যশোর, কসবা (কাঠালতলা মোড়) থেকে: আড্ডাটা জমেই ছিলো। চায়ের কাপে ঝড়ও উঠেছিলো।
যশোরের কসবা এলাকায় কাঠালতলার মোড়ে এই আড্ডায় সামিল যারা তারা এখানকার একটি অভিজাত ব্যবসায়ী গ্রুপ। এখন ভোট বলে নয়, প্রতিদিনই তাদের আড্ডা বসে। আড্ডার বিষয় রাজনীতি, ব্যবসা, সমাজ থেকে পারষ্পরিক পরিবারের বিষয়াদী পর্যন্ত।
কিন্তু মঙ্গলবার মধ্যরাত প্রায় ছুই ছুই করে যে আড্ডা চললো তাতে ভোট ছাড়া কিছু ছিলো না। শুরুর দিকেই একটা ছোটখাটো তর্ক হয়ে গেলা। ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে। আড্ডার একজন মত দিলেন, এবারের নির্বাচনে যশোর পৌরসভায় ৫০ হাজার ভোটার বেশি। এটা মানতে নারাজ অন্যরা। অবশেষে যুক্তি খাটলো, পুরো যশোর আসনে এই সংখ্যার ভোটার বাড়তে পারে, কেবল পৌরসভায় যা অসম্ভব। পৌরসভায় মোট ভোটর এক লাখ ৩০ হাজারের মতো হবে বলে মত দিলেন একজন। আর আড্ডার মাঝেই শেষ পর্যন্ত একজন ফোন করেই নিশ্চিত হলেন , মোট ভোটার এক লাখ ৩৪ হাজার। যিনি আগেই এক লাখ ৩০ হাজার বলেছিলেন, তার আন্দাজ অনেকটাই কাছাকাছি ছিলো। তিনি যে আগেই বলেছিলেন বন্ধুদের সে কথা স্মরণ করিয়ে দিতে ভুললেন না।

তবে ততক্ষণে আড্ডার আলোচনা আর ভোটার সংখ্যায় নয়, চলে গেছে নতুন ভোটার প্রসঙ্গে। নতুন যারা ভোটার হয়েছেন, তারা এই নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না। সে কথায়ও কিছুটা তর্ক হলো। একজন জানালেন, তার মেয়ে এ বছরই ভোটার হয়েছেন, কার্ডও হাতে পেয়েছেন। তাহলে সে কেনো ভোট দিতে পারবে না।
উত্তর দিলেন অন্যজন। জানালেন, নির্বাচন কমিশন, নতুন ভোট নিবন্ধন শেষ করেই এই ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে, যে ৩০ ডিসেম্বরের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নতুন ভোটাররা ভোট দিতে পারছেন না।
কিন্তু কেন? সে প্রশ্নেরো উত্তর মিললো আড্ডাবাজদের একজনের কাছে। তার মতে, নিবন্ধন হলেও তাদের নাম ভোটার তালিকাভুক্ত হয়নি। ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নতুন ভোটাররা দেখবেন তাদের নাম ওঠেনি।

আলোচনাকে পৌর নির্বচানের দিকে ফেরাতে বাংলানিউজের প্রশ্নটি ছিলো এবার এই পৌরসভায় নির্বাচন কেমন জমবে? আর তার উত্তর এলো একযোগে তিন জনের মুখ থেকে। সবারই এক কথা লড়াই ভালো জমবে। এই প্রথম পৌরসভা নির্বাচন হচ্ছে দলীয় প্রতীকে। সে কারণেই নির্বাচনটা বেশি জমজমাট। অতএব লড়াই জমবে।
হুট করেই বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রসঙ্গ এসে গেলো। তবে বিদ্রোহী প্রার্থীর বিষয়ে এই আড্ডাবাজদের কেউই আস্থা রাখতে পারছেন না। একজন তো বলেই দিলেন, নির্বাচন দলীয় প্রতীকের। এখানে ভোট হবে নৌকা আর ধানের শীষে। এতে বিদ্রোহী প্রার্থীর মার্কা গুরুত্ব পাবে না। পার্টির বাইরে গিয়ে যারা নির্বাচন করছে তারা ফ্যাক্টর হবে না।
আর দলের মধ্যেও যারা বিদ্রোহীর প্রার্থীর পক্ষে রয়েছেন, তারা কিন্ত প্রকাশ্য অবস্থান নিতে পারবে না। কেউ কেউ কাছেও ভিড়তে পারবেন না। মনে যাই থাক, দলের কথাই মেনে নিতে হবে।
কথা উঠলো নির্বাচনে মিছিল নিয়েও। একজন বললেন, মিছিল ভোটের ঐতিহ্য। মিছিল না থাকাতে ভোট কিছুটা ম্লান হয়ে যায়। তার এই বক্তব্যে একমত অন্যরা। তবে, একজন ব্যাখ্যা দিলেন, কেনো মিছিল বন্ধে নির্বাচন কমিশনের অবস্থান সঠিক। তার মতে, মিছিল হলেই হামলা, প্রতিপক্ষের পাল্টা হামলার সুযোগ বেশি তৈরি হয়। এটা থেকে রক্ষা করতেই মিছিল বন্ধ করে ভালোই করেছে।
একজন বললেন, ভোটের একদম কাছাকাছি এসে কয়েকদিন হয়তো সুযোগ দেওয়াও হতে পারে।
তার এই বক্তব্যে অমত সবারই। তাদের মতে, এটা আচরণ বিধির অংশ। আর নির্বচানের আগে তা পাল্টানোর কারণ নেই।
মিছিলে হামলা প্রসঙ্গ থেকে এসে গেলো এখন যশোরে বিভিন্ন মহল্লায় যে ছোটখাটো অঘটনগুলো ঘটছে তা নিয়ে। উপস্থিত আড্ডাবাজদের প্রায় সবারই মত, এগুলো দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা দিয়ে পুরো নির্বাচনকে কলুসিত করা যাবেনা। যশোর পৌরসভায় অবস্থা বেশ ভালো। সুন্দর পরিবেশে সবাই ভোটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এটাই এই আড্ডার সবার মত।
আড্ডায় ছিলেন যারা তারা সবাই ব্যবসায়ী। দুইজন ঠিকাদার, একজন ক্লিনিক চালান, একজন পাইপের ব্যবসা করেন, অন্যজন সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট। অন্তুত চার জনের নাম জানালেন ইদুল চাকলাদারা, মশিউর রহমান, আবদুর রহমান বাদল, একেএম এনামুল করিম।
ব্যবসায়ী বলেই হয়তো ভোটের ব্যবসার দিকটা বলতেও ভুললেন না। কাছেই ভাপা পিঠাওয়ালাকে দেখিয়ে বললেন, এর এখন দৈনিক এক থেকে দেড় হাজার পিঠা বিকি্র হয়, চাওয়ালার চায়ের বিক্রিও বেড়েছে মহল্লায় মহল্লায়।
এরপর আড্ডা ভাঙলো।
বাংলাদেশ সময়: ০০১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
এমএমকে
** আউশের চিড়া ও তার কারিগরের গল্প
** প্ল্যাটফর্মে বস্তা-বস্তা ডাক, ডিজিটালে চাপ কমছে
** সাড়ে ৩ ঘণ্টা বিলম্বের কথা জানতেও দেড় ঘণ্টা বিলম্ব