ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

পাহাড়ের উৎকৃষ্ট ভেষজ ফল পাইন্ন্যাগুলা

মো. নুরুল করিম আরমান, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০১৩
পাহাড়ের উৎকৃষ্ট ভেষজ ফল পাইন্ন্যাগুলা

লামা (বান্দরবান): লুকলুকি বা পাইন্ন্যাগুলা একটি মিষ্টি ও সুস্বাদু দেশীয় ফল। দেখতে আঙুর ফলের মতো।

এ ফলে রয়েছে প্রচুর টসটসে রস। তাই স্থানীয় ভাষায় এর নাম ‘পাইন্ন্যাগুলা’।

ফলটির বৈজ্ঞানিক নাম Fiacoartia Gargomaj. ইংরেজিতে একে বলে Coffee Plant. পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া ফলটি অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। পাকা পাইন্ন্যাগুলা ফল লাল টুকটুকে। তবে কিছুটা বেগুনি রঙেরও ছোপ রয়েছে। এর বর্ণ ও আকার বড় আঙুর ফলের মতোও বলা যায়। ভেতরে ৫-৬টি খুবই ছোট বীজ থাকে। যিনি একবার এর স্বাদ নিয়েছেন, তিনি বার বার খেতে চাইবেন। শিশু ও নারীদের কাছে পাইন্ন্যাগুলা খুবই প্রিয় খাবার।

বান্দরবান কৃষি অফিস সূত্র জানায়, পাইন্ন্যাগুলা ফলে রয়েছে শতকরা ৬০ ভাগ আয়রন। সালফার, ফসফেট ছাড়াও ১০ ভাগ রয়েছে ভিটামিন সি। অন্যান্য উপাদানও রয়েছে সমভাবে।

ওষুধি ফল হিসেবে পাইন্ন্যাগুলার বেশ কদর রয়েছে। এ ফল খেলে হজমশক্তি ও লিভারের কার্যক‍ারিতা বৃদ্ধি পায়। হৃদরোগীদের জন্য এটি উপকারী ভেষজ ঔষধের কাজ করে। তাছাড়া এর পাতা ও ফল ডায়রিয়া রোগের প্রতিরোধক। শুকনো পাতা ব্রংকাইটিস রোগের জন্য বিশেষ উপকারী। এর শিকড় দাঁতের ব্যাথা নিরাময়ে কাজ করে।

 পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ছাড়াও চট্টগ্রামের পটিয়া, বোয়ালখালী ও চন্দনাইশের পাহাড়ি ভূমিতে প্রাকৃতিকভাবে এ ফলের গাছ জন্মায়। বছরের মে মাসের শুরুতে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। জুলাই মাসের মাঝামাঝি পাইন্ন্যাগুলা ফল পাকা শুরু হয়। তখন এখানের বিভিন্ন হাটবাজারে সচারাচর বিক্রি হয়ে থাকে এ ফল।

তবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পাইন্ন্যাগুলা চাষে এখনো কেউ এগিয়ে আসেনি।

মৌসুমি ফল ব্যবসায়ীরা বাগান মালিকদের কাছ থেকে ফলগুলো সংগ্রহ করে দেশের সমতল অঞ্চলে নিয়ে বিক্রি করেন। তবে কিছু কিছু বাগান মালিক নিজেরাই হাট বাজারে পাইন্ন্যাগুলা বিক্রি করেন। বর্তমানে এ ফল বাজারে প্রতি কেজি ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পার্বত্য লামা পৌর এলাকার ফুটেরঝিরি, নয়াপাড়া, মধুঝিরি, সাবেক বিলছড়ি ও চেয়ারম্যান পাড়ার বিভিন্ন পাহাড় সরেজমিন ঘুরে প্রায় অর্ধশত পাইন্ন্যাগুলা গাছ দেখা যায়। এছাড়া উপজেলার রূপসীপাড়া, গজালিয়া, লামা সদর, ফাঁসিয়াখালী, আজিজনগর ও সরই ইউনিয়নের বিভিন্ন পাহাড়ে সহস্রাধিক পাইন্ন্যাগুলা গাছে রয়েছে।

এসব গাছে প্রচুর পাইন্ন্যাগুলা ধরেছে। তবে সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ না থাকায় এ ফল গাছ আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান।

লামা বাজারের পাইন্ন্যাগুলা বিক্রেতা মোহাম্মদ শাহীন বাংলানিউজকে জানান, ৮ বছর আগে পৌর এলাকার মধুঝিরিতে তার ফলদ বাগানের এক কোণে একটি পাইন্ন্যাগুলা গাছ প্রাকৃতিকভাবে জন্মে। চলতি মৌসুমে এ গাছে প্রায় দুই মণ পাইন্ন্যাগুলা ধরেছে। প্রতিকেজি ৯০ টাকা হারে ৭ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেছেন তিনি।

তিনি আরও জানান, আম, জাম ও কাঁঠালের মতো পাইন্ন্যাগুলা ফলের গাছ দীর্ঘ মেয়াদী হয়। বীজ থেকে চারা জন্মে। কলমের মাধ্যমেও এর ফলের চারা উৎপাদন করা যায়।

এবিষয়ে লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, লুকলুকি বা পাইন্ন্যাগুলা পাহাড়ি অঞ্চলেই জন্মে। এটি একটি উৎকৃষ্ট ভেষজ ফল। এর ওষুধি গুণাগুণ রয়েছে। এখানের আবহাওয়া ও মাটি লুকলুকি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে পতিত পাহাড়গুলোতে বাণিজ্যিকভাবে পাইন্ন্যাগুলা চাষ করা গেলে ভেষজ উদ্ভিদের চাহিদা প‍ূরণের পাশাপাশি দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।