ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

জিসিসি নির্বাচন: ৪৬.৫ শতাংশ কেন্দ্রে ১৫৯টি অনিয়ম

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৯ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৮
জিসিসি নির্বাচন: ৪৬.৫ শতাংশ কেন্দ্রে ১৫৯টি অনিয়ম ইডব্লিউজি’র সংবাদ সম্মেলন। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: গত ২৬ জুন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পর্যবেক্ষকরা যেসব ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছেন সেগুলোর মধ্যে ৪৬.৫ শতাংশ কেন্দ্রে ১৫৯টি নির্বাচনী অনিয়মের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছে।

এসব অনিয়মের বেশিরভাগই নির্বাচনের দিন দুপুরের পর সংঘটিত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু নির্বাচিত অনিয়মের মধ্যে রয়েছে— জোর করে ব্যালট পেপারে সিল মারা, ভোট কেন্দ্রের ৪০০ গজ ব্যাসার্ধের ভিতরে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো এবং ভোট কেন্দ্রের ভিতরে অননুমোদিত ব্যক্তির অবস্থান।

এছাড়া ইডাব্লিউজি’র  পর্যবেক্ষণকৃত ভোটকেন্দ্রে ভোট প্রদানের গড় হার ৬১.৯ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন ) জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ বিষয়ে প্রাথমিক বিবৃতি জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডব্লিউজি)।

সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক বিবৃতি পড়ে শোনান ইডব্লিউজি’র পরিচালক ড. মো আব্দুল আলীম।  

সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ বিষয়ে বলা হয়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সর্বমোট ৪২৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ইডব্লিউজি পুরো ৫৭টি ওয়ার্ডেরই ১২৯টি (৩০ শতাংশ) ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছে। ইডব্লিউজির এই ব্যাপক ভিত্তিক পর্যবেক্ষণে যেসব বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয় সেগুলো হলো— ভোট কেন্দ্র খোলার সময়কাল পর্যবেক্ষণ, ভোটগ্রহণ কার্যক্রম, ভোটকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা ও গণনা এবং ভোটকেন্দ্রের বাইরে সার্বিক পরিস্থিতি।

ভোটগ্রহণ শুরুর সময় ইডব্লিউজির নিয়োগকৃত পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বেশিরভাগ (৯৮ শতাংশ) ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত ছিল এবং নির্ধারিত সময়েই ভোটগ্রহণের জন্য ভোটকেন্দ্র উন্মুক্ত করা হয়। ভোটগ্রহণ শুরুর আগে ব্যালট বাক্সগুলো যে খালি ছিল সেটা প্রমাণের জন্য পর্যবেক্ষণকৃত সকল ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট ও পর্যবেক্ষকদের সামনে ব্যালট বাক্স খোলা হয়েছিল। ভোটগ্রহণ শুরুর সময় পর্যবেক্ষণকৃত সকল ভোটকেন্দ্রে ভোটাদের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।  

এর মধ্যে ৩৭.২ শতাংশ কেন্দ্রে ১ থেকে ২০ জন ভোটার, ২০.২ শতাংশ কেন্দ্রে ২০ থেকে ৪০ জন ভোটার এবং ৪০.৩ শতাংশ কেন্দ্রে ৪০ জনেরও বেশি ভোটারের লাইন পরিলক্ষিত হয়েছে। ভোটগ্রহণের সময়ে ইডব্লিউজির পর্যবেক্ষকরা ৯৬.৯ শতাংশ ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট এবং ৮১.৪ শতাংশ ভোটকেন্দ্রে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর এজেন্টদের দেখতে পেয়েছেন।

নির্বাচনী অনিয়ম বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ভোটগ্রহণ শুরু থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত ইডব্লিউজির পর্যবেক্ষকরা ৪৫ শতাংশ (৬০টি ভোটকেন্দ্র) ভোটকেন্দ্রে সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী অনিয়মের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে—
জোর করে ব্যালট পেপারে সিল মারা, ভোট কেন্দ্রের ৪০০ গজ ব্যাসার্ধের ভেতরে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো এবং ভোটকেন্দ্রের ভিতরে অননুমোদিত ব্যক্তিদের উপস্থিতি। অনিয়মের কারণে পর্যবেক্ষণকৃত ১২টি ভোটকেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়, এরমধ্যে ৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ পুনরায় চালু করা হয়।  

