ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

লোকে চেনে না যে বাবুই পাখিকে

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৭
লোকে চেনে না যে বাবুই পাখিকে লোকে চেনে না যে বাবুই পাখিকে/ছবি-ইনাম আল হক

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): বাংলাদেশের নামে পাখিটির নামকরণ। কিন্তু আমরা তেমনভাবে চিনি না একে। এক সময় দেশজুড়ে বড় বড় ঘাস আর নলবনের বাতাসে দুলে দুলে ওঠা পাখিটির অস্তিত্ব আজ বড়ই বিপন্ন।

প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ‘বাংলা-বাবুই’ নামের এ পাখিরা।

এক সময়ের জনমানবহীন হাওর-বিল বা পাহাড়ি বনের পরিত্যক্ত জায়গাটুকুতেও ভাগ বসিয়েছে মানুষ।

অপ্রয়োজনে তারা ক্ষতি করছে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা নানা জাতের ঘাস আর লতাগুল্মের। লোকে চেনে না যে বাবুই পাখিকে/ছবি-ইনাম আল হক আজ আর তাই বড় বড় ঘাস আর লম্বা হয়ে বেড়ে ওঠা দীর্ঘ নলবনে এদের দেখা পাওয়া না।

অব্যবহৃত জায়গাগুলোতে অবহেলায় প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া ঘাস আর নলের বনের ওপর নির্ভরশীল পাখিসহ নানা জীববৈচিত্র্য। এদেরই এক প্রতিনিধি  ‘বাংলা-বাবুই’। একটা সময় ছিল, যখন আমাদের গ্রাম-বাংলা বা বনে-জঙ্গলে প্রচুর পরিমাণে তাদের বিচরণ ছিল। বর্তমানে আমাদের অবহেলায় তারা দুস্প্রাপ্য হয়ে পড়ছে। তাই দেশের যেসব চর বা বন এলাকায় বাংলা-বাবুই পাখির বিচরণ রয়েছে সেসব স্থান সংরক্ষণ করে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণার সময় এসে গেছে।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা প্রখ্যাত পাখি গবেষক এবং লেখক ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘লোকে মনে করে, পাখিটিকে তারা চেনে, কিন্তু বাস্তবিক অর্থে চেনে না। অথচ পাখিটি এক সময় আমাদের গ্রাম-বাংলার সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে মিলে-মিশে ছিল’। লোকে চেনে না যে বাবুই পাখিকে/ছবি-ইনাম আল হক তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে তিন প্রজাতির বাবুই এর মধ্যে বাংলা-বাবুইরাই একেবারে হারিয়ে যাচ্ছে। পাখিটির নামকরণ আমাদের দেশের নামেই করা হয়েছে’।

‘যেটিকে আমরা তালগাছ বা অন্যান্য গাছে ঝুলিয়ে বাসা করতে দেখি, ওই পাখিটির নাম  ‘দেশি-বাবুই’ (Baye Weaver)।  এর সংখ্যা ভালোই বলে এ বাবুইয়ের কথাই লোকের বেশি জানা আছে। মাঝে মাঝে দেখা পাওয়া অন্য বাবুইটি হলো  ‘দাগি বাবুই’  (Streaked Weaver)। আর ‘বাংলা-বাবুই’ (Black-breasted Weaver) এর বৈজ্ঞানিক নামটিও বাংলাদেশের নামেই ‘প্লসিয়াস বেঙ্গাল্যান্সিস’ (Ploceus benghalensis)।

‘এ পাখিটি একেবারেই হারিয়ে যাচ্ছে। সেজন্য লোকে একে চেনেও না’।

ইনাম আল হক বলেন, ‘আমাদের দেশে মানুষ বেশি, পাখির জায়গা কম। এরা এখনো কোনোমতে টিকে আছে সিলেটের চা বাগানগুলোর বিভিন্ন টিলা-পাহাড়ের বাঁশ আর ঘাসের মাঝে, চট্টগ্রাম হিলট্র্যাকের উঁচু ঘাসের বন ও কর্ণফুলী নদীর কোনো কোনো এলাকা এবং রাজশাহীর পদ্মা-যমুনার বিভিন্ন চর এলাকায়’।   

‘বাংলাদেশই পাখিটির শেষ আশ্রয়স্থল। কারণ, পৃথিবী থেকেও বিপন্ন হয়ে গেছে ওরা। ভাগ্যক্রমে এরা এখনো সিলেট, চট্টগ্রাম এবং রাজশাহীর কিছু জায়গাগুলোতে অল্প সংখ্যায় টিকে আছে। আমাদের চারপাশে যেহেতু ঘাস নেই, তাই এর অস্তিত্বও এখন প্রচণ্ড হুমকির মুখে’। লোকে চেনে না যে বাবুই পাখিকে/ছবি-ইনাম আল হক তিনি বলেন, ‘এরা উঁচু নলবন বা কাঁশবনে বাসা করে। তাই বাতাসে যেন বাসাটি বেশি দোল না খায়, সেজন্য তারা তাদের নির্মাণাধীন বাসায় কাদার প্রলেপ লাগিয়ে দেয়। এদের বাসাটি দেখতে দেশি-বাবুই এর বাসার মতোই’।

‘পাখিটিকে চেনার সহজ উপায় হলো, ওর বুকের ওপরে কালো রঙের বড় একটি ‘বেল্ট’ এর মতো দাগ রয়েছে। বাংলা-বাবুই আকারে চড়ুইয়ের মতো। দৈর্ঘ্য ১৪ সেন্টিমিটার। দেহ বাদামি রঙের। বাদামি পিঠে অনেক কালচে খাড়া লাইন এবং বুকে চওড়া কালো দাগ। পেট ফিকে-বাদামি, পা হলদে’।

এই পাখি বিজ্ঞানীর মতে, মানুষকে পাখিটিকে চিনতে হবে। নলঘাস, হোগলা বা কাঁশের মধ্যেই সে বাসা করে। তাই একে বাঁচিয়ে রাখতে ওই এলাকাগুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে। একমাত্র মানুষের সচেতনতাই পারে বাংলাদেশের নামে বিশেষ প্রজাতির পাখিটির বংশকে টিকিয়ে রাখতে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৭

বিবিবি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।