ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

কেসিসি ভোট: ইসির নিজস্ব প্রতিবেদনে ২৯ কেন্দ্রে অনিয়ম

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৩ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০১৮
কেসিসি ভোট: ইসির নিজস্ব প্রতিবেদনে ২৯ কেন্দ্রে অনিয়ম একটি কেন্দ্রে ভাংচুরের ঘটনায় ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়

ঢাকা: সম্প্রতি অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে ২৯টি কেন্দ্রে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা হয়েছে বলে প্রতিবেদন দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিজস্ব পর্যবেক্ষকরা। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় শিথিলতার কথা। একইসঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটদের অনুপস্থিতির কথাও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বিভিন্ন সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করলেও নির্বাচন কমিশন বেশ কয়েক বছর ধরেই তাদের নিজস্ব কর্মকর্তাদেরও নিয়োগ দেয় পর্যবেক্ষক হিসেবে। সে ধারাবাহিকতায় কেসিসি নির্বাচনেও বিভিন্ন জেলা থেকে নির্বাচন কর্মকর্তাদের এনে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

নির্বাচনের কয়েকদিনের মধ্যেই তারা ইসিতে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন পাঠান।

আরো পড়ুন> খুলনায় দুই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত
 
তাদের পাঠানো প্রতিবেদনগুলো বাংলানিউজের হাতেও পৌঁছেছে। এতে কোনো কেন্দ্রে র‌্যাব, বিজিবি আর পুলিশের দায়িত্ব পালনের অবহেলার কথা উল্লেখ আছে। বলা হয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেটদের দেখা না পাওয়ার কথা। কোনো কোনো কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দৃস্কৃতিকারীদের ধস্তাধাস্তির বিষয়টিও স্থান পেয়েছে প্রতিবেদনে।
 
কেসিসি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হয় ২৮৯টি কেন্দ্রে। এরমধ্যে ২টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) দিয়ে ভোটগ্রহণ করে ইসি। এই কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অনিয়মের কারণে ৩টি কেন্দ্রের (ইকবালনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, লবণচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৩১নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় কেন্দ্র) ভোটগ্রহণ বন্ধ করে নির্বাচন কমিশন।
 
২৮৯ কেন্দ্র পর্যবেক্ষণের জন্য ১৪ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ করে ইসি। তাদের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে ওঠে আসে ২৯টি কেন্দ্রে অনিয়মের কথা। কেন্দ্রগুলোর নম্বর হলো- ৪৬, ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫৪, ৭০, ৬৯, ৭১, ৭৫, ৭৪, ৮০, ৮১, ৭৬, ৬৪, ১০১, ১৮১, ১৮৩, ১৮০, ২০২, ২২০, ২৭৬, ২৭৯, ২৮৪, ২৮৫, ২৭৭, ২৭৮ ও ২৮২।
 
চুয়াডাঙ্গা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রাজু আহমেদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-৪৬, ৪৮, ৮৯, ৫০, ৫১, ৫৪ কেন্দ্রে দুপুরে জাল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সেখানে র‌্যাব, বিজিবি’র টহল পর্যপ্ত ছিল না। নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের উপস্থিতিও তেমন ছিল না।
 
মাগুরা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহা. আব্দুল ছালেক উল্লেখ করেছেন-৭০, ৬৯, ৭১, ৭৫, ৭৪, ৮০ ও ৮১ নম্বর কেন্দ্রে বাইরের পরিবেশ সন্তোষজনক ছিল না। কিছুটা বিশৃঙ্খলা ছিল। ভোটের আগের দিন মোটরসাইকেলসহ ইঞ্জিন চালিত যানবাহনের অবাধ চলাচল দেখা গেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল তেমন লক্ষ্যণীয় ছিল না।
 
৭৬ নম্বর কেন্দ্রে এক দুস্কৃতিকারী প্রতি পদে ৪০টি করে ব্যালট পেপার নিয়ে পালানোর সময় আটক করে থানায় দেওয়া হয়।
 
মেহেরপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আহমেদ আলীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-কেন্দ্রের বাইরে হট্টগোলের কারণে ৬৪ নম্বর কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ ১০ মিনিট বন্ধ রাখা হয়েছিল।
 
নাইখ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু জাফর সালেহ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-১০১ কেন্দ্রে গোলযোগের চেষ্টা করা হয়।
 
১৮০, ১৮১ ও ১৮৩ নম্বর ও কেন্দ্রে দুস্কৃতিকারী ব্যালটে সিল মারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন মহেশখালীর নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জুলকার নাঈম। ১৮৩ নম্বর কেন্দ্রে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে কয়েকজন দুস্কৃতিকারীর ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে।
 
২২০ নম্বর কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর অতিরিক্ত পোলিং এজেন্ট উপস্থিত ছিল। যারা প্রিজাইডিং কর্মকর্তার গাড়ি ভাংচুর করে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন নড়াইলের নির্বাচন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন।
 
বাগেরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন মল্লিক তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ভোটগ্রহণের আগের রাতে ২৭৬, ২৭৮, ২৮৯, ২৮৪ ও ২৮৫ নম্বর কেন্দ্রে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষ থেকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা এবং পুলিশের জন্য খাবার সরবরাহ করা হয়। মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন মোটরযান চলাচল করতে দেখা যায়। এসব কেন্দ্রে নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট এবং মোবাইল বা স্ট্রাইকিং ফোর্সের কাউকে দেখা যায়নি।

২৭৭ ও ২৭৮ নম্বর কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হয়। আর ২৮২ নম্বর কেন্দ্রে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধে ম্যাজিস্ট্রেটকে তৎপর দেখা যায়নি। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার অবহেলার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা যেতে পারে। নির্বাচনের সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের দায়িত্বপালনে শিথিলতা দেখা যায়।
 
এদিকে গোপালগঞ্জের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ওহিদুজ্জামান মুন্সী তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, ২০২ নম্বর কেন্দ্রে দুস্কৃতিকারীরা ব্যালট পেপারে সিল মারায় ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক থাকলে এই ঘটনা এড়ানো যেতো।
 
গত ১৫ মে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সরকারি দলীয় প্রার্থী নৌকা প্রতীকে জয়লাভ করেন। যদিও বিএনপি বলেছে প্রায় শতাধিক কেন্দ্রে অনিয়ম, জাল ভোট পড়েছে। আর ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশন বলেছেন, যে নির্বাচন হয়েছে তারা সন্তুষ্ট। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা ওইদিন লিখিত বক্তব্য প্রস্তুত করেও শেষ পর্যন্ত সংবাদ সম্মেলন করেননি। গণমাধ্যমের সঙ্গে তার পক্ষে কথা বলেছেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
 
বাংলাদেশ সময়: ০২৫০ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০১৮
ইইউডি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।