ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

কাচির মতো বাঁকা ঠোঁটের পাখি ‘নীলদাড়ি-সুইচোরা’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২৩
কাচির মতো বাঁকা ঠোঁটের পাখি ‘নীলদাড়ি-সুইচোরা’ ডানা মেলেছে নীলদাড়ি-সুইচোরা। ছবি: তিমু হোসেন

মৌলভীবাজার: বনের মাঝে এগিয়ে যেতে যেতে সুন্দর আকাশটা হঠাৎ মেঘলা হয়ে  এলো। বৃষ্টি আসবে এরূপ একটা আভাস।

কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে না পৌঁছেই পুনরায় বনের পায়ে চলা পথ ধরে উল্টোদিকে এগিয়ে যাওয়া।
 
পায়ে চলা পথের মাঝারি এক ডালে হঠাৎই নীলদাড়ি-সুইচোরা পাখির দেখা! বিরতি তার ৪/৫ সেকেন্ড! এতটাই দ্রুত তার অদৃশ্যে মিলিয়ে যাওয়ার গতি।  

ভারি সুন্দর রঙের পাখি সুইচোরা (Bee-eater)। পাখিটি খুব বড় নয়, আবার ছোটও নয়। মাঝারি সাইজের। তবে বাংলাদেশে যে চার প্রজাতির সুইচোরা পাওয়া যায় তার মধ্যে ‘নীলদাড়ি-সুইচোরা’ সবচেয়ে বড় আকারের পাখি।  

আকারে আমাদের ভাত শালিক পাখির থেকেও বড় মতো অনেকটা। এর আকৃতি ৩১ সেন্টিমিটার থেকে ৩৪ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। এজন্য কেউ কেউ এ পাখিটিকে ‘বড় সুইচোরা’ নামেও উল্লেখ করে থাকেন।  

এছাড়া এ পাখিটি আমাদের দেশের চিরসবুজ বনের প্রাচীন বাসিন্দা বলে কেউ কেউ আবার ‘পাহাড়ি সুইচোরা’ বলেও ডাকেন।  

তবে পাখিগবেষণামূলক সংগঠন ‘বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব’ ‘মেরোপিডি’ পরিবারভুক্ত অন্তর্গত ‘নিকটিওরনিস’ গণের এক প্রজাতির পতঙ্গভূক এ পাখিটিকে হিসেবে নামকরণ করেছে। এর ইংরেজি নাম Blue-bearded Bee-eater এবং বৈজ্ঞানিক নাম Nyctyornis athertoni.

অপূর্ব রঙে ভরপুর এ পাখিটিকে সচারচর দেখতে পাওয়া যায় না। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ, বাংলাদেশ (আইইউসিএন) এই প্রজাতিটিকে Least Concern বা আশঙ্কাহীন বলে ঘোষণা করেছে। এ পাখিটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো কাচির মতো বাঁকানো এর ঠোঁট।

প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক এ বিষয়ে বলেন, পৃথিবীতে ‘মেরোপিডি’ পরিবারের ৩টি গণে ২৬ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে আছে ২টি গণের ৪ প্রজাতির সুইচোরা (Bee-eater) পাখি। আমরা এ পাখিটির নামকরণ করেছি ‘নীলদাড়ি-সুইচোরা’।  

পাখিটির শারীরিক বৈচিত্র্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ পাখিটির দেহ নীল-সবুজ। থুননি ও গলায় ঝুলন্ত লম্বা পালকের ঘন-নীল দাড়ি। কপাল নীল। চঞ্চু কালচে-সবুজ। মাথা, পিঠ, ডানা ও লেজ সবুজ। হালকা হলদে পেটে সবুজ ছিটা দাগ। লেজতল মেটে হলুদ এবং পা সবুজ। এতটাই রঙের বৈচিত্র্য পাখিটির। স্ত্রী এবং পুরুষ পাখি দেখতে এক রকম।

পাখির প্রাপ্তি এবং খাদ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, নীলদাড়ি-সুইচোরা আদ্র পাতাছড়া ও অপ্রধান চিরসবুজ বন, বনের নির্জন জলধারা এবং আবাদযোগ্য জমিতে বিচরণ করে। সচরাচর একা বা জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়। উঁচু জায়গা থেকে বাতাসে উড়ে শিকার ধরে খায়। তাদের খাবার তালিকায় রয়েছে পাহাড়ি বোলতা, সাধারণ মৌমাছি, গুবরে পোকা, ফড়িং এবং ফুলের মিষ্টি রস।

বাংলাদেশে এ পাখিটি ‘দুর্লভ আবাসিক পাখি’ হিসেবে তালিকাভুক্ত। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া নীলদাড়ি-সুইচোরার বৈশ্বিক বিস্তৃত রয়েছে বলে জানান পাখিবিদ ইনাম আল হক।
 
বাংলাদেশ সময়:০৭২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২৩ 
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।