ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

শিক্ষার্থী ও সরকারকে ২ রকম তথ্য দিচ্ছে মোনাশ কলেজ!

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০২১
শিক্ষার্থী ও সরকারকে ২ রকম তথ্য দিচ্ছে মোনাশ কলেজ! শিক্ষার্থী ও সরকারকে ২ রকম তথ্য দিচ্ছে মোনাশ কলেজ!

ঢাকা: মোনাশ কলেজে ফাউন্ডেশন কোর্সের মাধ্যমে ভর্তির যোগ্যতা অর্জনের কথা থাকলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। শিক্ষার্থীদের বলা হচ্ছে, মোনাশের স্টাডি সেন্টারে ভর্তি মানেই মোনাশ কলেজে ভর্তি।

সেভাবেই আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন হচ্ছে। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, স্টাডি সেন্টারে যুক্ত হওয়ার পর ফাউন্ডেশন কোর্সে উত্তীর্ণ না হলে মোনাশে ভর্তি বলে বিবেচিত হবে না। অর্থাৎ শিক্ষার্থী ও সরকার দুই পক্ষের কাছে দুই রকম তথ্য দিচ্ছে মোনাশ কলেজ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফাউন্ডেশন কোর্সের নামে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স পড়াচ্ছে মোনাশ কলেজ।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, স্টাডি সেন্টারে ফাউন্ডেশন কোর্স করে শতভাগ নিশ্চয়তার সঙ্গে মোনাশ কলেজে ভর্তি হতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় পড়ানো হচ্ছে না।

কিন্তু মন্ত্রীর এ বক্তব্যের বিপরীতে জানা গেছে, এক বছরের ফাউন্ডেশন কোর্স করানোর পর মোনাশ কলেজ বা মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। অর্থাৎ ফাউন্ডেশন কোর্সে ভর্তির বিষয়টি মর্যাদা পাচ্ছে প্রথম বর্ষের।

জানা গেছে, মোনাশ কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তিন সেমিস্টারের ফাউন্ডেশন কোর্স বাবদ ব্যাচেলর প্রথম বর্ষের প্রকৌশল কিংবা তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ের জন্য ৭ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার করে নিচ্ছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।

মোনাশ কর্তৃপক্ষ স্টাডি সেন্টারের শিক্ষার্থীদের জানিয়েছে, এখানে নিবন্ধন করলে তা একইসঙ্গে মোনাশেও নিবন্ধিত হয়ে যায়। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীরা আইডি কার্ড পাবে, এর মাধ্যমে তারা মোনাশের পোর্টালে লগ-ইন করতে পারবে। সব কার্যক্রম সেখানেই হবে। এতে করে দেখা যায়, তথাকথিত ‘স্টাডি সেন্টার’ ও এর ‘ফাউন্ডেশন কোর্স’ প্রকারান্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে পড়ার মতো করেই চলছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি একটি অনলাইন পোর্টালকে বলেন, মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয় এখনও দেশে আসেনি। এখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি হিসেবে প্রথমে একটি ফাউন্ডেশন কোর্স করাচ্ছে স্টাডি সেন্টার। এতে পাস করলে শিক্ষার্থীরা শতভাগ নিশ্চয়তা নিয়ে মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে। প্রথম বছর হবে ফাউন্ডেশন কোর্স, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ডিপ্লোমার মতো। তখন ছাত্র-ছাত্রীরা একবারেই মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে ঢুকে যেতে পারবে।

মন্ত্রী উল্লেখ করেন, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে অন্যান্য পরিবেশ যাচাই করে মোনাশ কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়টি যদি দেখে সবকিছু উপযুক্ত, তখন তারা পুরোদমে শাখা ক্যাম্পাস করার কথা ভাববে।

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. চৌধুরী মোফিজুর রহমান বলেন, স্টাডি সেন্টারের কনসেপ্ট অনুযায়ী এক বছরের ফাউন্ডেশন কোর্সের পর দ্বিতীয় বর্ষে কীভাবে ভর্তি হয়? সেক্ষেত্রে তো প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার কথা। এভাবে স্টাডি সেন্টারের নামে ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া ঠিক হচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপাচার্য বলেন, দেশে স্টাডি সেন্টারের নামে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, যা আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। স্টাডি সেন্টারের নামে এখানকার বাজার যাচাই ও সেই অনুযায়ী তৈরি হওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে তাদের। অথচ দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে প্রথম দিন থেকেই শত কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকার শর্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়।

মোনাশের স্টাডি সেন্টারে ফাউন্ডেশন কোর্স পরিচালনার নামে শিক্ষা কার্যক্রম চালালেও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন নেওয়া হয়নি। ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মোনাশ এখনও আবেদনই করেনি।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এখন যেহেতু ফাউন্ডেশন কোর্স, এতে ইউজিসির অনুমোদনের কোনও কিছু নেই। ক্রেডিট ট্রান্সফারেরও বিষয় নেই। কারণ এখানে ইউনিভার্সিটির বিষয় পড়ানো হচ্ছে না। এটা তো ইউনিভার্সিটি না।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্য প্রশ্ন তুলেছেন, তারা এখন যা পড়াচ্ছে তা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ না হবে তাহলে এখান থেকে গিয়ে শিক্ষার্থী সরাসরি দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হয় কী করে?

শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতা চায় না। তবে এটা মানতে রাজি নন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন, আমরা প্রতিযোগিতা চাই। অক্সফোর্ড বা মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় যদি এখানে পূর্ণাঙ্গভাবে আসে আইন অনুযায়ী সেটা বৈধ হবে। কিন্তু তাই বলে সো-কল্ড স্টাডি সেন্টারের নামে কোচিং সেন্টারের অনুমোদন দিয়ে তাদের আনা হবে, এটা উচিত নয়। কোনও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় আনার ক্ষেত্রে আমরা কোনও আপত্তি করিনি। আমরা স্বাগত জানাই। আইনেই বলা আছে, পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় আসতে পারে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অলাভজনক, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ও অলাভজনক হবে। সো-কল্ড কোচিং সেন্টার বন্ধ করে পূর্ণাঙ্গ কোনও বিশ্ববিদ্যালয় এলে আমরা অবশ্যই স্বাগত জানাবো।

বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার স্থাপনের জন্য প্রয়োজনে ২০১৪ সালের বিধিমালাটি সংশোধন করা হবে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।

২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে শাখা ক্যাম্পাস স্থাপনের কথা বলা থাকলেও বিধিমালায় আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিকভাবে স্টাডি সেন্টার স্থাপন করার কথা বলা আছে। এ কারণে বিধিমালার কার্যক্রম বন্ধ রাখে মন্ত্রণালয়। দীর্ঘদিন সেজন্য স্টাডি সেন্টারের অনুমোদন দেয়নি সরকার।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০২১
জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।