ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

‘লাখো ভোটকক্ষ ফেরেশতার পক্ষে পাহারা দেওয়া সম্ভব, আমরা পারব না’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২৩
‘লাখো ভোটকক্ষ ফেরেশতার পক্ষে পাহারা দেওয়া সম্ভব, আমরা পারব না’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল

ঢাকা: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, সংসদ নির্বাচনে লাখ লাখ ভোটকক্ষ একজন মানুষের পক্ষে পাহারা দেওয়া সম্ভব না। এটা ফেরেশতারা পারে।

আমরা পারব না।

বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে তৃণমূল বিএনপির সঙ্গে আয়োজিত এক বৈঠকে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমি কিন্তু ওখানে বসে আপনাদের ঘর পাহারা দিতে পারব না। সংসদ নির্বাচনে ৪২ হাজার কেন্দ্র, তিন লাখ বুথ, একজন মানুষের পক্ষে বিভাজিত হয়ে, কোটি কোটি হয়ে পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। যেটা ফেরেস্তারা পারে কিন্তু আমরা পারব না। কাজেই আমরা সেই ঐশ্বরিক শক্তি নিয়ে নয়, মানবিক শক্তি নিয়ে যতটা সম্ভব কাজ করব। পর্যবেক্ষণ করব পরিবীক্ষণ করব।

তিনি বলেন, আপনারা আর্মির কথা বলেছেন। এর আগে যে ডায়ালগগুলো হয়েছে, প্রতিটা দলই আর্মির কথা বলেছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, সেনাবাহিনীর উপস্থিতি একান্তই কাম্য। আমাদের তরফ থেকে যতটা সম্ভব, নির্বাচনটা সুষ্ঠু হচ্ছে কি না, পোলিং (ভোটগ্রহণ) ফেয়ার (সুষ্ঠু) হতে হবে। ভোটাররা আসছে কেউ বাধা দিচ্ছে না, আপনারাও বাধা দিচ্ছেন না, অন্যরাও বাধা দিচ্ছে না। কেউ বাধা দিতে পারবে না। এই অপরাধ আমরা বন্ধ করিয়েছি।

সিইসি বলেন, আমরা কিন্তু টিভির মাধ্যমে দেখতে চাইব ভোটাররা ভেতরে ঢুকছে কিনা। ঢোকার পর কিন্তু আমরা ওদেরকে দেখতে পারব না। কারণ সেই অধিকার আপনার আমার নেই। আমরা দেখব ভোটার পিসফুলি বেরিয়ে আসছে কিনা, তখন একঝাঁক সাংবাদিক তার ইন্টারভিউ নেবে। তারা যদি ঝাঁপিয়ে পড়ে ভোটারকে বলে ভাই বা বোন আপনি কি ভোট দিতে পারছেন। এভাবে চলতে থাকলে ভোট ভালো হবে। মিডিয়া ও অবজারভার ব্যবহার করা গেলে ভোট স্বচ্ছ হবে।

তিনি আরও বলেন, ভোটার যদি বলেন ভোট বলতে ভেতরে কিছু নেই সব ডাকাত, তাহলে এটাও প্রচার করেন। দেশব্যাপী প্রচার হয়ে যাক ভোটকেন্দ্রে ভোট হচ্ছে না কেবল ডাকাতি হচ্ছে। আবার যদি সুষ্ঠু ভোট হয় সেটাও যেন প্রচারিত হয়। আমরা গণমাধ্যমের কাছে ডিজ ইনফরমেশন চাই না। আমরা চাই অবজেক্টিভ ইনফরমেশন। সকলেই আমাদের সহযোগিতা করেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, অনেকে মিডিয়ার অ্যাকসেস প্রতিহত করার চেষ্টা করবে। আমরা বলেছি, মিডিয়া ভেতরে যেতে পারবে। তাদের অ্যাকসেস লাগবে না। কেন্দ্রে গিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারকে শুধু বলবে, আমি অমুক অফিস থেকে এসেছি। তিনি ঘুরে বেড়াবেন, বুথের ভেতরে ঢুকে ছবি নিতে পারবেন। শুধু যেখানে কাস্টিং হচ্ছে সেখানে যেতে পারবেন না। কেউ যদি দেখে কোথাও পটাপট সিল মারা হচ্ছে এটাও প্রকাশ করেন। ভোট অবশ্যই নিরপেক্ষ হতে হবে। ভোটারকে বাধা দেওয়া যাবে না। ভোটারের ফ্রিডম অব চয়েজ থাকবে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, পেশিশক্তি বলে একটা শক্তি গ্রাউন্ড লেভেলে থাকে। আমাদের হাতে প্রচুর কালো টাকা আছে, এখানে হাত দিলে কালো টাকা, ওখানে হাত দিলে কালো টাকা। পুরো পকেট ভর্তি কালো টাকা। কাজেই কালো টাকা ব্যবহার করতে আমাদের পেশিশক্তি ব্যবহার করতে হচ্ছে। আমাদের কালো টাকা ব্যবহারের জায়গা নেই। কালো টাকা দিয়ে পেশিশক্তি সংগ্রহ করা হচ্ছে। পেশিশক্তিকে যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে জনগণের যে ভোটাধিকার সেটা অবশ্যই ব্যাহত হতে পারে। কিন্তু আমরা বলব, পোলিং এজেন্টেদের নিয়োগ দেবেন। কঠিনভাবে ট্রেনিং দেবেন। এজেন্ট যেন বুথ থেকে বের না হয়। সে কলা, চিড়া ও একটা পানির বোতল নিয়ে কেন্দ্রে ঢুকবে। ক্ষুধা লাগলে সেখানেই খাবে, এক বিন্দুও সেন্টার ছাড়বে না।

বৈঠকে সিইসির সঙ্গে অন্য নির্বাচন কমিশনার, ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মোবিন চৌধুরীর নেতৃত্বে দলটির ১৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২৩
ইইউডি/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।