ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

হাত হারিয়ে পা দিয়েই পিইসি পরীক্ষা দিচ্ছে মুক্তামনি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৯
হাত হারিয়ে পা দিয়েই পিইসি পরীক্ষা দিচ্ছে মুক্তামনি

বরিশাল: দুটি হাত না থাকার পরও অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর চেষ্টায় পা দিয়ে লিখেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা দিচ্ছে ১২ বছরের মুক্তামনি। শুধু পরিবার নয়, শিক্ষকরাও মুক্তাকে নিয়ে বিজয়ের স্বপ্ন দেখছেন।

বরিশালের হিজলা উপজেলার পূর্ব পত্তণীভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী মুক্তামনি।

এ ছাত্রী প্রসঙ্গে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোসাম্মৎ নাছিমা খানম বাংলানিউজকে বলেন, না দেখলে বিশ্বাস হবে না যে, মুক্তামনির পড়াশোনা করার ইচ্ছা কতোটা প্রবল।

আমাদের স্কুল থেকে এবারে ১৪ জন শিক্ষার্থী পিইসি পরীক্ষা দিচ্ছে। এদের মধ্যে মুক্তার দুটি হাত না থাকায় পা দিয়েই লিখছে সে। ওর সেই লেখাও অন্যদের হাতের লেখা চেয়ে অনেক সুন্দর।

মুক্তার স্বজনরা জানান, শুরুতে সে গ্রামেই থাকতো। মা ঝুমুর বেগমের গার্মেন্টসে চাকরির সূত্রে ২ বছর আগে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন ঢাকার সাভারে যায় সে। সেখানেই একদিন পাখি ধরতে গিয়ে দুই হাত দিয়ে বৈদুতিক তার চেপে ধরে মুক্তা। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে তার দুই হাত বিকল হয়ে যেতে শুরু করে। চিকিৎসার প্রয়োজনে প্রথমে কনুই থেকে দুটি হাত কেটে ফেলা হলেও ক্ষত ঠিক না হওয়ায় এক পর্যায়ে পুরোপুরি দুতো হাতই শরীর থেকে বাদ দিতে হয়।

এরপর পত্তনীভাঙ্গ গ্রামে দাদী জাহানারা বেগমের কাছে থেকে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলে পুনরায় পড়াশোনা করতে চায় মুক্তা। তার ইচ্ছেতেই ২০১৮ সালে বাবা সেন্টু মিয়া ও মা ঝুমুর পূর্ব পত্তণীভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি করেন মুক্তামনিকে।  

নতুন স্কুলজীবনের শুরু থেকেই ডান পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে কলম দিয়ে লেখার অভ্যাস করতে থাকে মুক্তা। আর এখন হাতে লেখা যে কারো মতো স্বাভাবিক গতিতেই পা দিয়ে অনায়াসে লিখে যেতে পারে সে।  

মুক্তার চিকিৎসা ও সেসহ আরও এক বোনের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছে তার হতদরিদ্র পরিবার। তবুও মেয়েদের উচ্চশিক্ষিত করতে চান মা। মুক্তামনির স্বপ্ন একদিন সে শিক্ষক হবে।

মুক্তার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জানান, মুক্তামনি এতোটাই ভালো ছাত্রী যে, সে কখনো বিনা কারণে স্কুলে অনুপস্থিত থাকেনি। সে নিজের যে কোনো সমস্যা খাদিজা বেগম নামে এক শিক্ষিকার সঙ্গে আলোচনা করে নেয়। আমরা চাই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলা মুক্তার মাথায় বিজয়ের মুকুট উঠুক। ও শ্রেষ্ঠ ফলাফল অর্জন করুক। হাত হারিয়েও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া মুক্তামনির মুখে যদি হাসি ফোটে, তাহলেই সবার চেষ্টা স্বার্থক হবে।  

মুক্তা পিইসি দিচ্ছে পত্তণীভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। সেখানকার প্রধান শিক্ষক সাহিদা ইয়াসমিন বাংলানিউজকে বলেন, যে কয়টা পরীক্ষা গেছে, সবকয়টা পরীক্ষাতেই মুক্তামনি অংশ নিয়েছে। ও খুব মনোযোগের সঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৯
এমএস/এইচজে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।