখির খাবার জোগানকারী ‘জাতনিম’ চারা লাগিয়ে কার্যক্রমের শুভ সূচনা করেন। পরে তিনি ‘আমলকি’, ‘হরিতকি’ এবং ‘বট’ গাছের চারা রোপণ করে লাউয়াছড়ায় বন্যপ্রাণির খাদ্যসম্ভার বৃদ্ধিতে অনুকরণীয় ভূমিকা রাখেন।

বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মিহির কুমার দো লাগান ভেষজগুণসম্পন্ন ফল ‘জলপাই’।

 
মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণি রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) তবিবুর রহমান লাগান সুস্বাদু ফল আতা ফলের চারা এবং বিশিষ্ট সমাজসেবক ও বাংলানিউজের সুহৃদ আবু সিদ্দিক মো. মুসা লাগান বন্যপ্রাণির খাবারসমৃদ্ধ ফল চালতা।

 
একদিন বাংলানিউজের উদ্যোগে রোপিত ফলদগাছগুলো বড় হবে। ‘বট’ গাছের  কথাই যদি ধরি – সেই বট গাছটি একসময় বড় হবে। ধরবে হাজার-হাজার, লক্ষ-লক্ষ ফল। হলুদ সুস্বাদু গোল গোল ফলের টানে সেই গাছে এসে বসবে শত-শত পাখি। পাখিদের অভয়ারণ্যে ভরে উঠবে আমাদের প্রিয় লাউয়াছড়া।


ততদিন পর্যন্তই আমাদের অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষাপালা। পাখি প্রকৃতির সবচেয়ে বড় বন্ধু। তারা বৃক্ষ ছড়িয়ে পূর্ণ করে পৃথিবীর ঋণ।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৪ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৭
বিবিবি/বিএস

 

 

 

 

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।