ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

নতুন বইয়ের পাতায় রঙিন স্বপ্নের বুনন

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০২০
নতুন বইয়ের পাতায় রঙিন স্বপ্নের বুনন

রাজশাহী: রাজশাহীর পবা উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় শোনা গেলো ভিন্ন ধরনের তাল ও ছন্দ দিয়ে উচ্চস্বরে বই পড়ছে একদল শিশু। কাছে গিয়ে দেখা যায়, বিকেলের মিষ্টি রোদের আশায় বাড়ির উঠানেই নতুন বই নিয়ে পড়তে বসেছে শিশুরা। চকচকে রঙিন বই নিয়ে তাদের চোখেমুখে যেন আগ্রহের শেষ নেই। অজানাকে জানার জন্য যেন আবার নতুন করে যুদ্ধ নামতে চায় তারা।

সবার হাতেই নতুন বই। কেউ ইংরেজি, কেউ বাংলা বই নিয়ে বসেছে।

আবার কেউ বসেছে অংক বই নিয়ে। একজন বই পড়ছে, আরেকজন আবার বইয়ের পাতা উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে দেখছে ছবি। তাদের সমস্ত মনযোগ নতুন বই ঘিরে। যেন একদিনেই পুরো বই পড়ে ফেলার ইচ্ছা!

তাদের সবার মধ্যে ছোট্ট হচ্ছে সাথী। আজ সকালেই নতুন বই পেয়েছে। তাই বিকেলেই বাংলা বই নিয়ে বসে গেছে অন্যদের সঙ্গে। খুব মনোযোগ নিয়ে গল্প পড়ছিল সে। সাথী স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণির ছাত্রী।

আজ বছরের প্রথম দিনেই স্কুলে গিয়ে নতুন বই হাতে পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত সে। তার পাশে বসা একই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আলো। নতুন বই পেয়ে কেমন লাগছে জিজ্ঞেস করতেই আলো বলে উঠলো, বইয়ের পাতায় নতুন স্বপ্ন দেখছে সে। পুরনো বই শেষ করে নতুন বই পড়ার মজাই তার কাছে আলাদা। তার মন চাইছে আজই যেন পুরোপুরি শেষ করে ফেলি।

নতুন বই পড়ছে শিশুরা।  ছবি: বাংলানিউজ

কিন্তু তা কী আর পারা যায়? তাই বইয়ের প্রথম পাতা থেকে শেষ পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে আলো। বইয়ের পাতায় থাকা নানা রকমের ছবি তাকে টানছে। তাই আজ যে ছবি তার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগবে সেই ছবির গল্পটি আগে পড়তে চায় আলো। মুখস্থ করতে চায় নতুন বইয়ের ছোট্ট এক একটা কবিতা।

তাদের সঙ্গেই থাকা ঝর্ণা নামের আরেক শিশু বলে, আজ নতুন বই পেয়ে কেবল সবকিছু উল্টেপাল্টে দেখছে সে। আগামীকাল সকালে মলাট বাঁধার পরই তা পড়তে শুরু করবে। কারণ নতুন বই পড়তে গেলে কোথাও দাগ লেগে যাবে বা ছিড়ে নষ্ট হয়েও যেতে পারে।

গোল হয়ে বই পড়তে ব্যস্ত শিশুরা।  ছবি: বাংলানিউজ

এদিকে, শিশুদের হাতে নতুন বই দেখে আনন্দিত তাদের অভিভাবকেরা। সন্তানদের মতোই নতুন বইয়ের আনন্দ তাদের ছুঁয়ে গেছে।

সাথীর মা সোহেলী বেগম জানান, মেয়েকে নতুন বই নিয়ে পড়ার আগ্রহ দেখে খুব ভালো লাগছে তার। তিনি যখন ছোট ছিলেন তখন বছর বছর প্রথম দিনেই এমন নতুন বই পেতেন না। নানা কারণেই পুরনো বই পড়তে হতো তাকে। তাই নিজের মেয়ের হাতে বছরের প্রথম দিনই নতুন বই দেখে তার আনন্দে তার বুকটা ভরে যায়। এই আগ্রহ সারাবছর থাকবে; এমনটাই তার প্রত্যাশা।

সথীদের বাড়ির ঠিক পাশেই রয়েছে আরেকটি বাড়ি। সেখান থেকেও বিকেলে ভেসে আসছিল সুর করে ছোট শিশুদের ছড়া পড়ার শব্দ। ওই বাড়ির ভেতরে যেতেই দেখা গেলো একজন মা এক শিশুকে পড়াচ্ছেন। শিশুটির নাম সোনিয়া। সে স্থানীয় একটি মাদরাসায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

তারা ব্যস্ত বই থেকে চমকপ্রদ ছবি খুঁজে বের করার কাজে।  ছবি: বাংলানিউজ

নতুন বই পেয়েই মায়ের কাছে আজ আবদার করেছে তাকে পড়াতে হবে। মেয়ের আবদার রাখতেই মা আফরোজা ইসলাম তাকে পড়াচ্ছেন। মেয়ের পড়ার আগ্রহ দেখে তিনও খুবই আনন্দিত। আফরোজা নামের এই অভিভাবক বলেন,‘বছরের শুরুতেই নতুন বই পেলে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এটা বর্তমান সরকারের অনেক ভালো উদ্যোগ। প্রতিবছর এভাবে প্রথম দিনে নতুন বই দিলে শিশুরা পড়ার প্রতি আরও উৎসাহি হয়ে উঠবে। ’

তবে কেবল এই শিশুরাই নয়, রাজশাহীর শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের ঘরে-ঘরে এখন চলছে বই পড়ার উৎসব। পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত থাকা সব বই পেয়েই আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। কেউ বই হাতে নিচ্ছে, কেউ পৃষ্ঠা উল্টিয়ে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিচ্ছে। শীতের পিঠাপুলির মধ্যে নতুন বইয়ের আনন্দ যেন ভিন্ন এক আবহ তৈরি করেছে ঘরে ঘরে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২০
এসএস/এইচএডি/ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।