ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

বড় অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে হাঁটছেন নোভা মিলা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৭
বড় অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে হাঁটছেন নোভা মিলা নোভা মিলা

চট্টগ্রাম: বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির জনপ্রিয় কমেডি প্রতিযোগিতা ‘হা-শো’(Ha-Show)। সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ছাত্রী নোভা মিলা। ‘হা-শো’র সিজন-৪ দ্বিতীয় রানার আপ হন নোভা।

‘হা-শো’ মাতানো চট্টগ্রামের মেয়ে নোভা মিলা এখন মূলধারার অভিনয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে চান। তার স্বপ্ন এখন বড় অভিনেত্রী হওয়ার।

‘হা-শো’ কন্যা নোভা মিলা বাংলানিউজকে বলেন, ‘কখনো কমেডি করবো চিন্তাও করিনি। শৈশব থেকেই লক্ষ্যটা আমার বড় অভিনেত্রী হওয়ার। একসময় স্বপ্ন দেখতাম সিনেমার নায়িকা হওয়ার। এখন ইচ্ছা সব মাধ্যমে কাজ করে নিজেকে একজন ভালো অভিনেত্রী হিসেবে গড়ে তোলার। ’

মানুষ হাসানো চাট্টিখানি কথা নয়, বিশ্ববরেণ্য অনেক কমেডিয়ানের মুখে অনেকসময়ই এমন কথা উচ্চারিত হয়েছে। নোভা মিলা মানুষ হাসাতে পারেন, কিভাবে অর্জন করলেন এই গুণ, সেটা আবার ভিন্ন গল্প। এই গল্প নোভার ‘হা-শো’ তে যাওয়ারও গল্প।

শুনুন নোভা মিলার মুখেই, ‘আব্বু একবার অসুস্থ হলে ডাক্তাররা বলেছিল উনাকে যত হাসাতে পারবেন তত আয়ু বাড়বে। তখন মাথায় আসে হাসি দিয়ে যদি আব্বুকে সুস্থ রাখা যায়, তাহলে মেয়ে হিসেবে আমি সার্থক। কৌতুক সংগ্রহ করে বাসায় সে চেষ্টা করি, কিছুটা সফলও হই। পরে অংশ নিই এনটিভির ‘হা-শো’ প্রতিযোগিতায়। ’ 

শুরু থেকেই হা-শোতে যাওয়ার বিষয়ে পরিবারের সবার সাপোর্ট ছিল। তবে বাদ সেধেছিলেন সতীর্থরা। নোভা বলেন, ‘প্রথমে যখন চট্টগ্রামে হা-শো’র অডিশনে অংশ নেই, জানাশোনা সবাই বলেছে, এটা তোমার জন্য না, তোমাকে দিয়ে কমেডি হবে না। অভিনেত্রী হওয়ার লক্ষ্য যখন, তখন কৌতুক অভিনয় কেন পারবো না? রাতদিন এক করে নেমে পড়ি। প্রথম পর্ব প্রচারিত হবার পর যেভাবে উৎসাহ পেলাম তা কল্পনাও করতে পারিনি। শেষে সফলই হলাম। ’
নোভা মিলা
গত মাসের ৮ তারিখ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালেতে দ্বিতীয় রানারআপ  জয় ছিনিয়ে আনেন তিনি। প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রামের ১১ জন সারাদেশের ৩৩ জন অংশ নেয়। গ্র্যান্ড ফিনালেতে প্রতিদ্বন্দিতা করে নোভাসহ ৬ জন। প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন বরিশালের মহারাজ ইমন, প্রথম রানারআপ নজরুল ইসলাম। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, কথাবন্ধু মাজহারুল ইসলাম ও অভিনেত্রী নিপুণ।

‘হা-শো’র অর্জনটা সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় অবদান রাখবে বলে নোভার বিশ্বাস।   তিনি বলেন,  এই প্রতিযোগিতা থেকে অনেক কিছু শিখছি। মানুষকে হাসানো সহজ নয়, অনেক কঠিন কাজ। সেই কঠিন কাজটা করতে গ্রুমিং সেশনে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। ’

