ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

হাওর-বিলে জন্ম নেওয়া ‘পানি ফল’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট     | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০২৩
হাওর-বিলে জন্ম নেওয়া ‘পানি ফল’ পুষ্টিকর পানি ফল।

মৌলভীবাজার: রাস্তার ধারে, বাজারের কোণে ভ্যানগাড়ি বা ঠেলাগাড়িতে করে বিক্রি হচ্ছে মৌসুমি ‘পানি ফল’। এই ফলের অপর নাম ‘শিংড়া’।

কেউ কেউ আবার ‘পানি শিংড়া’ নামেও বলে থাকেন। প্রাকৃতিক এই ফলটি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেক ফেরিওয়ালা। আলাপকালে তারা জানান, এই ফলটি দৈনিক একশ থেকে দেড়শ কেজি পর্যন্ত বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছেন তারা।

সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহরের বিভিন্ন সড়কে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যবসায়ী ভ্যানগাড়ি নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ‘পানি ফল’ বিক্রি করছেন। তবে দেশীয় সুস্বাদু এ ফলটি কিনতে ক্রেতাদের তেমন একটা ভিড় চোখে পড়ে না।

‘পানি ফল’ বিক্রেতা ওমর ফারুক বলেন, পানি ফলটি ঢাকা থেকে ছয়শ কেজি পাইকারি কিনে এনে প্রায় তিন-চার দিনে সব বিক্রি করে ফেলেছি। খুচরা প্রতি কেজি ৫০ টাকা করে বিক্রি করেছি। এতে ভালোই লাভবান হয়েছি।

আশরাফুল নামে আরেকজন ব্যবসায়ী বলেন, আমি ভ্যানগাড়ি ঘুরে ঘুরে আট ঘণ্টায় ১২০ কেজি পানি ফল বিক্রি করেছি। গত এক সপ্তাহ আগে রাজধানীর কারওয়ানবাজার থেকে পাঁচ হাজার কেজি এই ফলটি পাইকারি কিনে এনে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন এলাকায় পাঁচটি ভ্যানগাড়ির মাধ্যমে বিক্রি করছি। দৈনিক ৪-৫ বস্তা ফল বিক্রি করতে পারছি। প্রতিকেজি ৫০ টাকা দরে প্রত্যেক ভ্যানে ১০০-১৬০ কেজি পর্যন্ত দৈনিক বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে।



‘অপরিচিত ফল’ হিসেবে উল্লেখ করে আরেক ফল বিক্রেতা বলেন, এই ফল শ্রীমঙ্গল উপজেলার কোনো কৃষক চাষ করেন না। তাই মানুষ কম চেনে। ঢাকা, সাতক্ষীর, খুলনা, বগুড়া থেকে আমি বস্তাচুক্তি করে প্রতি শীত মৌসুমে নিয়ে আসি। শহরে না চিনলেও ক্রেতা আছে। আমি গত এক সপ্তাহে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে প্রায় এক হাজার কেজি ফল বিক্রি করতে পেরেছি।

ফল বিক্রেতা দেলওয়ার হোসেন বলেন, আমি বিভিন্ন ফলের পাশাপাশি মৌসুম ফলও বিক্রি করি। গত কয়েকদিন আগে পানি ফল এনেছি। এই ফলটির মোটামুটি চাহিদা রয়েছে।

পানি ফল কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, একশ টাকা দিয়ে দুই কেজি কিনলাম। আমার ছেলেমেয়েরা এগুলো চেনে না। এই ফল আমাদের দেশের অপ্রচলিত ঐতিহ্যবাহী খাবার। তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খাবো। এই ফলটি খেতে খুব মজা। এটি পুরোপুরিভাবে পানীয় ফল। কাচা অবস্থায় এ ফল খাওয়া যায়।

আবার সিদ্ধ করে, রান্না করে কিংবা প্রক্রিয়াজাত করেও খাওয়া যায়। পানি ফল আমাদের আগামী প্রজন্ম চিনবে কি না সন্দেহ বলে জানান তিনি।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মহিউদ্দিন বলেন, পানি ফল একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। এ ফলগুলোতে শিংয়ের মতো খাঁজকাটা থাকে বলেই ‘শিংড়া’ নামক রয়েছে। কোথাও কোথাও একে ‘পানি সিংগাড়া’ নামেও ডাকা হয়। ইংরেজিতে বলা হয় Water Chestnut।  

তিনি আরও বলেন, বীজ থেকে পানি ফলের গাছ জন্মে। সাধারণত পাকা ফলের বীজ প্রথম দুই বছরের মধ্যেই গজিয়ে যায়। তবে ১২ বছর পর্যন্ত পানি ফলের বীজ গজানোর ক্ষমতা রাখে। পানি ফলের ফুল ক্ষুদ্রাকার ও সাদা রঙের। ফুল উভয়লিঙ্গ। ফল চাষ শুরু হয় জুন-জুলাই মাসে এবং ফল সংগ্রহ শুরু করা হয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পানি ফল সংগ্রহ ও বাজারজাত করা যায়।

কৃষকরা পানি ফল আবাদ করেন না। এগুলো প্রাকৃতিকভাবেই জন্মায়। এই দেশীয় ফল চাষ করলে স্বল্প পুঁজিতে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। বিভিন্ন জেলায় এই ফলের বাণিজ্যিক চাষ হয়। এতে চাষিরা বিভিন্ন জেলায় ফল সরবরাহ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন বলে জানান এই কৃষিবিদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০২৩
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।