ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

প্লাস্টিক-পলিথিনকে জ্বালানিতে রুপান্তর!

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২২
প্লাস্টিক-পলিথিনকে জ্বালানিতে রুপান্তর!

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: জ্বালানী সংকট নিরসনে প্লাস্টিক-পলিথিন থেকে তেল গ্যাস উৎপাদনের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান।

স্বল্প খরচে মাটি দিয়ে অনুঘটকের মাধ্যমে পাইরোলাইসিস পদ্ধতিতে প্লাস্টিক ও পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপন্ন করতে সফল হয়েছেন তিনি।

পরিবেশ দূষণকারী বর্জ্য প্লাস্টিককে তরল জ্বালানীতে রূপান্তরের গবেষণা প্রকল্পের অংশ হিসেবে গবেষণায় তিনি এই উদ্ভাবন করেন।

গবেষণা প্রকল্পের তত্বাবধায়ক রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান জানান, ক্যাটালিস্ট অনুঘটকের মাধ্যমে পাইরোলাইসিস পদ্ধতিতে প্লাস্টিক ও পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপন্ন হয়। প্রথমে মাটি থেকে সিলিকা অ্যালুমিনা ভেঙ্গে ক্যাটালিস্ট তৈরি করা হয়েছে। সেই ক্যাটালিস্ট দিয়ে প্লাস্টিককে ভেঙ্গে ডিজেল, পেট্রোল, কেরোসিন জাতীয় জ্বালানি তেল তৈরি করেছি। এসব জ্বালানি তেল দিয়ে ছোট, মাঝারি সহ নৌকার ইঞ্জিন চালনো সম্ভব। এছাড়াও জেনারেটরের মাধ্যমে এসব জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।

"আমাদের চারপাশে অনেক প্লাস্টিক বর্জ্য পড়ে থাকে। এসব পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং মাটির উর্বরতা নষ্ট করে। এসব প্লাস্টিক পলিধিন ধুয়ে পরিষ্কার করে জ্বালানি উৎপাদনের উপযোগী করা সম্ভব। মাটি ও প্লাস্টিক দুটো উপাদানই আমাদের হাতের কাছে পাওয়া যায়। এতে করে খুব অল্প খরচেই সরকার চাইলে জ্বালানি সঙ্কটের এই সময়ে খুব সহজেই তেল উৎপাদন করতে পারবে। "

মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, 'এই জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। কারণ জ্বালানীর বেশিরভাগ অংশই ডিজেল, পেট্রোল এবং কেরোসিন থেকে আসে। সরকারের কাছ থেকে গবেষণার জন্য বড় আকারের তহবিল পেলে, বড় আকারে উৎপাদনের জন্য একটি প্লাস্টিক রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট স্থাপন করতে পারবো। আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক-পলিথিন রয়েছে। ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদী এবং অন্যান্য নদী, খাল থেকে প্লাস্টিক সংগ্রহ করে তা ডিজেল, পেট্রোল এবং কেরোসিনে রূপান্তরিত করা যাবে। সেই সাথে পরিবেশের উপর বর্জ্যের প্রভাবও কমে যাবে। '

এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা যাবে বলে দাবি গবেষকের। বর্তমানে জ্বালানী সংকট এবং প্লাস্টিক দূষণ একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রকল্পের মাধমে দূষণ কাটিয়ে বর্জ্য প্লাস্টিককে জ্বালানিতে রূপান্তর করে এর সংকটও মোকাবেলা করা যাবে। এই জ্বালানীকে বাণিজ্যিকভাবেও উৎপাদন করা যাবে বলে জানান এই অধ্যাপক।

গবেষণা প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ল্যাবে এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে। পরবর্তীতে ফান্ড বা বাজেট পেলে বৃহৎ আকারে গবেষণা করার চেষ্টা করবো।  

'Catalytic pyrolysis of single-use waste polyethylene for the production of liquid hydrocarbon using modied bentonite catalyst' শিরোনামের গবেষণা প্রকল্পটি European Journal of Inorganic Chemistry, Wiley (EurJIC) নামের বিখ্যাত আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল একক ব্যবহারের বর্জ্য পলিথিনকে জ্বালানিতে রূপান্তর করে পরিবেশ রক্ষা করা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে এই গবেষণা প্রকল্পে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের  সহযোগী অধ্যাপক ড. নাফীস আহমেদ, ড. জয়ন্ত কুমার সাহা এবং রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সুব্রত চন্দ্র রায় সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। এছাড়াও রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আরিফুল রহমান ও জুনায়েদ মাহমুদ শুভ গবেষণায় সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২২
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।