নোভা জানান, ক্যাম্প জীবন আর প্রতিযোগিতা পর্বে সবার আকুন্ঠ সহযোগিতা পেয়েছেন। এনটিভি কর্তৃপক্ষ, গ্রুমার, প্রতিযোগীসহ পুরো হা-সো পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞ জানান এই অর্জনের জন্য।  

নোভার মতে, ‘হা-শো’তে অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতা অভিনয় জীবনে এগিয়ে যাবার পথ সহজ করেছে। বেড়েছে আত্মবিশ্বাসও।

সাংস্কৃতিক পরিবারের মেয়ে নোভা মিলা। বাবা ওস্তাদ অরিন্দম একজন সংগীত পরিচালক। পেশায় শিক্ষিক মা কুমকুম মুক্তা ছিলেন নৃত্যশিল্পী। বড় বোন নিহারিকা নিহা একসময় চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্রে খবর পড়তেন।

স্বপ্ন যখন অভিনেত্রী হওয়ার, নাট্যকলা নিয়েই পড়াশুনা করছেন নোভা মিলা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগে তৃতীয় বর্ষে এবং শিল্পকলা একাডেমি নাট্যকলায় শেষবর্ষে। মেধাবী শিক্ষার্র্থীও। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছেন।
নোভা মিলা
অভিনয় নয়, ছোটবেলায় নোভা মিলার শুরুটা হয়েছিল নাচ আর গান দিয়ে। মায়ের আগ্রহে নাচ আর বাবার আগ্রহে গান। শিখেছেন ভরত নাট্যম আর উচ্চাঙ্গ সংগীত। পাশাপাশি স্কুলের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাগুলোতে অভিনয় অংশ নিতেন নিজের একান্ত আগ্রহে। বরাবরই তার দখলে থাকতো প্রথম স্থানটি।

অর্জনের ঝুলিতে আগেরই আছে অনেক পুরস্কার। ছোটবেলায় মুকুল ফৌজের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় ২০০২ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত নাচে ৪ বার ও গানে ২ বার স্বর্ণপদক অর্জন করেন। ২০১০ সালে মার্কস অলরাউন্ডারে চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম হয়েছিল। ২০১১ সালে বিএনসিসির কর্ণফুলী রেজিমেন্টের সেরা ক্যাডেট হয়ে শ্রীলঙ্কায় সার্কের ট্রফি ক্যাম্পে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানেও নাচ, গান দিয়ে সেরা ক্যাডেটের একজন হয়েছিলেন। ২০১৬ সালে এটিএন বাংলার ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতায় হিরোইন ক্যাটাগরীতে হয়েছিলেন সেরা ফোর।
নোভা মিলা
গত বছরই ওয়াহিদ তারেক পরিচালিত ‘আলগা নোঙর’র চলচ্চিত্রে একটি বিশেষ নাচের দৃশ্যে অভিনয় করেন নোভা মিলা। ছবিটি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

২০১২ সাল থেকে যুক্ত হন র‌্যাম্প মডেলিংয়ে। এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম-ঢাকায় অসংখ্য ফ্যাশন শোতে অংশ নিয়েছে। ফটোশুট করেছেন অনেক। কথা চলছে টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের। মূলত মডেল হিসেবেই তার পরিচিতিটা বেশি চট্টগ্রামে।

সাম্প্রতিক সময়ের মডেলিং নিয়ে নোভা মিলা বলেন, সঠিক পথ আর সুযোগের কারনে এগুতে পারছেনা চট্টগ্রামের অনেক প্রতিভাবান মডেল। অনেকটা দিশেহারা তারা। ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছে কেউ কেউ। সমস্যা আমাদের মধ্যেও আছে। অনেকে মডেল হতে চান রাতারাতি। কাজ করতে চান সারা বছরই। আমি মনে করি নিজেকে ঠিক করতে হবে কোনপথে এগবো। ভালো কাজ বছরে একটা করলেও চলে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৭ 

আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।