ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

দু’শোর অধিক রোহিঙ্গা ভোটার এক ওয়ার্ডে: ইসিকে দুদক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৮
দু’শোর অধিক রোহিঙ্গা ভোটার এক ওয়ার্ডে: ইসিকে দুদক ফাইল ছবি

ঢাকা: মিয়ানমারের নাগরিকরা বাংলাদেশের ভোটার হয়েই থেমে নেই। লিপ্ত হচ্ছেন নানা অপকর্মের সঙ্গেও। কক্সবাজারে সরকারি খাস জমি দখল করে বানাচ্ছেন আলিশান বাড়ি। এরপর পাকাপোক্তভাবে অবস্থান নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে মিলে অন্য রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আনছে।

সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে এমন অভিযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দারা। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, একটি ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডেই দুই শতাধিকেরও বেশি রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে।

ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দুদকের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

দুদকের সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার তালিকায় মিয়ানমার থেকে আগত দুই শতাধিক লোককে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহযোগিতায় সু-কৌশলে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। মিয়ানমার থেকে আগত লোকদের আচর-আচরণ, ব্যবহার, অর্থের প্রভাব এবং দৌরাত্ম স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অভিযোগটি সুবিবেচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠিতে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদকে অনুরোধ করেছেন দুদক সচিব।

ইসি সচিবকে পাঠানো চিঠির সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারের করা অভিযোগ এবং রোহিঙ্গা ভোটারের নামের তালিকাও দিয়েছে দুদক।
রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকা

তালিকার এক নম্বর ব্যক্তি জালাল আহমদ, বাবা: আহমদ হোসেন, মা: ছৈয়দা খাতুন। বর্তমান ঠিকানা কক্সবাজার সদরের ইসলামাবাদ ইউনিয়নের আউলিয়াবাদ গ্রামে। মিয়ানমারের বিচুদংয়ে চৌদ্দ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।

তালিকার অন্যান্য ব্যক্তি জালাল আহমদের আত্মীয়। এ তালিকার কোনো ব্যক্তির বা তাদের পূর্বপুরুষের নামে খতিয়ানভূক্ত জমি বাংলাদেশে নেই।

অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বেশিভাগই সরকারি ‍খাস জমি। বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশ কিছু লোক সরকারি খাস জমিতে বসবাসের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে মিয়ানমারের অনেক লোক এখানে বসবাসের সুযোগ করে নেয়। পরবর্তীতে টাকার বিনিময়ে সু-কৌশলে এবং কিছু সংখ্যক প্রভাবশালী অসাধু লোকের সহায়তায় ভোটার হয়।

তালিকার ৭ নম্বর ব্যক্তি হাফেজ নুরুল আলম ২০১২ সালে ছেলে-মেয়ের বার্ষিক পরীক্ষার ফি দিতে পারেননি। অথচ সম্প্রতি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে খাস জমিতে বাড়ি করেছেন। এতো অল্প সময়ে সেটা কিভাবে সম্ভব?

এ তালিকা লোকেরা খাস জমিতে বিপুল অর্থ ব্যয় করে দারুস সালাম একাডেমি নামে একটি প্রতিষ্ঠানও করেছে। তাদের সবারই বাংলাদেশি পাসপোর্ট রয়েছে। তাদের পাসপোর্ট করে দিতে সহযোগিতা করেছেন ইসলামাবাদের খোদাই বাড়ির কালা মিয়ার ছেলে ছৈয়দ আলম শিমুল। ইতোমধ্যে তালিকার দুই নম্বর ব্যক্তি হাফেজ মো. ইয়াহিয়া বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সপরিবারে দেশ ত্যাগ করেছেন।

এ অবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দারা ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার তালিকা তদন্ত করে রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়টি নতুন নয়। পুরো চট্টগ্রাম বিভাগেই তারা ছড়িয়ে পড়েছেন। তাই চট্টগ্রাম এলাকায় ভোটার করার জন্য নির্বাচন কমিশন বেশ সতর্কতা অবলম্বন করছে। তারপরও স্থানীয় অসাধু ব্যক্তিদের সহায়তায় প্রতিনিয়ত দেশের ভোটার তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন মিয়ানমার থেকে ঢুকে পড়া অনু্প্রবেশকারীরা।

এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হতে না পারে, সেজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। দীর্ঘদিন ধরেই তারা স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়েই ভোটার তালিকা অন্তর্ভূক্ত হচ্ছেন। আমরা কক্সবাজার এলাকাটিকেই বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম চালাই। সেখানে তাদের অনেক ধরণের তথ্য দিতে হয়। সেগুলো পূরণ যেকোনো বিদেশিদের জন্যই ভোটার হওয়া কঠিন। কেউ সহায়তা না করলে ভোটার হওয়া সম্ভব নয়। এরপরও রোহিঙ্গাদের কেউ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হলে, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর আগেও আমরা তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়ায় অনেক রোহিঙ্গাকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৮
ইইউডি/ওএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।