ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

বৈরী পরিস্থিতি পেরিয়ে এসএসসির ফলে জয়জয়কার

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২১
বৈরী পরিস্থিতি পেরিয়ে এসএসসির ফলে জয়জয়কার এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের উল্লাস | ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: বছরের বেশির ভাগ সময় কেটেছে ঘরবন্দি। সাড়ে আট মাস পর পরীক্ষা, শ্রেণিকক্ষে ক্লাসও হয়েছে মাত্র দুই মাস।

বাকিটা অনলাইন ক্লাস এবং অ্যাসাইনমেন্ট। এমন সব কার্যক্রমের মধ্যেই চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় মেধার স্বাক্ষর রেখেছে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা।

গত বছরের তুলনায় ১০ ভাগ বেড়ে এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ; জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ৯টি সাধারণ এবং মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এ বছর ২৯ হাজার ৬০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মোট ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এরমধ্যে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ও কেন্দ্র, অংশগ্রহণকারী, উত্তীর্ণ, পাসের হার, শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে।

পরীক্ষার ফলাফলে ইতিবাচক সূচকগুলোর মধ্যে দেখা যায়, পাসের হার বেড়েছে ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ। জিপিএ-৫ বেড়েছে ৪৭ হাজার ৪৪২। এ বছর শূন্য ভাগ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০৪ থেকে কমে হয়েছে ১৮টি।

এসএসসি পরীক্ষা প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে শুরু হয়ে থাকলেও এবছর করোনা পরিস্থিতির কারণে সাড়ে আট মাস পিছিয়ে ১৪ নভেম্বর শুরু হয়ে শেষ হয় ৩০ নভেম্বর।

ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছরে ফলের সূচকে বেশকিছু ইতিবাচক লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এর পেছনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যেমন-বিনামূল্যে সঠিক সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেওয়া, টেলিভিশনে দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের পাঠদান প্রচার, শিক্ষার উপকরণ হিসেবে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার এবং সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা পরিচালনা।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট এবং পরীক্ষার আগে দুই মাস শ্রেণি কার্যক্রম চলমান রাখা হয়েছে। এই পরীক্ষার জন্য সিলেবাস পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে।

পাস ও জিপিএ-৫ বৃদ্ধি
এ বছর গড় পাসের হার ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। গতবার এই পাসের হার ছিল ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গতবারের চেয়ে এ বছর পাসের হার বেড়েছে ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাস করেছে ৯৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৮৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং মাদ্রাসা বোর্ডের ৯৩ দশমিক ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।

সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৯৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। এই বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৯ হাজার ৫৩০ জন শিক্ষার্থী। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৯৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৭ হাজার ৭০৯ জন শিক্ষার্থী। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৯৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ৬২৬ জন শিক্ষার্থী। যশোর শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৯৩ দশমিক ০৯ শতাংশ। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৬ হাজার ৪৬১ জন শিক্ষার্থী। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৯১ দশমিক ১২ শতাংশ। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২ হাজার ৭৯১ জন শিক্ষার্থী। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৯০ দশমিক ১৯ শতাংশ। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০ হাজার ২১৯  জন শিক্ষার্থী। সিলেট শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৯৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৮৩৪ শিক্ষার্থী। দিনাজপুর বোর্ডে পাসের হার ৯৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৭ হাজার ৫৭৮ জন শিক্ষার্থী। ময়মনসিংহ শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৯৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০ হাজার ৯২ জন শিক্ষার্থী।


এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের উল্লাস | ছবি: ডিএইচ বাদল

এ বছর মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন  শিক্ষার্থী। যার মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড অর্থাৎ স্কুলগুলোতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৪০ জন শিক্ষার্থী। এছাড়া মাদ্রাসা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ৩১৩ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ১৮৭ জন।

সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফল
এ বছর কেবল ৩টি নৈর্বচনিক বিষয়ে পরীক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছে। অবশিষ্ট বিষয়সমূহের নম্বর জেএসসি/জেডিসি থেকে সাবজেক্ট ম্যাপিং এর মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে। চতুর্থ বিষয়ের ক্ষেত্রে, যে ৩টি নৈর্বাচনিক বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে সে বিষয়গুলো ব্যতীত চতুর্থ বিষয়ের সাথে সামজস্যপূর্ণ জেএসসি/জেডিসি পর্যায়ের আবশ্যিক বিষয় হতে সাবজেক্ট ম্যাপিং এর মাধ্যমে নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। উদাহরণ: চতুর্থ বিষয় উচ্চতর গণিতের ক্ষেত্রে জেএসসি/জেডিসির গণিত বিষয়ের প্রাপ্ত নম্বর এবং চতুর্থ বিষয় জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে জেএসসি/জেডিসির বিজ্ঞানের প্রাপ্ত নম্বর সাবজেক্ট ম্যাপিং এর মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে।

শূন্য পাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কমেছে
এ বছর শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের জন্য এক অর্থে খুবই স্বস্তিকর যে ১০৪ থেকে এই সংখ্যাটি ১৮-তে নেমে এসেছে। আমরা অনেক দিন থেকে এ বিষয়টায় নজর দিচ্ছি যে এমন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন থাকবে যে যেখানে একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারবে না।

তিনি বলেন, অনেক জায়গায় অর্থনৈতিক নানা কারণ থাকে, হয়তো প্রতিষ্ঠানের অবস্থা একেবারেই ভালো নয় বা অন্য কিছু। যে কারণই থাকুক আমরা কারণগুলো খুঁজে বের করে সেগুলো দূর করবার চেষ্টা করবো।

পাসের হার বেড়েছে যে কারণে
এ বছর পরীক্ষার্থীর সাথে সাথে বেড়েছে পাসের হার ও জিপিএ-৫। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পাসের হার যে বেড়েছে সেটার কারণ হতে পারে, এবার পরীক্ষায় তিনটি বিষয়ে নিয়েছি, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নিয়েছি, প্রশ্নপত্রের বিকল্প অনেক বেশি ছিল। এই সব কারণে আমাদের পরীক্ষার্থীরা অনেক বেশি ভালো করেছে অন্য সময়ের চেয়ে।

কোভিড পরিস্থিতির কারণে পরীক্ষার্থীদের উত্তর প্রদানের ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্রে অধিক বিকল্প প্রশ্ন রাখা, পরীক্ষা কেন্দ্রে অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীদের ভিড় এড়াতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার বিষয়সমূহের পরীক্ষা ভিন্ন ভিন্ন তারিখ ও সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গৃহীত পরীক্ষাসমূহের প্রশ্নপত্রে নম্বর ও সময় সংক্ষিপ্ত করা হয়।

পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন ৬ জানুয়ারি মধ্যে
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড জানায়, পুনঃনিরীক্ষণের জন্য এসএমএসের মাধ্যমে ৩১ ডিসেম্বর থেকে ৬ জানুয়ারি আবেদন গ্রহণ করা হবে। আবেদন পদ্ধতি শিক্ষাবোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং টেলিটকের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানা যাবে।

পেপারলেস ফল
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, কোভিড-১৯ এর কারণে ফল প্রকাশের দিনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে থেকে সরাসরি মোবাইল ফোনে ফল প্রাপ্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফল প্রকাশের দিনে কোনো ধরনের সমাবেশ বা উৎসব না করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী জানান, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। গতবারের মতো এবারও সম্পূর্ণ পেপারলেস ফল প্রকাশিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২১
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।