এক বছর পর শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) ‘আমাদের সাবিনা ইয়াসমিন: আমি আছি থাকব’ শিরোনামের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মঞ্চে ফিরেছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন। তবে গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই লুটিয়ে পড়েন কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পী।
বর্তমানে কেমন আছেন তিনি? এ বিষয়ে সাবিনা ইয়াসমিনের মেয়ে সংগীতশিল্পী ইয়াসমিন ফায়রুজ বাঁধন বলেন, সাবিনা ইয়াসমিনকে চিকিৎসকেরা এখনো পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। তাকে আরও কয়েক দিন হাসপাতালে থাকতে হবে।
ইয়াসমিন ফায়রুজ বাঁধন আরও জানান, আজ একই মঞ্চে গাওয়ার কথা ছিল সাবিনা ইয়াসমিনের। এছাড়া আসছে ১৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের মঞ্চে গাওয়ার কথা রয়েছে বরেণ্য এই শিল্পীর। তবে হাসপাতালে ভর্তি থাকা ও চিকিৎসকের পরামর্শে আপাতত কোনো অনুষ্ঠানে গাওয়া হবে না তার।
দীর্ঘ এক বছর পর গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকার মঞ্চে গাইতে ওঠেন সাবিনা ইয়াসমিন। সোয়া এক ঘণ্টা গান গেয়েছিলেনও। আমন্ত্রিত দর্শক-শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে শুনছিলেন তার গান। এমন সময় হঠাৎ মঞ্চে অসুস্থ হয়ে পড়েন কিংবদন্তি এই শিল্পী।
সবশেষ ২০২৩ সালের শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, মেলবোর্ন ও ব্রিসবেনে একাধিক স্টেজ শো করেন সাবিনা ইয়াসমিন। এরপর আর তাকে মঞ্চের গান পরিবেশনায় পাওয়া যায়নি। এ সময় চিকিৎসাতেও ছিলেন সাবিনা।
এদিকে, সাবিনা ইয়াসমিন শেষ প্লেব্যাক করেছেন প্রয়াত চিত্রনায়িকা ও নির্মাতা কবরী পরিচালিত ‘এই তুমি সেই তুমি’ সিনেমার ‘দুটি চোখে ছিল কিছু নীরব কথা’ শিরোনামের একটি গানে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে গানটিতে কণ্ঠ দেন তিনি। এ ছাড়া কবরীর ‘এই তুমি সেই তুমি’ সিনেমার চারটি গানে সুরও দেন সাবিনা ইয়াসমিন। এর মাধ্যমে ক্যারিয়ারে প্রথমবার তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
জেনে রাখা ভালো, মাত্র সাত বছর বয়সে স্টেজে গান শুরু করেন সাবিনা ইয়াসমিন। এরপর প্রায় পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে বাংলা গানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে যাচ্ছেন তিনি। দেশের গানেই তার যে অবদান, তা দিয়েই বাংলার বুকে বেঁচে থাকবেন শত শত বছর।
১৯৬২ সালে এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ সিনেমাতে শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম গান গাওয়ার সুযোগ পান সাবিনা ইয়াসমিন। আর ১৯৬৭ সালে প্রথম প্লেব্যাক করেন আমজাদ হোসেন ও নুরুল হক বাচ্চু পরিচালিত ‘আগুন নিয়ে খেলা’ চলচ্চিত্রে। এরপর অসংখ্য সিনেমায় প্লেব্যাক করেছেন তিনি।
১৯৭১ সালে নঈম গহরের লেখা ও আজাদ রহমানের সুরে সাবিনা ইয়াসমিনের ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’ গানটি গেয়েছিলেন। এই গানটি মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম প্রেরণা জুগিয়েছিল।
সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া গানের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। তার জনপ্রিয় গানের তালিকায় রয়েছে- ‘একবার যেতে দে না’, ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, ‘কতো সাধনায় এমন ভাগ্য মেলে’, ‘ও মাঝি নাও ছাইড়া দে’, ‘সুন্দর সুবর্ণ’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’, ‘মনেরই রঙে রাঙাবো’, ‘তুমি বড় ভাগ্যবতী’, ‘ও আমার রসিয়া বন্ধু রে’, ‘এই পৃথিবীর পরে’, ‘সেই রেললাইনের ধারে’, ‘আমার হৃদয়ের আয়না’, ‘তুমি যে আমার কবিতা’, ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো’, ‘বাবা বলে গেলো’, ‘একি সোনার আলোয়’ ইত্যাদি।
সাবিনা ইয়াসমিন ১৯৭৫ সালে ‘সুজন সখী’ সিনেমাতে গান গাওয়ার জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সর্বমোট ১৪ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পীর পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি। যা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ইতিহাসে অনন্য এক রেকর্ড।
এছাড়া কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বরেণ্য এই সঙ্গীতশিল্পী একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার, ১৯৮৫ সালে গানের জন্য ভারত থেকে ‘ডক্টরেট’, উত্তম কুমার পুরস্কার, ৬ বার বাচসাস পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৫
এনএটি