ইডব্লিউজি পর্যবেক্ষকরা ভোটকেন্দ্রে সর্বমোট ১৫৯টি নির্বাচনী অনিয়মের ঘটনা লিপিবদ্ধ করেন। এগুলোর মধ্যে আছে ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি ৬টি। ভোটারকে ভোট কক্ষে প্রবেশের পর আঙুলে কালির ছাপ দিয়ে বলা হয়েছে আপনার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। এমন ঘটনার সংখ্যা ৩। পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি ৩টিতে, পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা ৬টি, ভোট কেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা হয়েছে ২৮টিতে। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে প্রার্থী কর্তৃক যানবাহন সরবরাহ করার ঘটনা ২৪টি। কেন্দ্রে অননুমোদিত ব্যক্তির উপস্থিতি দেখা গেছে ৩০ টিতে। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে সহিংসতা ঘটেছে ৮টিতে, ভোটকেন্দ্রের বাহিরে ৯টিতে। অবৈধভাবে ব্যালট সিল মারা হয়েছে ২১টিতে, আইন-শৃংখলা রক্ষাবাহিনী বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এমন ঘটনা ৫ টি। অন্যান্য ১৬টি অনিয়মসহ মোট ১৫৯টি অনিয়ম হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্রে বেলা ১১টার দিকে ৫ জন ভোটারকে ভোট প্রদানের সময় মেয়র প্রার্থীর ব্যালট পেপার দেওয়া হয়নি। প্রায় একই সময়ে বিএনপির পোলিং এজেন্টদেরও এ কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়। বেলা ১টার দিকে ওই একই কেন্দ্রে ইডব্লিউজির পর্যবেক্ষকরা দেখতে পান ব্যালট পেপারে অবৈধভাবে সিল মারা হচ্ছে এবং দায়িত্বরত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা একজন মেয়র প্রার্থীর সরবরাহ করা খাবার গ্রহণ করেছেন।

দুপুরের দিকে ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের একই কেন্দ্রে ইডব্লিউজি’র একজন পর্যবেক্ষকে ভোটকেন্দ্রের এক কোনায় চলে যেতে বলা হয়। পর্যবেক্ষক একটু পাশে সরে যেতেই তিনি দেখতে পান ওই কেন্দ্রের ৪টি ভোটকক্ষে উপস্থিতি সংশ্লিষ্ট ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তারা ব্যালট পেপার নিয়ে তাতে সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন।

বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ৫০ নং ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্রে ইডব্লিউজির পর্যবেক্ষক কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের ব্যালট পেপারে সিল মারার কাজে নিয়োজিত থাকতে দেখেন। বেলা ৪টার দিকে ওই একই কেন্দ্রে ইডব্লিউজির পর্যবেক্ষক আবারও অবৈধভাবে ব্যালট পেপারে সিল মারার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন।

২০ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্রে দেখা যায় বেশ কিছু সংখ্যক অননুমোদিত ব্যক্তি সারাদিন ধরে ভোটকেন্দ্রের ভিতরে ঘুরোঘুরি করছেন। বিভিন্ন সময় তাদের প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে।

ভোটগ্রহণ সমাপ্তি ও গণনা সম্পর্কে ইডব্লিউজির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বেশিরভাগ কেন্দ্র (৯৪.৮ শতাংশ) নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বিকাল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই পর্যবেক্ষিত সকল কেন্দ্রে ভোট গণনা শুরু হয়। পর্যবেক্ষকরা ১২৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮৮টি কেন্দ্রের গণনা পর্যবেক্ষণ করেন।
 
গণনার আগে সকল ব্যালট বাক্সে নিরাপত্তা সিল সঠিকভাবে লাগানো ছিল। গণনার সময় ইডব্লিউজির পর্যবেক্ষকরা দেখতে পান ভোটাগ্রহণকারী কর্মকর্তারা ফলাফল শিটে একজন মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা বাড়িয়ে লেখেন, ওই সময় গণনা কক্ষে বিএনপি প্রার্থীর কোনো এজেন্ট উপস্থিত ছিলেন না।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইডব্লিউজি’র পরিচালক ড. মো আব্দুল আলীম, সদস্য আব্দুল আওয়াল, ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, হারুনুর রশিদসহ প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৯ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৮
এমএএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।