ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

এক লড়াকু মেয়ের স্বল্প জীবন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২২
এক লড়াকু মেয়ের স্বল্প জীবন

কলকতা: কোনো রুপালি পর্দার দৃশ্য নয় বাস্তবেই সূর্যাস্ত হলো অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মার জীবনের। হতে পারলেন না ফিনিক্স পাখি।

তাঁরাদের দেশেই চলে গেলেন অভিনেত্রী। টানা কুড়ি দিন দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করলেও, ঘটল না কোনও মিরাকেল।  

২০১৬ সালে অস্থিমজ্জার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে দিল্লিতে চিকিৎসা শুরু হয় তার। সেই কঠিন লড়াই হাসিমুখে জয় করেন তিনি। ফের ২০২১ সালে ডান ফুসফুসে টিউমার। কেমোথেরাপির মাধ্যমে সেই লড়াইও জেতেন ঐন্দ্রিলা। কিন্তু গত ১ নভেম্বর থেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয় অভিনেত্রীর। ভর্তি হন কলকাতার নারায়নী হাসপাতালে। তারপর থেকেই রোজই টানা লড়াই। অবশেষে মাত্র ২৪ বছর বয়সেই জীবনযুদ্ধে হার মানতে হলো তাকে।

কেমন ছিল ঐন্দ্রিলার অভিনয় জীবনের শুরুটা? ২০১৭ সালে কার্লাস বাংলায় ‘ঝুমুর’ ধারাবাহিকে অভিনয়ের মাধ্যমে ছোট পর্দায় অভিষেক হয় ঐন্দ্রিলার। সেখান থেকেই সব্যসাচীর সঙ্গে বন্ধুত্ব। এরপর সান বাংলা চ্যানেলে ‘জিয়নকাঠি’ ধারাবাহিকে আবারো তাকে দেখা যায় মুখ্য চরিত্রে। সম্প্রতি ক্লিক ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ‘ভাগার’ ওয়েব সিরিজে দেখা গিয়েছিল ঐন্দ্রিলাকে। করেছেন বাংলা সিনেমাও। বলে রাখা ভালো এই ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেছেন তার বন্ধু সব্যসাচীও। তবে জুটি হিসেবে তাদের দেখা যায়নি।

ঐন্দ্রিলার অভিনয় জীবনে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার লড়াইটা খুব সহজ ছিল না। ২০১৫ সালের একাদশ শ্রেণীতে পড়ার সময়ই ক্যানসারে আক্রান্ত হন ঐন্দ্রিলা। এই বছর জন্মদিনের দিনই তার এই অসুস্থতার সম্পর্কে জানতে পারেন ঐন্দ্রিলা এবং তার পরিবার। এরপর দীর্ঘ চিকিৎসা পর্ব। তার বয়সী সব ছেলেমেয়েরা যখন স্কুল পড়াশোনা খেলার মাঠে ব্যস্ত তখন ঐন্দ্রিলার দিন কেটেছে রবিঠাকুরের অমলের মতো।

চিকিৎসকদের কথা অনুযায়ী, তার হাতে সময় ছিল ৬ মাস। কিন্তু প্রথমবার ক্যানসারকে জয় করে ফেরেন ঐন্দ্রিলা। চুটিয়ে কাজ করেন বাংলা ধারাবাহিকে। কিন্তু এর ঠিক পাঁচ বছর পর ফের ঐন্দ্রিলার শরীরে বাসা বাঁধে মরণ রোগ। উপযুক্ত চিকিৎসা আর বন্ধু সব্যসাচীর ভালোবাসা কাজ করে জিয়নকাঠির মতো। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন ঐন্দ্রিলা। ভালোই কাটছিল প্রেমিক বন্ধু সব্যসাচীর সঙ্গে তার দিনগুলো। বন্ধু সব্যসাচীর জন্মদিনের সেলিব্রেশন রাতেই ব্রেনস্ট্রোকে হয় ঐন্দ্রিলা। তারপর থেকে হাসপাতালে ২০ দিনের লড়াই। অবশেষে শেষ হলো সেই লড়াই।

ক্লান্তি কাটিয়ে তাঁরাদের দেশে শান্তিতে থাকুক ঐন্দ্রিলা। তার লড়াকু জীবন হয়ে উঠুক অপরের অনুপ্রেরণা। বারে বারে অসুস্থ হয়েছেন ঐন্দ্রিলা। চোয়াল শক্ত রেখে প্রতিবারই সুস্থ হয়ে ফিরেছেন। কিন্তু, সব কিছুরই শেষ আছে। রোববারই (২০ নভেম্বর) ঘটল তার জীবনের সমাপনী। স্থানীয় সময় ১২টা ৫৯ মিনিটে তিনি চলে গেলেন তাঁরাদের দেশে। তার এই জীবন যুদ্ধের লড়াইয়ে বরাবরই পাশে পেয়েছেন পরিবার ও তার বন্ধু সব্যসাচীকে। কিন্তু, এই বন্ধুর জুটি প্রকাশ্যে কোনোদিন বলেননি তারা প্রেম করেন। অথচ জীবনের শেষ দিন পর্য়ন্ত ঐন্দ্রিলার পাশে ছিলেন সব্যসাচী। বাংলার মানুষের প্রশ্ন, ঐন্দ্রিলা হার মানল। এখন কী করবেন সব্যসাচী?

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২২
ভিএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।