ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেহাল দশায় হাওরে শিক্ষার হার কম

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৯
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেহাল দশায় হাওরে শিক্ষার হার কম

ঢাকা: বাংলাদেশের বিশাল এলাকাজুড়ে স্বতন্ত্র সংগ্রামী জীবনযাপনের জনপদের নাম হাওর। এদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জলাভূমিবেষ্টিত এলাকা। বর্ষাকালে পার্শ্ববর্তী নদী ও খালের পানি মিলে বিস্তীর্ণ আকার ধারণ করে। আবার শীতকালে শুকিয়ে পরিণত হয় সবুজ জমির এক বিশাল অঙ্গনে। অনেক সুবিধাবঞ্চিত হাওরাঞ্চল পিছিয়ে রয়েছে শিক্ষার হারেও। 

বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষার হার ৭১ শতাংশ। তবে হাওরাঞ্চলে এই হার গিয়ে ঠেকেছে ২০-৪০ শতাংশে।

আর এ হার এত কম হওয়ার পেছনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেহালদশাকে দায়ী করা হচ্ছে। বর্ষকালে ছেলে-মেয়েরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না। তাই শিক্ষার হার বাড়ানোর জন্য হাওরজুড়ে পাঁচতলা বিশিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে সরকার। তবে পানির স্বাভাবিক চলাচলের জন্য নিচতলা ফাঁকা থাকবে বলে জানায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।
 
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ, আটপাড়া, মদন ও খালিয়াজুড়ি উপজেলা এবং সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, দিরাই, ধর্মপাশা, জগন্নাথপুর, শাল্লা, জামালগঞ্জ ও তাহিরপুর উপজেলা নিয়ে হাওর। হাওর এলাকার আয়তন চার লাখ ৬৩ হাজার ১২৮ হেক্টর। হাওরাঞ্চলের সর্বনিম্ন শিক্ষার হার শাল্লায় মাত্র ২০ দশমিক ১০ শতাংশ। অন্যদিকে সর্বোচ্চ শিক্ষার হার ধর্মপাশায় ৪০ দশমিক ৩০ শতাংশ। অন্য জেলায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যেই শিক্ষার হার সীমাবদ্ধ।
 
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ডিজাইন) শাহ্ নইমুল কাদের বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কারণে হাওর এলাকায় শিক্ষার হার কম। বর্ষার সময় ছেলে-মেয়েরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না। তাই ১২টি হাওর এলাকায় এমনভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবো যেন শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাঁচতলাবিশিষ্ট হবে এবং নিচতলা থাকবে ফাঁকা। যাতে বর্ষার মৌসুমেও শিক্ষা কার্যক্রম সচল থাকে। আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নকশাও করে ফেলেছি। প্রকল্পের আওতায় সব কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।
 
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকার শিক্ষার মান বাড়ানোর লক্ষ্যে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রধিকার দিয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সব সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করছে সরকার। তবে এত সমস্যা সমাধানের পরও শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট রয়ে গেছে। বিশ্বের অন্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বিশেষ করে দেশের হাওর অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমানের চেয়ে খুবই নাজুক।  

এরই ধারাবাহিকতায় ‘হাওর এলাকার নির্বাচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের পর প্রকল্পটি চলতি বছরের জুলাই থেকে জুন ২০২২ সালে বাস্তবায়ন করবে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।
 
নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ জেলার হাওর অঞ্চলের প্রায় ১২টি উপজেলায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। সার্বিক দিক বিবেচনায় হাওর এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভৌত অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়াতে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। গত দুই দশকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের
মাধ্যমে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। এজন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উন্নয়ন করা অত্যন্ত জরুরি।  

মূলত হাওর এলাকায় শিক্ষার মান উন্নয়নই প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য। প্রকল্পের আওতায় ৪০টি ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হবে। পাঁচতলা ভবনের প্রতিটা ছাত্রবাসের আসন সংখ্যা হবে ১০০টি। ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ১২টি ছাত্রীনিবাসও নির্মাণ করা হবে। বালক ও বালিকাদের জন্য চারটি ছয়তলা বিশিষ্ট মাল্টিপারপাস ভবন, ২৭টি পাঁচতলা বিশিষ্ট মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণ ও ৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫২টি হোস্টেল নির্মিত হবে। ৫২টি হোস্টেলে ৩০ হাজার আসবাবপত্র থাকবে হাওরে শিক্ষার উন্নয়নে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৯
এমআইএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।