ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

৫ দফা দাবিতে খুবির প্রশাসনিক ভবনে তালা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০২০
৫ দফা দাবিতে খুবির প্রশাসনিক ভবনে তালা খুবির প্রশাসনিক ভবনে ঝুলছে তালা। ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: বেতন-ফি প্রত্যাহারসহ পাঁচ দফা দাবিতে শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ প্রশাসনিক ভবনের ফটকগুলোতে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীরা। এতে উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সব ফটকগুলোতে তালা লাগিয়ে দেন এবং প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন।

এর আগে সকালে ক্যাম্পাসে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা।

শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রয়োজনে এই মুহূর্তে মিটিং বসিয়ে তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের লিখিত আশ্বাস দেওয়া হোক। দাবি না মানা পর্যন্ত এ অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে যাবেন তারা।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো- আবসন সংকটের দূরকরণ, বেতন ফিসের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বেতন কমানো, দ্বিতীয় পরীক্ষণের ব্যবস্থা ও কোডিং পদ্ধতির ব্যবস্থাকরণ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি অধ্যাদেশের সংস্কার তথা সাংস্কৃতিক অবরুদ্ধতা থেকে মুক্তি ও মুক্তচিন্তা বিকাশে অধ্যাদেশের ব্যবস্থাকরণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত যেসব দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেছে তার প্রতিকার করা।

শিক্ষার্থীরা জানান, গত কয়েক বছরে বেতন ফি অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। তারা নতুন টার্ম রেজিস্ট্রেশনের আগেই বেতন-ফি সহনীয় মাত্রায় কমানোর দাবি জানান।

এ সময় রেজিস্ট্রেশন ফি কমিয়ে সহনীয় মাত্রায় আনা না হলে তারা রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবেন না বলেও জানান।

এদিকে বুধবার (১ জানুয়ারি) শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবিসহ সামগ্রিক বিষয় খতিয়ে দেখে সুপারিশ প্রদানে ডিনদের সমন্বয়ে নয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটিকে জরুরিভিত্তিতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সন্ধ্যায় তদন্ত কমিটির সদস্যরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা উপাচার্যের লিখিত বক্তব্য না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

জানা যায়, গত ১৩ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা ছাত্র-বিষয়ক পরিচালকের মাধ্যমে উপাচার্য কাছে একটি স্মারকলিপি দেন। এরপর ২১ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেয়। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া না পাওয়ায় বুধবার সকাল ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদি চত্বরে সমবেত এ বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে দুপুর ১২টায় তারা শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটক অবরুদ্ধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

দুপুর ১টায় প্রেসব্রিফিং করে এবং দুপুর ২টায় তাদের দাবি না বাস্তবায়ন হওয়া পর্যন্ত ওই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। বিকেলে শিক্ষার্থীরা চোখে কালো কাপড় বেঁধে ‘পরিণতি’ নামে প্রতীকী পথনাটক করেন। এরপর সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে। রাত ৮টায় তারা ঢোল-তবলা নিয়ে বিদ্রোহের গান গেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করে। রাত ১২টায় তারা কলা-রুটি খেয়ে কনকনে শীত উপেক্ষা করে রাতে জেগে এ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে আবার দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মসূচি শুরু করেন তারা। যা দিনভর অব্যাহত থাকে। বিক্ষোভখুবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলানিউজকে বলেন, সাত হাজার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫০ জন শিক্ষার্থী আন্দোলন করছেন। চার-পাঁচজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে উসকানি দিচ্ছে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে চাচ্ছে। এসব শিক্ষকরা দিনরাত তাদের সঙ্গে থাকছেন। আমরা যেকোনো ন্যায্যদাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকবো। কিন্তু বছরের প্রথম দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করতে চাওয়া মেনে নেওয়া হবে। এ আন্দোলনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়কে অচল করতে চায় এক ধরনের অপশক্তি। আমরা এ ধরনের অপশক্তিকে প্রতিহত করবো। শিক্ষার্থীদের বলব তোমরা ক্লাসে আসো।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা নিজেরাও জানে তারা কি চায়। তাদের দাবিগুলো ১০ বছরেও বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এ আন্দোলনের পেছনে ৫জন শিক্ষক রয়েছেন। তারাই শিক্ষার্থীদের পরিচালনা করছেন। শান্তিপূর্ণ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরের প্রথম দিন যখন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের পদাচারণায় ক্যাম্পাস মুখরিত এবং ক্লাস শুরু তখন কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থীর এই আন্দোলন এবং কতিপয় শিক্ষকের নেপথ্য ইন্ধন বিশ্ববিদ্যালয়কে সুপরিকল্পিতভাবে অশান্ত করার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। এছাড়া ইতোমধ্যে অন্য সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-ফি তালিকা সংগ্রহের কাজ চলছে। যদি অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি অস্বাভাবিক বেশি হয়ে থাকে তা কমানো হবে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য গঠিত কমিটি যেসব সুপারিশ করবে তা দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করা হবে। শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত দাবিগুলো বিবেচনায় নিয়েই কর্তৃপক্ষ একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। তাই এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার মনোভাব পোষণ করা কাম্য। কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টায় অতর্কিতে শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ প্রশাসন ভবনে তালা লাগিয়ে দিয়ে সুষ্ঠু প্রশাসনিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করে।

এর ফলে উপাচার্য, সম্মানিত রেজিস্ট্রারসহ শতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারি অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। কর্তৃপক্ষ মনে করেন অন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট সচেতন ও বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন। তারা তাদের দাবির যৌক্তিকতা বিষয়ে নিশ্চয়ই পর্যলোচনা করবেন এবং তারা অন্যের পাতা ফাঁদে পা দেবেন না বলে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চলমান রাখা, সুনাম ও ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ডিনদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে সহযোগিতা করে উত্থাপিত দাবির ব্যাপারে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সমাধানে আসা সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সবসময়ই যৌক্তিক দাবির বিষয়ে সহানুভূতিশীল। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত বিধিবিধান ও এতদিনের প্রথা ইচ্ছে করলেই রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়। এজন্য সময় প্রয়োজন। একইসঙ্গে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র ভাবমূর্তি ও এতদাঞ্চলের মানুষের লালিত স্বপ্ন যেনো কোনোভাবে ক্ষুণ্ন না হয় সেদিকেও শিক্ষার্থীদের দায়বদ্ধতা রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ মনে করেন। সার্বিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অবস্থান থেকে সরে আসার এবং কর্তৃপক্ষ গঠিত কমিটিকে সহযোগিতা করে যৌক্তিক দাবি পূরণের পথ সুগম করার আহ্বান জানাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০২০
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।